দুঃস্থ নারীদের সঞ্চয়ের টাকা দিতে তুলকালাম কাহিনী

এস এম মোসফিকুর রহমান লাল
প্রকাশিত: ০৫:১৭ পিএম, মঙ্গলবার, ২৯ জানুয়ারী ২০১৯ | ৪৩৬
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় গরিব, অসহায় ও দুস্থ নারীদের ভিজিডির সঞ্চয়ের টাকা বিতরণ নিয়ে চলছে তুঘলকি কাণ্ড।
 
ভিজিডি সুবিধাভোগীদের সঞ্চয়ের টাকা এনজিও কর্মীরা ব্যাংকে জমা না করে আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর সঞ্চয়ের টাকা আত্মসাতের কারণে এখনও চারটি ইউনিয়নের ১ হাজার ৪ শত ৬১ জন দুস্থ নারীর সঞ্চয়ের প্রায় ৩০ লাখ টাকা ফেরত দিতে পারেনি উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর।
 
উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিস সূত্রে ও সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ২০১৭-১৮ বছরের চক্রে ভিজিডি কার্ডের আওতায় ৩ হাজার ৪৪৭ জন দুস্থ, অসহায় ও দরিদ্র নারী সুবিধা ভোগ করে। এসব নারীরা ২৪ মাস কার্ডের সুবিধা ভোগের সময় প্রতি মাস ২৪০ টাকা করে আলোর পথে ও প্রতীক প্রগতি সংঘ নামে দুটি ভুঁইফোঁড় এনজিওর মাধ্যমে সঞ্চয়ের টাকা ব্যাংকে জমা করে। কিন্তু এনজিও কর্মকর্তা ও কর্মীরা ব্যাংকে আংশিক টাকা জমা করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করে। এরমধ্যে প্রতীক প্রগতি সংঘের পরিচালক বীরেন চন্দ্র বড়ভিটা, পুটিমারী ও রণচন্ডি ইউনিয়নের দুস্থ নারীদের সঞ্চয়ের ৭ লাখ ১৩ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।
 
এদিকে গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের আলোর পথে এনজিও কর্মী সেলিনা পারভীন গরিব দুস্থ নারীদের সঞ্চয়ের ৬ লাখ ৭৯ হাজার টাকা উত্তোলন করে ব্যাংকে জমা না করে সমস্ত টাকা আত্মসাৎ করে।
 
আলোর পথে এনজিওর কনসালটেন্ট সুলতান মাহমুদের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আলোর পথে এনজিওর মাধ্যমে ৬ টি ইউনিয়নের সুবিধাভোগীদের টাকা ব্যাংকে জমা করার চুক্তি হয়েছিল। এরমধ্যে শুধুমাত্র কিশোরগঞ্জ সদর ইউনিয়নে ২৪ হাজার ৬ শত টাকা এবং গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের ৪ লাখ টাকা ওই দুই ইউনিয়নের কর্মীরা ব্যাংকে জমা না করে আত্মসাৎ করেছে।
 
প্রতীক প্রগতির পরিচালক বিরেন্দ্রনাথ রায়ের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
 
চাঁদখানা ইউনিয়নের দুস্থ নারী রেহানা বেগম যার সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর ১০৫, মোসলেমা তাবাচ্ছুম হিসাব নম্বর ৬০, শেফালি রানী রায় হিসাব নম্বর ২৬৬ তারা সকলেই বলেন, লভ্যাংশ তো দূরের কথা মূল টাকা থেকেই আমাদের ২ শত থেকে ৩ শত টাকা কম দেয়া হয়েছে।
 
কিশোরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুবিধাভোগী মনোয়ারা বেগম বলেন, আমি আমার সঞ্চয়ের টাকা ফেরৎ না পেয়ে টাকা পাওয়ার জন্য মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
 
গাড়্রাগ্রাম ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত এনজিও কর্মী সেলিনা পারভিন সুবিধাভোগীদের সঞ্চয়ের ৪ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে তাঁর নিজের কাছে রাখার কথা স্বীকার করে বলেন, আমি একাই না, অন্য ইউনিয়নের কর্মীরাও সুবিধাভোগীদের সঞ্চয়ের টাকা নিজের কাছে রেখেছে।
 
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সাবিকুন্নাহারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, রণচন্ডি, পুটিমারী ও বড়ভিটা ইউনিয়নের সুবিধাভোগীদের সঞ্চয়ের ৭ লাখ ১৩ হাজার টাকা নিয়ে প্রতীক প্রগতী সংঘের পরিচালক বিরেন্দ্রনাথ পালিয়ে গিয়েছিল। পরে অনেক কষ্টে তা উদ্ধার করেছি। বর্তমানে তার ফোন বন্ধ থাকায় ওই তিন ইউনিয়নের সুবিধাভোগীদের সঞ্চয়ের সঠিক হিসাব না পাওয়ায় টাকা বিতরণ সম্ভব হচ্ছে না। গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের ৪ লাখ টাকা উদ্ধারের চেষ্ঠা চলছে।
 
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।