টাঙ্গাইলে সন্তান নিতে এসে ‘জিম্মি’ ও নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ

স্টার্ফ রিপেটার
প্রকাশিত: ০৫:৪০ পিএম, শনিবার, ১ অক্টোবর ২০২২ | ৩৯২

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ফৈলারঘোনা দক্ষিণপাড়া গ্রামে নিজের শিশু সন্তানকে নিতে এসে দুই দিন যাবত ‘জিম্মি’ রয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন রুমা বেগম নামের এক গৃহবধূ। শুধু ‘জিম্মি’ নয়, তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনও করা হয়েছে। শনিবার (১ অক্টোবর) সকাল থেকে ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

ভুক্তভোগী রুমা বেগম ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বিরাসাট গ্রামের নবী মিয়ার মেয়ে। তিনি গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ফৈলারঘোনা দক্ষিণপাড়া গ্রামে তার সাবেক স্বামী মজনু মিয়ার বাড়িতে জিম্মি রয়েছেন।  

জানা যায়, ২০১৯ সালে রুমা বেগমের সাথে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাঘিল ইউনিয়নের ফৈলারঘোনা দক্ষিণপাড়া গ্রামের এছাক মিয়ার ছেলে মজনু মিয়ার সাথে মুঠোফোনে পরিচয় হয়। মজনু মিয়া তার পূর্বের বিয়ের কথা গোপন রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে এক কাজীর মাধ্যমে দুই লাখ দেন মোহরে রুমা বেগমকে বিয়ে করেন। এরপর ২০২০ সালে তাদের ঘরে এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। পরে রুমা বেগমকে বিভিন্ন সময় শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়।

এক পর্যায়ে প্রায় সাত মাস আগে মজনুকে তালাক দেন রুমা বেগম। পরবর্তীতে তাদের বিবাহিত জীবনের বিভিন্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় মজনু মিয়া।

এছাড়াও হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে রুমা বেগম বাদি হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর পূণরায় মজনু মিয়া রুমা বেগমকে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে তাদের বাড়িতে যায়। ওই সময় রুমা পূণরায় মজনুকে বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় স্থানীয় গ্রাম পুলিশের হস্তক্ষেপে মজনু টাঙ্গাইল ফিরে আসে। এরপর প্রায় সাড়ে তিন মাস আগে মজনু ব্রাহ্মণবাড়িয়া গিয়ে দোকানের খাবার কিনে দেয়ার কথা বলে ছেলে শুভকে চুরি করে নিয়ে আসে। পরে মুঠোফোনে ভিডিও কলে শুভকে রুমা বেগম দেখতে চাইলে তাকে দেখানো হয়নি। উল্টো রুমা বেগমকে বিয়ের জন্য চাপ দেন মজনু। বিয়েতে রাজি না হওয়ায় ছেলেকে নিতে হলে রুমাকে টাঙ্গাইল আসতে বলে মজনু।

গত বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ছেলেকে নিতে টাঙ্গাইল আসেন রুমা। শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে থেকে রুমাকে নিয়ে তার সাবেক স্বামী মজনু শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে সময় পার করে রাতে তার গ্রামের বাড়ির দিকে নিয়ে যান। বাড়ির কাছাকাছি যাওয়ার পর মজনু রাস্তা দিয়ে না গিয়ে ফসলি জমির আইল ধরে তার বাড়ির দিকে এগোতে থাকে এসময় এক পর্যায়ে মজনু তাকে কচুক্ষেতে ফেলে দিয়ে বুকের ওপর চড়ে বসে। এসময় তাকে ছুরি দিয়ে ঘারে ও গালে ছুরিকাঘাত করা হয়। চিৎকার করলে তার মুখের ভিতরে হাত দেয় মজনু। এসময় মজনুর ভাই, মা ও চাচিসহ কয়েকজনে দা ও পিস্তল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বলে হুমকি দেয় রুমাকে। পরে হাতে পায়ে ধরে প্রাণে রক্ষা পান তিনি। তার ঘারে ও শরীরের বিভিন্ন অংশে ছুরিকাঘাত করা হলেও দুই দিনে কোন চিকিৎসা করা হয়নি।

রুমা বেগম বলেন, ‘আমাকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। হাতে পায়ে ধরে আমি প্রাণ ভিক্ষা পেয়েছি। এখানে আসার পরপরই মজনু মোবাইল নিয়ে গেছে। আমাকে এখন ঘরে আটকিয়ে রেখেছে। বিষয়টি পুলিশ ও কাউকে জানাতে পারছি না। গতরাতে স্থানীয় মাতাব্বররা সালিশী বৈঠকে বসেছিল। তখন মজনু মাতাব্বরদের কাছে সন্তানকে হাজির করার জন্য একদিনের সময় চেয়েছে। শুনেছি সন্তানকে বিক্রি করা হয়েছে। আমার সন্তানকে ফেরত চাই।’

ফৈলারঘোনা গ্রামের বাসিন্দা একাধিক ব্যক্তি জানান, মজনুর প্রথম স্ত্রী ও তার মা দেড় বছরের শিশু শুভ মিয়াকে অনেক মারধর করেছে। ঠিক মতো খাবারও দেয়নি। আশপাশের বাড়িতে গিয়ে শুভ খাবার খেয়েছে। শিশুর সাথে মজনু ও তার পরিবার যে আচরণ করেছে তা কোনভাবে একজন মানুষের আচরণ নয়।

এদিকে, অভিযুক্ত মজনুর বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।  

স্থানীয় ইউপি সদস্য লুৎফর রহমান বলেন, শুক্রবার রাতে সালিশী বৈঠকে মজনু একদিনের জন্য সময় নিয়েছে। বিক্রি করা ছেলেকে ফিরিয়ে আনবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

বাঘিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম মতিয়ার রহমান মন্টু বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। সামাজিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

টাঙ্গাইল সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।