অমানবিক নির্যাতন স্কুল ছাত্রকে
মজুরির টাকা দেন, নইলে না খেয়ে থাকতে হবে


অাসন্ন ঈদে নিজের পরিশ্রমের টাকায় পোষাক কিনবে বলে সেমাই তৈরীর কারখানায় কাজ নিয়েছিল স্কুলছাত্র সজীব (১৩)। শরীর খারাপের কারণে মাত্র একদিন কাজ করবে না বলে মজুরির টাকা চাইতেই ক্ষিপ্ত হয়ে মালিকের লোকজনের অমানবিক নির্যাতনে সজীব এখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
সেমাই কারখানায় শ্রমিকের কাজ না করায় স্কুলছাত্রের মাথায় লোহার রড দিয়ে থেতলিয়ে দিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীর লোকজন। অচেতন অবস্থায় সজীবকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা আশংকাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এনিয়ে এলাকায় সাধারণ জনতার মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার (০৩ জুন) দুপুরে বগুড়ার কাহালু উপজেলার শেখাহার বাজারে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বীরকেদার ইউনিয়নের ডেপুইল গ্রামের অটোভ্যান চালক ফেরদৌস আলীর ছেলে সজীব (১৩) স্থানীয় শেখাহার উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়াশুনা করে। সংসারে অভাবে কারণে স্কুলছাত্র সজীব লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন হোটেল ও বৃত্তবানদের বাড়িতে শ্রমিকের কাজ করে।
কিছুদিন ধরে সজীব কাজ নেয় শেখাহার বাজারে সাজ্জাদ হোসেনের ভাই ভাই লাচ্চা সেমাইয়ের কারখানায়। মালিকের ভাই রবিউল ইসলাম সেখানকার ম্যানেজার। সজীবের শরীর খারাপ ছিল, তাই কাজে আসেনি। কাজে আসতে পারবে না বলতে রবিবার দুপুরে কারখায় গিয়েছিল। সজীব ম্যানেজারকে বলছিল, ‘ভাই আমার শরীর খারাপ। আজ কাজ করতে পারব না।
গত দুইদিনের মজুরির টাকা দেন, নইলে না খেয়ে থাকতে হবে’ বলতেই ম্যানেজার রবিউল বলে ওঠে, কে কোথায় আছিস, সালাকে ধর, পিটিয়ে ঠিক কর। বলতেই কারখানায় থাকা রুহানী রনি, মাসুদ ও ওয়ারিশ সহ ম্যানেজারের লোকজন সজীবকে আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন শুরু করে। মাথায় লোহার রড দিয়ে সজোরে আঘাত করে স্কুলছাত্রের মাথা থেতলিয়ে দেয়। ঘটনাস্থলেই সজীব অচেতন অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
স্থানীয়রা জানান, খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন সেমাই কারখানায় ছুটে এসে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে কাহালু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থা অবনতি ঘটলে চিকিৎসকরা বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সারাদিন ছুটাছুটির পর সজীবকে নেয়া হয় শহরের কানছগাড়ীর ময়েজ মিয়ার বাগানবাড়ী এলাকার তেসলা নিউরোসাইন্স হসপিটালে।
সেখানকার চিকিৎসক নিউরো সার্জন ডা. ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সজীবের অবস্থা আশংকাজনক। সে এখনো অচেতন। মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছে, অস্ত্রপাচার জরুরি। এখুনি কিছু বলা যাচ্ছে না।
এদিকে রাত ১২টার দিকে স্কুলছাত্র সজীবের মা সাবিনা বেগম বলেন, আমার ছেলেকে ওরা মেরে ফেলতে চেয়েছিল। আমি এর বিচার চাই। আমার স্বামী সামান্য অটোভ্যান চালক। ছেলের মাথার অপারেশনে লাগবে দেড়লাখ টাকা। এই টাকা কোথায় পাব, আমরা গরীব মানুষ।
সজীবের নতুন পোষাক কেনা হলো না বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা সাবিনা বেগম। এমন অমানবিক নির্যাতনের কথা শুনে হাসপাতালে উপস্থিত অনেকের চোখেই অশ্রু দেখা গেছে।
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত ম্যানেজার রবিউল উধাও হলেও কারখানার মালিক সাজ্জাদ হোসেন মুঠোফোনে বললেন উল্টো কথা। তিনি বলেন, আমার তিনটি সেমাই কারখানা রয়েছে। সজীব নামের কোনো স্কুলছাত্র আমার কারখানায় শ্রমিকের কাজ করে না। আমি কন্ট্রাকে কাজ করি। যাদের কন্ট্রাক দিয়েছি তারা হয়তো এই ছেলেকে কাজে নিয়েছে। কারখানায় মারধরের বিষয়ে আমার জানা নেই।
এপ্রসঙ্গে কাহালু থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মো. শওকত কবির বলেন, ঘটনাটি মৌখিকভাবে শুনেছি। এখন পর্যন্ত থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।