নাটোরের দুটি সুগার মিলে আখ বিক্রির বকেয়া সাড়ে

৩৪ কোটি টাকা না পাওয়ার প্রতিবাদে আখ চাষীদের মানববন্ধন

বাগাতিপাড়া (নাটোর) সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৪:৩৫ পিএম, মঙ্গলবার, ২৯ জানুয়ারী ২০১৯ | ২৩২

নাটোরের দুটি সুগার মিলে আখ বিক্রি করেও টাকা পাচ্ছেন না চাষীরা। ফলে আখ চাষীরা বেকায়দায় পড়েছেন। প্রায় দুই মাস আগে চিনিকলে আখ বিক্রি করা হলেও সেই আখের মূল্য পাননি আখ চাষীরা। এ দুই চিনিকলে চাষীদের বকেয়া প্রায় সাড়ে ৩৪ কোটি টাকা। এদিকে আখ বিক্রির টাকা না পেয়ে ক্ষুব্ধ আখচাষীরা দ্রুত সময়ের মধ্যে টাকা পরিশোধের দাবি ও নানা অনিয়মের প্রতিবাদে মঙ্গলবার নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলায় মানব বন্ধন কর্মসূচী পালন করেছেন।

জানা গেছে, নাটোর সুগার মিল ও নর্থবেঙ্গল সুগার মিলের অধীনে এ অঞ্চলের আখচাষীদের আখ ক্রয় করা হয়। নাটোর সুগার মিলের ৮টি সাবজোনের মোট ৪৭ টি কেন্দ্রে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার আখচাষী তাদের আখ বিক্রি করেন। অন্যদিকে নর্থবেঙ্গল সুগার মিলে ৭টি সাবজোন এর মাধ্যমে ৩৭টি কেন্দ্রে ও মিলগেটে আখ ক্রয় করা হয়। এসব কেন্দ্রে প্রায় ১৮ হাজার আখচাষী তাদের আখ বিক্রি করেন। চাষীরা মোবাইল ফোনে ম্যাসেজের মাধ্যমে পূর্জি পান। এ পূর্জি মোতাবেক চাষীরা আখ সরবরাহ করেন। তাদের আখ বিক্রির অর্থ বর্তমানে শিওর ক্যাশের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়।

কিন্তু গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সবশেষ আখ বিক্রির টাকা পেলেও এরপর আর কোন টাকা পাননি চাষীরা। ফলে টাকার অভাবে অনেক চাষীরা তাদের চৈতালী আবাদ করতে পারছেন না। নর্থবেঙ্গল সুগার মিলে সরবরাহকারী আখচাষীদের প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি টাকা এবং নাটোর সুগার মিলে প্রায় ২০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে।

বাগাতিপাড়ার পেড়াবাড়িয়ার আখচাষী আশরাফুজ্জামান মাসুম বলেন, তিনি নাটোর সুগার মিলের অধীনে মালঞ্চি আখ ক্রয় কেন্দ্রে চলতি মৌসুমে এক লক্ষ ৬৬ হাজার টাকার আখ বিক্রি করেছেন। তিনি মাস দেড়েকে পুর্বে মাত্র ১২ হাজার টাকা পেয়েছেন। কিন্তু এরপর বাঁকি আর কোন টাকা পাননি। টাকা না পেয়ে চৈতালি আবাদ করতে পারছেন না।

সোনাপাতিল মহল্লার আখচাষী রুহুল আমিন বলেন, তিনি বাগাতিপাড়া আখ ক্রয় কেন্দ্রে এক লক্ষাধিক টাকার আখ বিক্রি করেও টাকা পাচ্ছেন না। এদিকে তমালতলা আখ ক্রয় কেন্দ্রের সভাপতি আলতাফ হোসেন জানান, তার কেন্দ্রের প্রায় ২৮৫ জন আখচাষী দেড় মাস থেকে আখ বিক্রির টাকা পাননি। এবিষয়ে তিনি উর্দ্ধোতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছেন।

কর্তৃপক্ষরা তাকে জানিয়েছেন, বর্তমানে ক্যাশ নাই। ক্যাশ পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে চাষীদের আখের মূল্য পরিশোধ করা হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আখ ক্রয় কেন্দ্রের একজন কর্মকর্তা জানান, আখ ক্রয় কেন্দ্রের পূর্জি অনুয়ায়ী সিআইসি আখ ক্রয় করেছেন। সে মোতাবেক বিলও দিয়েছেন। টাকা পরিশোধ করবেন চিনিকল কর্তৃপক্ষ।

এদিকে দীর্ঘ সময় ধরে আখ বিক্রির অর্থ না পেয়ে ক্ষুব্ধ আখচাষীরা মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১ টায় বাগাতিপাড়া প্রেসক্লাবের সামনে (মালঞ্চি বাজারে) এক মানব বন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে। সেখানে চাষীদের পক্ষে বক্তব্য দেন হাবিবুর রহমান হবি, আশরাফুজ্জামান মাসুম, আমিন বিশ্বাস, মোস্তাফিজুর রহমান মিঠু প্রমুখ। বক্তারা পুর্জি বিড়ম্বনা, ওজনে কারচুপি, সরকারী ভর্তুকী প্রদানে অনিয়মসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে তা নিরসন এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে আখ বিক্রির অর্থ পরিশোধের দাবি জানান।

বিষয়টি নিয়ে ক্যাব এর বাগাতিপাড়া সভাপতি আব্দুল মজিদ বলেন, আখ চাষীদের ন্যায্য পাওনা দ্রুততম সময়ে পরিশোধ করা এবং পূর্জি বিড়ম্বনা, ওজনে কারচুপি সহ বিভিন্ন অনিয়ম এর বিষয়গুলি কর্তৃপক্ষ দ্রুত সমাধান করবেন এমন দাবিও করেন তিনি।

নাটোর সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শহিদ উল্লাহ বলেন, চাষীদের আখ বিক্রির টাকা না পাওয়ার দাবি যৌক্তিক। চিনিকলের উৎপাদিত চিনি সরকারের বর্তমান নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি না হওয়ায় আর্থিক সংকট তৈরি হয়েছে। সে কারণে চাষীদের প্রায় ২০ কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে।

চিনি বিক্রি করে ও সরকারের সহযোগিতায় আর্থিক সংকুলানের চেষ্টা অব্যাহত আছে। আর্থিক সংকুলান হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে চাষীদের টাকা পরিশোধ করা হবে বলে জানান তিনি। এছাড়াও অন্যান্য অভিযোগের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিনি।

এব্যাপার নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল জানান, তাঁর চিনিকলের অধীনে আখ ক্রয় বাবদ প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। চাষীদের এই বকেয়া অর্থ পরিশোধের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

 পিএইচ/আরিফুল ইসলাম তপু