সম্পদের কুমির এমপি হাবিবর; তদন্তে দুদক

খালিদ হাসান,বগুড়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১০:২৯ এএম, শনিবার, ২ জুন ২০১৮ | ৫৪২

অঢেল সম্পদের  মালিক বগুড়া-৫ (ধুনট-শেরপুর) আসনের এমপি হাবিবর রহমান। তার সম্পদের খোঁজে এবার মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আওয়ামী লীগ দলীয় এ সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে আয়বহির্ভূত শতকোটি টাকার সম্পদ ও সম্পত্তির অভিযোগ রয়েছে। দুদক এরই মধ্যে বগুড়ার সাবরেজিস্ট্রি অফিসের মাধ্যমে তথ্য যাচাইয়ের উদ্যোগ নিয়েছে।

জানা যায়, দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি পত্র মারফত জায়গাজমির খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। ১৯ এপ্রিল পাঠানো এ চিঠিতে এমপি হাবিবর ছাড়াও তাঁর স্ত্রী খাদিজা হাবিব, ছেলে আসিব ইকবাল সনি, মেয়ে ফারজানা দিবার নামে জায়গাজমি, ফ্ল্যাট ক্রয়সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ছায়ালিপি পাঠাতে বলা হয়েছে।

বগুড়ার জেলা রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম এ বিষয়ে বলেন, দুদকের চিঠি পেয়েছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সব সাবরেজিস্ট্রি অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্তদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ৭ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে শেরপুর-ধুনটের সচেতন মানুষের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছিল। এতে উল্লেখ করা হয়, দুই দফায় সংসদ সদস্য থাকাকালে হাবিবর রহমানের ছেলে আসিব ইকবাল সনি ও পিএস মিলন সীমাহীন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তাঁরা টিআর, কাবিখার বরাদ্দ লুটপাট, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, সামাজিক বনায়নের শতকোটি টাকার গাছ লুটপাটসহ বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেন।

এমপি হাবিবর রহমান জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অর্থ দিয়ে যেসব সম্পদ করেছেন তার বিবরণ তুলে ধরা হয় দুদকে দাখিল করা অভিযোগে। সেখানে বলা হয়েছে, এমপি হাবিবর প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকার নিকুঞ্জ এলাকায় ব্লক সিতে একটি বাড়ি নির্মাণ করেছেন, শান্তিনগরে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন প্রায় পাঁচ কোটি টাকায়। আদাবর এলাকায় একটি প্লট কিনেছেন, যার আনুমানিক মূল্য ৫০ কোটি টাকা। এ ছাড়া বগুড়ায় আরো একটি বাড়ি বানিয়েছেন, যার আনুমানিক মূল্য ৩০ লাখ টাকা।

শেরপুরে শেরুয়া মৌজায় আসিব ইকবাল সনি জবরদখল করেছেন ৪৫ শতক জমি, যার মূল্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। মহাসড়কের পাশে খোদ্দর মৌজায় সনির নামে ২২ বিঘা জমি কিনে সেখানে আসিব ব্রিক ফিল্ড (ইটভাটা) স্থাপন করা হয়েছে; যার মূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা।

২০১৫ সালে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোর পূর্ব পাশে ধুনট মৌজায় ২১ শতক জমি কেনা হয়েছে ছেলের নামে; যার আনুমানিক মূল্য এক কোটি টাকা। পৌর এলাকার সরকারি রেজিস্ট্রি ফি প্রতি শতক তিন লাখ ৩২ টাকা। কিন্তু পুরো সম্পত্তির দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়েছে মাত্র দুই লাখ ৭০ হাজার টাকায়; যার মাধ্যমে মোটা অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ চলছে। এসব সম্পত্তির বাইরে ৫০ একর আয়তনের বাইশা বিল দখল, পাশেই ৫০ বিঘা জমি কিনে বাবু পার্ক নির্মাণের তথ্য জানা গেছে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, এমপি হাবিবর রহমান নিজ ও পরিবারের সদস্যদের নামে আনুমানিক ৫০ কোটি টাকা জমা রেখেছেন ঢাকা ও বগুড়ার যমুনা, ডাচ্-বাংলা, মার্কেন্টাইল ও ব্র্যাক ব্যাংকে। নামে-বেনামে বন্ড, ঋণপত্র ও শেয়ার ক্রয় করেছেন আনুমানিক ১০ কোটি টাকার। স্ত্রী ও পুত্রবধূর অলংকার ক্রয় করেছেন এক কোটি টাকার। নিজ নামে শুল্কমুক্ত একটি জিপগাড়ি ছাড়াও স্ত্রীর নামে একটি প্রাইভেট কার, ছেলের নামে একটি প্রাইভেট কার ও একটি মাইক্রোবাস কিনেছেন। এসব গাড়ির আনুমানিক মূল্য দেড় কোটি টাকা।

এসব অভিযোগ ও তদন্ত সম্পর্কে জানতে এমপি হাবিবর রহমানের মোবাইল নম্বরে ফোন করা হলে তা রিসিভ করেন ব্যক্তিগত সহকারী মিলন। এমপি ব্যস্ত আছেন জানালে তাঁর কাছে দুদকের চিঠি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। মিলন বলেন, চিঠির ব্যাপারে তিনি অবগত আছেন।