সড়ক নির্মাণ কাজে অনিয়ম, তদন্তে আসছে সংসদয়ি কমিটি

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল ) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৭:০৪ পিএম, সোমবার, ১৯ মার্চ ২০১৮ | ৮৭৫

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর-বালিয়া ভায়া উয়াশৃীর আঞ্চলিক সড়ক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনা তদন্তে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নাজমুল হক প্রধান এমপির নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে।

২০মার্চ মঙ্গলবার কমিটির সদস্যরা সড়কটি পরিদর্শন করবেন বলে জানা গেছে।

এদিকে, তদন্ত কমিটি পরিদর্শনে আসবে এ খবর পেয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ তড়িঘড়ি করে সড়কটি সংস্কার কাজ করছেন।
সোমবার সন্ধা পর্যন্ত সড়কে সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্মীদের কাজ করতে দেখা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত ২০১১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়ে মির্জাপুর উপজেলা সদর থেকে ওয়ার্শী হয়ে মানিগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়া পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে মির্জাপুর অংশে ৯.১২ কিলোমিটার এবং মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার অংশে ২.৮৮ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এই সড়কটির জন্য জমি অধিগ্রহণসহ নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১১১ কোটি টাকা।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে টাঙ্গাইল ও মানিকগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

সড়কটি নির্মাণের জন্য কয়েকটি গ্রুপে টাঙ্গাইল ও ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব পায়। প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে প্রায় ১৯ জন ঠিকাদার ১৩টি কালভার্ট ৫টি ব্রিজ ও মাটি ভরাটসহ সড়ক নির্মাণের কাজ করেন। ওসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্র অনুযায়ী সড়ক নির্মাণের কাজ করেনি বলে অভিযোগ ওঠে।

এ বিষয়ে এলাকাবাসী সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. একাব্বর হোসেন এমপির কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে সংসদীয় কমিটি সভা করে বিষয়টি তদন্তের জন্য কমিটির সদস্য পঞ্চগড়-১ আসনের এমপি নাজমুল হক প্রধানকে প্রধান করে সদস্য যশোর-২ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম, যুগ্ম সচিব, টেকনিশিয়ান ও সড়ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। গঠিত কমিটি মঙ্গলবার সরেজমিন মির্জাপুর -বালিয়া ভায়া উয়াশৃী সড়কটির অনিয়ম তদন্তের জন্য আসবেন বলে টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কে এম নুর ই আলম জানান।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সড়কটি নির্মাণে ২৫০ মিটার (৮২০ ফুট) করে একজন ঠিকাদারকে দেয়া হয়েছিল। ২০১৭ সালের জুন মাসে আনুষ্ঠানিক কাজ শেষ হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাছে সড়কটি হস্তান্তর না করেই সড়ক ও জনপথ বিভাগের ময়মনসিংহ জুন অফিস, জামালপুরের সার্কেল অফিস ও টাঙ্গাইল এবং মানিকগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সম্পূর্ণ বিল তুলে নিয়েছেন।

অন্যদিকে বন্যা থেকে রক্ষার্থে সড়কটির পাশ দিয়ে কনক্রিট ব্লক দেয়ার জন্য স্থানীয় এমপি একাব্বর হোসেন এক কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও সড়ক ও জনপথ বিভাগ সে কাজ না করে গোপনে মাটির সোলডার করছেন বলে এমপি একাব্বর হোসেন জানিয়েছেন।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) মির্জাপুর অফিসের উপ-বিভাগীয় সহকারী প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার সরকার বলেন, সড়কটি নির্মাণে কতজন ঠিকাদার কাজ করেছেন তা জানা নেই। তবে একজন ঠিকাদার কাজ করলে সড়কটির আরএল সঠিক হতো। তবে ঠিকাদারদের গাফিলতি ও জমি অধিগ্রহণে জটিলতা থাকায় সড়কের উন্নয়ন কাজ বিলম্ব হয়েছে।

টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কে এম নুর ই আলমের সঙ্গে সড়কের বরটিয়া এলাকায় দেখা করে ঠিকাদার এবং কাজের ধরন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে উত্তেজিত হয়ে উঠেন।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. একাব্বর হোসেন এমপি বলেন, যেভাবে সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছে তাতে সড়কটি এক বছরও টিকবে না। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।