ঘাটাইলে করোনা যোদ্ধা ও মানবতার ফেরিওয়ালা মেয়র শহীদুজ্জামান খান

আব্দুল লতিফ,ঘাটাইল
প্রকাশিত: ০২:৩৪ পিএম, মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল ২০২০ | ৫০৬

ছোট বেলায় প্রখ্যাত লেখক ইব্রাহিম খাঁর একটি অসাধারণ ছোট গল্প পড়েছিলাম। গল্পটির নাম ‘ভাঙ্গা কুলা’। যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এলে গল্পটির কথা মনে পড়ে। বিশেষ করে যখন দেখি কিছু নিবেদিত প্রাণ মানুষ নিঃস্বার্থভাবে নিজের জীবন বাজি রেখে অন্যের সেবা করে। এই গল্পটির সাথে আমার আজকের গল্পের অনেকটা মিল আছে। গল্প বললে মনে হয় ভুল হবে। কারণ আমি বাস্তব ঘটনা তুলে ধরছি। বর্তমানে ‘ভাঙ্গা কুলা’ গল্পটি পাঠ্য বইয়ে কোন ক্লাসে পড়ানো হয় বলে আমার জানা নেই।

গল্পটির মূলবক্তব্য সংক্ষেপে তুলে ধরছি: ‘সারাদেশ ভেসে গেছে প্রবল বন্যায়। লেখকের উপর অফিস থেকে আদেশ হল টাঙ্গাইলের চরাঞ্চলের মানুষকে সাহায্য করার। লেখক এলাকাটা ঘুরে মানুষের মাঝে রিলিফ বিতরণ শেষে ক্যাম্পে ফেরার পথে একটা ঘটনা শুনলেন। এক লোক অদ্ভুত উপায়ে ১০ জন মানুষকে বাঁচিয়েছেন। একটা ছনের চালার উপর বাচ্চা নিয়ে ১০ জন মানুষ দু’দিন যাবৎ উপোস ছিল। বাড়ির চারিদিকে প্রবল পানির ¯্রােত থাকায় কেউ কাছে যেতে পারছিল না। একদল ভলান্টিয়ার সেখানে যায় নৌকা নিয়ে।

ভলান্টিয়ারদের সর্দারের অসীম সাহসিকতায় রক্ষা পায় তারা। লেখক ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন ভলান্টিয়ার ক্যাম্পের কাছে মানুষের ভিড়। জানতে পারেন সেখানে ভলান্টিয়ারদের সর্দার শুয়ে আছে। একটা নৌকা ডুবে গিয়েছিল লোকটা কোথা থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দু’জন লোককে উদ্ধার করে কিন্তু নিজে হয়রান হয়ে গেছে। ভিড় ঠেলে কাছে গিয়ে লেখক দেখেন শুয়ে থাকা লোকটা বড়মিঞা যে তাকে ৭ বছর আগে নৌকাতে করে নদী পার করে দিয়েছিল। ক্যাম্পের ডাক্তার বড়মিঞাকে দেখে মৃত ঘোষণা করলেন। লেখক তার বিদেহী আতœার প্রতি সালাম জানিয়ে বললেন, ‘বন্ধু, দুনিয়ার দফতরে যারা মানুষের নাম লিখে রাখে তাদের নজরে পড়বে না জানি। কিন্তু আলিমুল গায়েব বলে যদি কেউ থেকে থাকে, তার দফতরে তোমার কীর্তি নিশ্চয় সোনার হরফে লেখা থাকবে।’’

বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। সবাই আতঙ্কিত ও শঙ্কিত। এটা এমনই এক ভাইরাস যে কেউ আক্রান্ত হলে বা মারা গেলে তার পাশে কেউ যাচ্ছে না। অত্যন্ত কাছের মানুষও পর হয়ে যাচ্ছে। অনেকটা চাচা আপন প্রাণ বাঁচা। সমগ্র বাংলাদেশ করোনা ভাইরাসে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। এই দুর্যোগকালীন সময়ে লকডাউনের জন্য অনেকে বাড়ির বাইরে যেতে পারছেন না। খেটে খাওয়া দিনমজুর ও অনেক মধ্যবৃত্ত মানুষও খুব কষ্টের মধ্যে দিয়ে অর্ধাহারে বা অনাহারে দিন অতিবাহিত করছে। এসব অর্ধাহারে বা অনাহারে দিন অতিবাহিত করা মানুষের জন্য লোকজনকে বলে খাবারের ব্যবস্থা করা, বাড়িতে বাড়িতে খাদ্য পৌঁছে দেয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সহযোগিতা করা, করোনায় মানুষকে সচেতন করে লিফলেট বিতরণ, বিনামূল্যে গরিব মানুষের মাঝে মাক্স বিতরণ, মসজিদসহ বিভিন্নস্থান অপরিস্কার স্থান ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা, মসজিদে মসজিদে হাত ধোয়ার জন্য সাবান দেয়া, লকডাউনে মানুষকে ঘরে থাকতে সচেতন করা নিজের জীবন বাজি রেখে এমন অনেক কাজ নিঃস্বার্থভাবে করে যাচ্ছেন টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল পৌর জনবান্ধব মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহবায়ক শহীদুজ্জামান খান ।

শুধু করোনা ভাইরাসের সময় নয়; কলেজ জীবন থেকেই নিঃস্বার্থভাবে নিরবে মানুষের সেবা করে আসছেন তিনি। অনেকটা মানুষের উপকার বা সেবা করাই তাঁর ধ্যানজ্ঞান। মানবসেবার পাশাপাশি বিভিন্ন জাতীয় দিবসে তৃষ্ণার্ত মানুষকে পানি পান করানো এবং কখনও ফুল দিয়ে বরণ করেন। ঈদের আগে এতিম শিশুদের পোশাক কিনে দেন, শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বা শীতের পোশাক বিতরণ করেন। ঘূর্ণিঝড় ফণি, বুলবুলসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষকে নিরাপদস্থানে যেতে সহযোগিতা করেন। যে কোন বিপদে আপদে ঝাঁপিয়ে পড়েন সবার আগে। তার মধ্যে নেই কোন অহংকার। অনেক অসহায় মানুষের আস্থার শেষ ঠিকানা ভিপি শহীদ । অত্যন্ত সৎ ও সাদা মনের মানুষ তিনি। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সংক্রামণরোধে জনসচেতনতা বাড়াতে মাইক হাতে প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি । দেশের এই দুর্যোগপুর্ণ সময়ে পৌরবাসীকে করোনা বিষয়ে সচেতন করতে ও কর্মহীন ঘরে থাকা পরিবার গুলোর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দিনরাত কাজ করে জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছেন ।

ঘাটাইল উপজেলায় ১৪টি ইউনিয়ন ১টি পৌরসভা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা কেউ কেউ করোনা সংক্রমণের ভয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকলেও ঘাটাইল পৌর মেয়র শহীদুজ্জামান খান দেশে করোনা প্রদুভার্ব দেখা দেওয়ার সাথে সাথেই সরকারী নির্দেশনানুযায়ী জনসচেতনা সৃষ্টি সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করে যার যার ঘরে অবস্থান করার জন্য তার পৌর এলাকায় জনসচেতনামুলক প্রচার প্রচারণা চালিয়েছেন প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি প্রচার প্রচারনার জন্য নিজেই মাইকিং, লিফলেট,হ্যান্ড বিল বিতরণ করেছেন এবং প্রবাসী ফেরত বাড়ির মানুষদের হোমকোয়ারাইন্টাইন নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেওয়া সহ ঐসব বাড়িতে লাল প্রতাকা উড়িয়ে দিয়ে ও স্টিকার লাগিয়ে অন্যজনসাধারণকে ঐ সব বাড়িতে যাতায়াত না করার আহবায়ন জানিয়েছেন। এছাড়াও এলাকার প্রতিটি গ্রাম মহল্লা মসজিদ স্কুল কলেজ রাস্তা ঘাট হাট বাজারে জীবনুনাশক স্প্রে করেন। প্রতিটি মসজিদ মন্দির হাটবাজারের হাত ধোয়ার সাবান সরবরাহ অভ্যাহত রেখেছেন। মানুষের নিরাপত্তার জন্য নিজ অর্থে কয়েক হাজার মাস্ক বিতরণ করেন। তাছাড়াও ঘাটাইল বাজার হাটের সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার জন্য স্থানান্তর করে নিয়মিত মনিটরিং করছেন।

