অরন্যভেদ করে গড়ে তোলা

অবৈধ ইটভাটার জন্য চলছে পাহাড় কাটা ও বন উজাড়! 

চকরিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০২:০০ পিএম, সোমবার, ২৬ নভেম্বর ২০১৮ | ৪৩১
চকরিয়া ও অবিচ্ছিন্ন পেকুয়া ও লামার পাহাড় জুড়ে ৩২ ইটভাটার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইটভাটার কালো ধোঁয়া,গাছ নিধন ও অব্যাহত পাহাড় কর্তনের ফলে পাহাড়ে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। অরন্যভেদ করে গড়ে তোলা অবৈধ ইটভাটার কাঁচামালের যোগান দিতে চলছে পাহাড় কাটা ও বন উজাড়।
 
ইটভাটার কালো ধোঁয়ার ফলে খাদ্যভান্ডার হারিয়ে মানুষের আবাসস্থল গ্রামের দিকে ছুটছে হাতির পাল।হাতি তাড়াতে আসা সরকারী বেসরকারী দ্বায়ীত্ববানদের মুখ থেকে জানা গেছে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য।
 
 জানা যায়, কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী বনরেঞ্জের রিজার্ভ ও তৎসংলগ্ন বনভূমি এলাকায় রয়েছে সেগুন, গর্জন সহ নানান প্রজাতির গাছের একমাত্র রির্জাভ বাগান। বনরেঞ্জের রিজার্ভ ও তৎসংলগ্ন পাহাড়ের মাটি ও রিজার্ভ এলাকার গাছের উপর নির্ভর করে চকরিয়া,পেকুয়া ও লামায় পাহাড়ে গড়ে উঠেছে ৩২ টি ইটভাটা। অরন্যভেদ করে গড়ে তোলা অবৈধ ইটভাটায় সমান তালে পাহাড় কাটছে অর্ধশতাধীক স্কেভেটর। অবিচ্ছিন্ন এলাকার একদল বনদস্যু-বনকর্মীর সহযোগীতায় ভূঁয়া টিপি তৈয়ার করে গাছ লুট করে লাকড়ী সরবরাহ করে ওই সব ইটভাটায়।
 
রিজার্ভ এলাকার গাছের উপর নির্ভরশীল অরন্যভেদ করে গড়ে তোলা ৩২টির অধিক অবৈধ ইটভাটা মালিকের উৎসাহে লাকড়ীর যোগান দিতে বন উজাড় করছে বনদস্যুরা। ইটভাটার কালো ধোঁয়া এবং পাহাড় কাটার স্কেভেটর ও ডোজারের গগনভেদী আওয়াজ ও অব্যাহত গাছ নিধন এর ফলে আবাসস্থল হারিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বনের পশু-পাখিরা।
 
নিজেদের আবাসস্থল ও খাদ্যভান্ডার হারিয়ে মানুষের আবাসস্থলের দিকে ছুটে যাওয়ায় দাতাল হাতির লোভনীয় মুল্যবান দাতের দিকে নজর পড়ে বনদস্যুদের।এতে গত এক সপ্তাহ আগে নিহত হয়েছে এক দাতাল হাতি। এ ছাড়া ও প্রতিনিয়ত অনেক পশু-পাখি ও মারা পড়ছে শিকারীর হাতে।
 
পাহাড়ী জনপদের লোকজন জানান, চকরিয়া ও অবিচ্ছিন্ন পেকুয়া ও লামার পাহাড় জুড়ে ৩২ ইটভাটা গড়ে উঠেছে। কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাসিয়াখালী রিজার্ভ বনের গাছ চুরি বৃদ্ধি পেয়েছে ইটভাটার কারনে। সংশ্লিষ্ট বনবিভাগের কতিপয় বন রক্ষক এদের প্রকাশ্য সহযোগী। লাকড়ীর ঠিকানা ইটভাটায় হলে ও চোরাই সেগুন ও মাদার ট্রি গর্জন কাটের অবৈধ হাট লামা উপজেলার ফাসিয়াখালী গুলিস্থান বাজার, চকরিয়ার ভাঙ্গারমুখ বাজার ও পেকুয়া-বাঁশখালী সীমানার আরবশাহ বাজার।
 
সংশ্লিষ্ট এলাকার বনবিভাগ ও আইন শৃংখলা বাহিনীকে মাসিক উৎকোচ দিয়ে খোলাবাজারে ওই সব কাট বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। লুট হওয়া গাছ বনপরীক্ষন ফাঁড়ির সামনে দিয়ে বের হচ্ছে মোটা অংকের টাকায়। বের করার সময় জোত পরমিট নামের ভুঁয়া টিপি তৈয়ার করে দিচ্ছে লামা বন-বিভিাগের কতিপয় দূর্নীতিবাজ বন-কর্মকর্তা।অভিযোগ রয়েছে মোটা টাকার বিনিময়ে তৈয়ার করা এ টিপি’র কাজ শুধু ’আই ওয়াশের’ জন্য। বাকি কাজ হয়, বিকাশে টাকার বিনিময়ে।বন কর্মিদের সংশ্লিষ্টতার কারনে প্রকাশ্য গাছ লুট হচ্ছে। 
 
এলাকার সচেতন মহল জানায়, কক্সবাজার বনবিভাগের ফাসিয়াখালী রেঞ্জের বন উজাড়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত বনবিভাগের কতিপয় বনকর্মি। ওই সব বন কর্মিরা কাট চোরদের শিখিয়ে দেয় কাট পাচারের কৌশল। কৌশলী দূর্নিতিবাজ বনকর্মিরাই বনের শত্রু“।
তাদের সহযোগীতায় গাছ পাচার নিরাপদ করে তুলেছে বনদস্যু সিন্ডিকেট।এতে বিপন্ন হয়ে উঠেছে বন্য প্রাণীর জীবন। অব্যাহত পরিবেশ ধ্বংশ হলে ও পরিবেশ অধিদপ্তর রয়েছে নিরব। তাই সচেতন মহল এ ব্যাপারে মামননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি কামনা করেছেন।