মির্জাপুরে নদীর পানি বৃদ্ধি, বালি ব্যবসায়ীরা তৎপর, ভাঙন শুরু

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল ) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৪:৫৪ পিএম, মঙ্গলবার, ২৪ জুলাই ২০১৮ | ১২৮২

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বংশাই ও ঝিনাই নদী সহ বিভিন্ন নদীর পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে অবৈধ বালু লুটকারীরা তাদের তৎপরতা শুরু করেছে। ইতিমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নদীতে ড্রেজার মেশিন স্থাপন করে তারা বালু উত্তোলন শুরু করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে নদী তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী সাধারণ মানুষের মধ্যে বরাবরের মত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

ইতমধ্যে উপজেলার ফতেপুর এলাকায় বংশাই ও ঝিনাই নদীতে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। অব্যাহত এ ভাঙনে এরই মধ্যে অর্ধশত বসতবাড়ি, বাজার, রাস্তা, ফসলি জমি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, পাকা রাস্তা ও সড়ক রক্ষা বাঁধ। দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এলাকাবাসী জানান, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রভাবশালীরা খননযন্ত্র ও মাটি কাটার যন্ত্র্ দিয়ে নদী থেকে বালু তুলে অন্যত্র বিক্রি করে। এ কারণে নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেই ভাঙন শুরু হয়। যা এরই মধ্যে তীব্র আকার ধারণ করেছে।

ভাঙনের ফলে ঝিনাই নদীর তীরবর্তী মির্জাপুরের কুর্ণী-ফতেপুর সড়কের হিলরা বাজার ও বৈলানপুর এলাকার প্রায় ২০০ মিটার পাকা অংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে যাচ্ছে। সুতানড়ী ও থলপাড়া এলাকায় পাট ক্ষেত, বসত ঘর ও আবাদী জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

এরই মধ্যে হিলার বাজারের কমপক্ষে ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জায়গা নদে বিলীন হওয়াতে ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। ফতেপুর বাজারের পূর্বপাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঝুঁকিতে রয়েছে। চাকলেশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাকলেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ ও ফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয় হুমকির মুখে পড়েছে বলে জানা গেছে।

হিলরা গ্রামের দেলোয়ার হোসেন (৫৫) জানান, নদের পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভাঙন শুরু হয়। তবে গত সপ্তাহ থেকে হিলরা বাজারের ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে। ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে ব্যবসায়ীরা তাঁদের ঘর সরিয়ে নিচ্ছেন। এর মধ্যে বাজারের ব্যবসায়ী আদাবাড়ি গ্রামের বাদশা মিয়ার একটি টিনের ঘর তিনি ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তরা কি করবেন তা নিয়ে অনেকেই চিন্তায় পড়েছেন।

একই গ্রামের বাসিন্দা গোলক কুমার সরকার জানান, ভাঙনের কারণে আটটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদীর তীরবর্তী ২-৩ একর জমি বিলীন হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, কুর্ণী-ফতেপুর সড়ক দিয়ে মির্জাপুর উপজেলার মহেড়া ও ফতেপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী বাসাইল ও সখিপুর উপজেলার লোকজন চলাচল করে। এছাড়া গড়ে প্রতিদিন ৩ হাজার মোটর সাইকেল, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, ট্রাক, পিকআপ ভ্যান ও ম্যাক্সি চলাচল করতো।

হিলরা গ্রামের বাসিন্দা আসিফ আহমেদ শিমুল (২৩) জানান, গত কয়েকদিনের ভাঙনে সড়কটির ওই অংশ ভাঙায় যোগাযোগ ব্যবস্থার চরম অবনতি হয়েছে। জরুরী প্রয়োজনে মানুষকে হিলরা থেকে আদাবাড়ি কিংবা ছাওয়ালী বাজার দিয়ে প্রায় ৪-৫ কিলোমিটার ঘুরে মির্জাপুর উপজেলা সদর বা জেলা সদরসহ অন্য গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।

এছাড়া বংশাই নদীর চাকলেশ্বর, গোড়াইল, ত্রিমোহন, কুমারজানী এলাকাতেও ভাঙন ব্যপক আকার ধারণ করেছে। এতে ওই এলাকায় নদী তীরবর্তী প্রায় ১০ একর জমি বিলীন হয়ে যাচ্চে। ত্রিমোহন এলাকায় আলহাজ একাব্বর হোসেন সেতুর দক্ষিন পাশে ভাঙন অব্যাহত থাকায় সেতুটি হুমকীর মুখে পড়ছে। গোড়াইল এলাকায় বিদ্যুতের জাতীয় গ্রীডের একটি, পল্লী বিদ্যুতের দুইটি খুঁটিও ভাঙনের হুমকীতে রয়েছে।

চাকলেশ্বর গ্রামের বাসিন্দা ফরিদ মিয়া ও হাবেল মৃধা জানান, নদীর ভাঙন বাড়ার পাশাপাশি মানুষের দুর্ভোগও বাড়ছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সেদিকে নজর নেই।

ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রউফ জানান, এ বছর নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করছে। বিশেষ করে সড়কটি ভাঙাতে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বিকল্প হিসেবে সড়কের ভাঙা অংশের পাশে এলাকাবাসীর জমির উপর দিয়ে চলাচলের জন্য জরুরী ভিত্তিতে মাটি ফেলে সড়ক নির্মাণের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভুগীরা অবিযোগ করেছে ভাঙন কবলিত এলাকা এমনিতেই ঝুকি নিয়ে বসবাস তার উপর প্রতিবছর বর্ষা এলেই নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলন আরো ঝুকি বাড়িয়ে দেয়। সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ এর প্রতিকার করতে না পারলে নদীর ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবেনা।

মির্জাপুর উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সামছুদ্দীন জানান, বিষয়টি উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

মুঠোফোনে পানি উন্নয়ন বোর্ড টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: শাহজাহান সিরাজ বলেন, সরেজমিন পরিদর্শন করে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি ) মো. আজগর হোসেন বলেন নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলনের সাথে কোন আপোস নেই। মৌখিক অভিযোগ পেলেই এব্যাপারে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।