তিন স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণে গ্রেফতার ৩ আসামীর দুজনের স্বীকারোক্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:২৮ পিএম, মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২০ | ৪৬৯
টাঙ্গাইলে ঘাটাইলে স্কুল ফাঁকি দিয়ে বনের ভিতরে বেড়াতে যাওয়ায় চার স্কুলছাত্রীর তিনজনকে গণধর্ষণ ও একজনকে শ্লীলতাহানির ঘটনায় গ্রেফতারকৃত তিন আসানীর দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্ধী দিয়েছে। 
 
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দুই আসামী চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ঘাটাইল আমলী আদালতের কাছে তারা পৃথকভাবে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
 
এছাড়া একই দিন বিকেলে ধর্ষিতা তিন স্কুলছাত্রী ও তাদের অপর এক বান্ধবী টাঙ্গাইলের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নওরীন মাহবুব ও ফারজানা হাসনাতের কাছে পৃথকভাবে নিজেদের জবানবন্দি প্রদান করেন। টাঙ্গাইলের সরকারি কৌশুলী(পিপি) এস আকবর খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 
 
এরআগে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সন্ধানপুর ইউনিয়নের সাতকুড়া এলাকায় সোমবার(২৬ জানুয়ারি) রাতভর অভিযান চালিয়ে পুলিশ তিন ধর্ষককে গ্রেপ্তার করে। মঙ্গলবার দুপুরে তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
 
গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছেন, ঘাটাইল উপজেলার দিগর ইউনিয়নের মানাঝি টানপাড়া গ্রামের আনছার আলী খানের ছেলে ইউসুফ আলী খান(২৭), সন্ধানপুর ইউনিয়নের সন্ধানপুর গ্রামের মোকছেদ আলীর ছেলে বাবুল হোসেন(২১) ও একই গ্রামের জব্বার আরীর ছেলে সবুজ ওরফে বাবু(৩০)। 
 
পিপি এস আকবর খান আরো জানান, টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলামের কাছে ধর্ষক বাবুল হোসেন এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুমন কুমার কর্মকারের কাছে ধর্ষক ইউসুফ আলী খান স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে গ্রেপ্তারকৃত তিনজনকে কারাগারে পাঠানো হয়।
 
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঘাটাইল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম জানান, গত রোববার দুপুরে ঘাটাইলের একটি স্কুলের মিলাদের অনুষ্ঠানে যাবার কথা বলে নবম শ্রেনীর ও চার ছাত্রী তাদের তাদের দুই বন্ধুর সাথে ঘাটাইল সেনানিবাসের ফায়ারিং রেঞ্জের ঝড়কা বন এলাকায় বেড়াতে যায়। এসময় স্থানীয় ১০/১২জন বখাটে তাদের পিছু নেয়। পরে গভীর জঙ্গলের ভিতরে গিয়ে ছেলে বন্ধুদের নিয়ে টিলায় উঠলে সেখানে বখাটে যুবকরা তাদের উপরে আক্রমন করে। এসময় তাদের দুই ছেলে বন্ধুকে মারধর করর তাড়িয়ে দেয় বখাটেরা। পরে চার ছাত্রীর মধ্যে তিনজনকে গণধর্ষণ ও এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানি করে। নিজের মা নেই বলে আকুতি করে ওই ছাত্রী ধষর্ষণের হাত থেকে রক্ষা পান।
 
বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পালাক্রমে চলে ছাত্রীদের উপরে নির্যাতন। পরে বখাটেরা এক ছাত্রীর পরিবারের কাছে ফোন করে জানায়, তাদের মেয়ে ছেলে বন্ধুর সাথে অসামাজিক কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়েছে, তাকে নিয়ে যেতে। পরে রাতে ধর্ষকরা তাদের রেখে পালিয়ে যায়। পরে ওই চার ছাত্রী সেখান থেকে বের হয়ে তাদের একজনের নানীর বাড়ি বন এলাকার কাছে থাকায় সবাই মিলে সেখানে আশ্রয় নেয়। পরে নানীর বাড়ির লোকজন নির্যাতনের শিকার কিশোরীদের বাড়িতে সংবাদ দিলে পরিবারের লোকজন ঘাটাইল থানায় বিষয়টি অবহিত করে। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নিয়ে আসে। 
 
এ ব্যাপারে নির্যাতনের শিকার এক ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জনকে আসামী করে ঘাটাইল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন। 
 
তদন্ত কর্মকর্তা আরও জানান, মামলার পর গতকাল সোমবার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে তিন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়। বাকি আসামীদের ধরতে ঘাটাইল থানার তিনটি পৃথক টিম কাজ করছে। 
 
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার তানভীর হাসান জানান, তিন কিশোরীর ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তাদের শারীরিক অবস্থা শঙ্কটাপন্ন না হলেও তারা মানষিকভাবে খুব বিপর্যস্ত রয়েছে। একটি বিশেষ মেডিকেল টিম গঠন করে তাদের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।