মাদ্রাসার শিক্ষকের দ্বারা ছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা

এস এম রহমান লাল, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৫:১৪ পিএম, মঙ্গলবার, ১৫ মে ২০১৮ | ১১৯৯

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাদ্রাসার শিক্ষক ছাত্রীর সাথে অবৈধ ভাবে সম্পর্ক করার দায়ে এক শিক্ষককে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করেছে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম।

মাদ্রাসা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মাগুড়া ইউনিয়নের মাগুড়া মুন্সিপাড়া দাখিল মাদ্রাসার এবতেদায়ী কারী ও মুজাব্বিদ শাখার শিক্ষক ও জেলার জলঢাকা উপজেলার কাঠালী ইউনিয়নের উত্তর দেশীবাই এলাকার মৃত আমানুল্লাহর ছেলে হাকিনুর রহমান (৪৫)।

তিনি মাগুড়া ইউনিয়নের সবুজপাড়া এলাকার মাষ্টার কছির উদ্দিনের বাড়ীতে ছাত্র জীবনে লজিং থেকে পড়ালেখা করে। সেখান থেকে পড়ালেখা শেষ করে মাগুড়া মুন্সিপাড়া দাখিল মাদ্রাসায় এবতেদায়ী কারী ও মুজাব্বিদ শাখার শিক্ষক হিসাবে ১৯৯৪সালের ২জানুয়ারী যোগদান করে।

দীর্ঘদিন থেকে ওই এলাকায় থেকে পড়ালেখা করার কারণে মাগুড়া ইউনিয়নের সব শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে তার সম্পর্ক গড়ে উঠে। মাদ্রাসায় চাকুরীতে যোগদান করার কয়েক বছর পর তিনি কিশোরগঞ্জ উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের বিন্যাকুড়ি এলাকায় জমি কিনে সেখানে বাড়ী করে।

কিন্তু মাগুড়া সবুজ পাড়ায় লজিং বাড়ীতে তার মাঝে মাঝে যাওয়া আসার নিয়ম থাকে আগের মতই। সেই সুবাদে মাগুড়া সবুজ পাড়া এলাকার শেরশাহ’র সাথেও তার ভাল সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিশেষ বিশেষ দিবসে আত্মীয়তার মত করে একে অপরের বাসায় যাতায়াত করতে থাকে। এভাবেই হঠাৎ করে শেরশাহর মাদ্রাসা পড়ুয়া মেয়ে ও মাগুড়া মুন্সিপাড়া দাখিল মাদ্রাসার ৮ম শ্রেণীর ছাত্রীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রেমের এক পর্যায়ে ওই ছাত্রীকে ফুসলিয়ে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে উঠে।

এভাবেই তার সাথে সম্পর্ক করার কিছুদিন পরে ওই ছাত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তার পরিবার রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে তার শারীরিক পরীক্ষা করান। পরীক্ষা করা হলে চিকিৎসক তাকে অন্তঃসত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। কিন্তু মেয়েটির বাবা গরীব হওয়ায় তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। সাথে সাথেই তার পরিবার মেয়েটিকে নিয়ে বাড়ীতে আসলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

পরে এলাকাবাসী গত ৩মে সকাল সাড়ে ১১টার সময় মাদ্রাসায় গিয়ে শিক্ষককে আটক করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। পরে অন্যান্য শিক্ষকেরা শিক্ষকের বিচারের মাধ্যমে শাস্তি প্রদানের আশ্বস্ত করলে বিক্ষুব্ধ জনতা মাদ্রাসা চত্বর ত্যাগ করে।

পরে মাদ্রাসার শিক্ষক ও কমিটির জরুরী সভার মাধ্যমে ওই শিক্ষককে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয় এবং তাকে এ বিষয়ে কারণ দর্শানোর জন্য এক সপ্তাহের জন্য সময় দেয়া হয়। তবে এ বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য কিছু অসাধু ব্যক্তি ওই ছাত্রীর বাবাকে টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছে।

এ ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে অনেক অবিভাবক তাদের সন্তানকে ওই মাদরাসায় লেখাপড়া করা থেকে বিরত রেখেছে। ফলে ঘটনার পর থেকে মাদ্রাসায় অর্ধেক ছাত্রীর উপস্থিতি কমে গেছে।

এ ব্যাপারে ওই ছাত্রীর বাবা শেরশাহর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার মেয়েকে আমি কোথায় বিয়ে দিব, কে আমার মেয়েকে বিয়ে করবে। মাদ্রাসা শিক্ষক হাকিনুর রহমানের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করে সাংবাদিকদের পরিচয় জানার পর কল কেটে দিয়ে ফোন বন্ধ রাখেন।

মাগুড়া মুন্সিপাড়া দাখিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম গগনমাধ্যমকে জানান, ওই শিক্ষকের কারণে আজ মাদ্রাসা আজ ক্ষতিগ্রস্থ্য। তিনি শিক্ষক সমাজের জন্য কলঙ্ক। তার বিষয়ে মাদ্রাসার পরিচলনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জরুরী সভার মাধ্যমে তাকে বরখাস্ত করেছি।

মাগুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হোসেন শিহাব বলেন, বিষয়টি শোনার পর মাদ্রাসায় গিয়ে শুনেছি এবং পুলিশকে জানিয়েছি। তারপর থেকে ওই মেয়ের অবিভাবক এখন পর্যন্ত আমাকে আর কিছু জানায়নি।

কিশোরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ বজলুর রশীদ গনমাধ্যমকে কে বলেন, খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। এখন পর্যন্ত কেউ কোন থানায় অভিযোগ দেয়নি।