এলাকায় জনসমাগম কে নিরোতসাহিত করতে নিরলস ভাবে প্রতিদিন গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছুটে চলেছেন । তার এলাকার কর্মহীন ঘরে থাকা মানুষদের মধ্যে কেউ যেন অনাহারে না থাকে সে জন্য সকলের খোজ খবর রাখাসহ সরকারী সাহায্য ঘরে ঘরে নিজে উপস্থিত থেকে পৌছে দিচ্ছেন। সরকারী সহায়তার আওতায় ক্ষতিগ্রস্থ সবাইকে আনতে না পারায় তিনি ব্যক্তিগত তহফিল থেকে পৌরসভার সহ¯্রাধিক পরিবারের জন্য খাদ্যসামগ্রী পৌছে দিয়েছেন। নিজের জীবনে ঝুকি নিয়ে জনসার্থে প্রতিদিন সকাল ৮টায় হতে গভীর রাত পর্যন্ত পৌরসভা জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এইসময় কোন গ্রামে কোন মৃত সংবাদ পেলে ছুটে যাচ্ছেন এবং জানাযায় অংশ নিচ্ছেন।

তাছাড়াও করোনার আক্রান্ত ব্যক্তিদের দাফন ও সতকারের জন্য একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করে সেচ্ছাসেবকদের দায়িত্ব বন্টন করে দিয়েছেন। মেয়র শহীদুজ্জামান খান জনহিতকরন কর্মকান্ডে এলাকায় ব্যপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন ঘাটাইল পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের মানুষ বলতে শুরু করেছেন প্রতিটি জনপ্রতিনিধি যদি শহীদুজ্জামান খান ভিপি শহীদের মতো হতেন তবে বাংলাদেশ সোনার বাংলায় পরিনত হতো। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে জনসচেতনতা বাড়াতে প্রায় এক মাস ধরে পৌর সভার বিভিন্ন রাস্তাঘাটে, গ্রামে গ্রামে পাড়ায় মহল্লায় হাতে মাইক নিয়ে ছুটছেন মেয়র শহীদ্জ্জুামান খান । শুধু মাইকিং নয়। হতদরিদ্র ও দুস্থ পরিবারের লোকজনের হাতে তুলে দিচ্ছেন খাদ্য সমাগ্রী,মাস্ক ও সাবান। প্রচার করছেন, করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায়।

মেয়র শহিদুজ্জামান খান বলেন, ছাত্র অবস্থা থেকেই জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছি। জনসাধারণের প্রতিটি দুর্যোগে পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। এখন জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। জনসচেতনতা বাড়াতে পারলে করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তাই এ প্রচেষ্টা। নিজে বাঁচতে প্রতিবেশীকে সচেতন করা আবশ্যক তাই সবাইকে সাধ্যমত জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানাচ্ছি। তার প্রচারণার প্রশংসা করে সুধিজন সব জনপ্রতিনিধি ও বিত্তবানকে দেশের আসন্ন দুর্যোগ মুহূর্তে এভাবে এগিয়ে আসা ও বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না আসার আহবান ও জানাচ্ছেন তিনি ।