মা ও শিশু বিষয়ক

বিতর্কে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন বিন্দুবাসিনীর তিন তারকার

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: ০৪:৩৬ পিএম, সোমবার, ২৫ জুন ২০১৮ | ৬৪০

লেখাপড়ার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমেও এগিয়ে টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী বিন্দুবাসিনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মেয়েরা। বাংলাদেশ টেলিভিশন কর্তৃক আয়োজিত মা ও শিশু বিষয়ক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সেমিনাইনাল পর্বে উঠেছে টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী বিন্দুবাসিনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।

এই সাফল্যের নেপথ্যে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে প্রতিষ্ঠানের তিন শিক্ষার্থী বিতার্কিক দলের সদস্য ১০ম শ্রেণির ছাত্রী মেহেরুন্নেছা অর্থী, নুসরাত ইসলাম হুমায়রা এবং ৮ম শ্রেণির ছাত্রী মিম আতিক সিদ্দিকী।

বিতার্কিক দলের দল নেতা ১০ম শ্রেণির ছাত্রী মেহেরুন্নেছা অর্থী বলেন, “সেমিফাইনালে উঠতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। খুব ভাল লাগছে এমন একটি অবস্থানে আসতে পেরে। সেমিফাইনালে উঠতে পারার অনুভূতি আসলেই অন্য রকম। আমরা অতি গর্বের সাথে বলতে পারছি মা ও শিশু বিষয়ক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় আমরা সেমি ফাইনালে উঠার স্থানটি অর্জন করেছি।

বিতর্কের সাথে কিভাবে জড়ালে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে সপ্তাহে একদিন “সহ-শিক্ষা র্কাক্রম ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আমি বিতর্কে অংশ নেই। আমার বিতর্কের ধরন দেখে আমাদের বিদ্যালয়ের একজন সহকারি শিক্ষক মোহাম্মদ সাঈদউল হাসান (বাপ্পি) স্যার আমকে বিতর্কের বিষয়ে উৎসাহ দেন এবং সেখান থেকেই আমার বিতর্কে প্রবেশের সূচনা হয়। আমার বাবা-মা বিষয়টি অনেক ইতিবাচক ভাবেই নিচ্ছেন। তাদের সহযোগিতায় আমি একজন বিতার্কিক হতে পেরেছি। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবদি। আমাদের সেমিফাইনাল পর্বে উঠায় শিক্ষকদের অবদান অনেকাংশেই বেশি। তাদের সাহায্য, উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। বিশেষ করে প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক মো. আল মামুন তালুকদার স্যারের সঠিক দিক নির্দেশনা এবং অনুপ্রেরণায় আমরা ভাল করছি।”

বিতার্কিক দলের প্রথম বক্তা ১০ম শ্রেণির ছাত্রী নুসরাত ইসলাম হুমায়রা বলেন,“ সেমিফাইনালে উঠার অনুভূতিটা আনন্দের এবং গৌরবের যা শুধু আমার একার নয়। এই অর্জন আমাদের প্রতিষ্ঠান এবং পুরো টাঙ্গাইলবাসীর।

বিতর্কের সাথে কিভাবে জড়ালেন এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমেই আমি ইংলিশ ডিবেট দ্বারা যাত্রা শুরু করেছিলাম। মূলত তার পর থেকেই আমাদের প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করি। বিতর্কে অংশগ্রহন করতে লেখাপড়ার কোন সমস্যা হয় না। লেখা পড়ার বিষয়টি মাথায় রেখেই বিতর্কে অংশগ্রহন করি। বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অনেক বেশী জানতে হচ্ছে। তাই বিভিন্ন বই পড়ার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক মন্ডলীর অনেক সহযোগিতা পাচ্ছি। এই বিতর্কে চ্যাম্পিয়ন হতে আমরা বিভিন্ন তথ্য নিয়ে আলোচনা করছি। আশা করছি আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পারবো।”

বিতার্কিক দলের দ্বিতীয় বক্তা ৮ম শ্রেণির ছাত্রী মিম আতিক সিদ্দিকী বলেন, “ এই বিতর্কের মাধ্যমে আমি বিটিভির মঞ্চে আমাদের প্রতিষ্ঠান এবং জেলাকে উপস্থাপন করেত পেরে খুবই আনন্দিত। সেমিফাইনালে উঠতে পেরে সত্যি খুবই ভালো লাগছে।

বিতর্কে কিভাবে জড়ালেন সেই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছোট বেলা থেকেই নিজের মতামতগুলো অন্যদের মাঝে তুলে ধরতে ভালো লাগে। স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই দেখছি বড় আপুরা সফলতার সাথে বিতর্কে অংশগ্রহন করছে। সেখান থেকেই মূলত আমি বিতর্কে আসার অনুপ্রেরণা পেয়েছি। আমার বাবা-মা বিতর্কে অংশগ্রহন করার বিষয়টি খুবই ইতিবাচক ভাবেই নিয়েছে। তাদের অনুমতি এবং উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় আমি এই পর্যায়ে আসতে পেরেছি। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ব্যাপারে আমি পুরো শতভাগ আশাবাদি। কারণ আমাদের দলের সদস্যদের মধ্যে যে বোঝা পড়াটা রয়েছে তা খুব জোড়ালো এবং ভালো।”

বিন্দুবাসিনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আল মামুন তালুকদার বলেন,“ মা ও শিশু বিষয়ক বিতর্কে সেমিফাইনালে উঠার নেপথ্যে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেচে প্রতিষ্ঠানের তিন ছাত্রী। তারা শুধু সহ-শিক্ষা কার্যক্রমেই নয় লেখাপড়ায়ও অনেক ভালো। আমি আশা করি তারা ফাইনালে গিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রতিষ্ঠান তথা টাঙ্গাইলবাসীর সুনাম অর্জন করবে।”

উলে­খ্য, গত ৯ মার্চ শুক্রবার বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনে অনুষ্ঠিত কোয়ার্টার ফাইনাল পর্বে ঢাকার শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়কে হারিয়ে সেমিফাইনাল পর্বে উঠেছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিযোগিতার বিষয় বস্তু আইনের প্রয়োগ নয়, কেবল সামাজিক সচেতনতার মাধ্যমেই শিশু এবং নারী পাচার বন্ধ করা সম্ভব।

বিন্দুবাসিনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিতার্কিক দলের সদস্যরা এই বিষয়ের বিপক্ষে বিতর্ক করেন। রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, ক্যামব্রিয়াম স্কুল এন্ড কলেজ, সিভিল এভিয়েশন স্কুল এন্ড কলেজ, হলিক্রস স্কুল এবং ভিখারুন্নেছা স্কুল এন্ড কলেজকে হারিয়ে সেমিফাইনাল পর্বে উঠেছে প্রতিষ্ঠানটি।

এছাড়াও ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি সারা বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। বিন্দুবাসিনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ই প্রথম ঢাকার বাইরের কোন চ্যাম্পিয়ন প্রতিষ্ঠান। এর আগে ঢাকার বাইরে কোন প্রতিষ্ঠানই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করতে পারে নি।”