এলডিসি গ্রাজুয়েশনের সময় আরো ৩-৫ বছর বাড়ানোর দাবি ব্যবসায়ী নেতাদের


বাংলাদেশ এখনই এলডিসি গ্রাজুয়েশনের জন্য প্রস্তুত নয় দাবি করে, এটি আরো ৩-৫ বছর পিছিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা গ্রাজুয়েশনকে সমর্থন করছেন, কিন্তু প্রস্তুতির জন্য তাদের আরো সময় প্রয়োজন।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) রাজধানীর বনানীতে একটি হোটেলে ‘এলডিসি থেকে উত্তরণ: বাংলাদেশের জন্য কিছু বিকল্প’ শীর্ষক এক সেমিনারে তারা এ দাবি করেন। এটির আয়োজন করে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশ। সহযোগিতায় ছিল বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (বাপি) ও তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
তিনি আরো বলেন, এলডিসি গ্রাজুয়েশন ওষুধ শিল্পসহ রপ্তানির বহুমুখীকরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতেও প্রভাব ফেলবে। কারণ, উত্তরণের পর ডব্লিউটিও-র ট্রিপস ওয়েভার হারানোয় কড়াকড়ি মেধাস্বত্ব নিয়ম মেনে চলতে হবে, বিশেষত উচ্চমূল্যের ক্যান্সার চিকিৎসা ও বায়োটেক ওষুধের ক্ষেত্রে। এই পরিবর্তন উৎপাদন ব্যয় বাড়াবে, পণ্যের পরিসর সংকুচিত করবে এবং গবেষণা-উন্নয়ন ও আধুনিক প্রযুক্তিতে ভারী বিনিয়োগ প্রয়োজন করবে। তাই ব্যবসায়িক মহলের অবস্থান স্পষ্ট—‘আমরা উত্তরণকে সমর্থন করি, কিন্তু প্রস্তুতির জন্য আমাদের সময় প্রয়োজন।’
এ সময় ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের আন্দোলনের পর থেকে বাংলাদেশ উচ্চ বৈদেশিক ঋণ, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে। ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত অস্থিতিশীলতা ব্যবসায়িক আস্থাকে গুরুতরভাবে প্রভাবিত করেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের পতন। ২০২৪ সালে নেট এফডিআই হয়েছে ১ দশমিক ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০২৩ সালের ১ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৩ শতাংশের কম। এই প্রেক্ষাপটে ব্যবসায়ী নেতারা ৩-৫ বছরের সময়সীমা বাড়ানোর দাবি জানান।
তারা বলেন, ৩-৫ বছর সময়সীমা বাড়ানো দরকার, যাতে আরও ভালো বাণিজ্য চুক্তি করা যায়, পোশাকের বাইরে রপ্তানিকে বহুমুখী করা যায়—অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা কমাতে ওষুধ, আইটি সেবা, কৃষি-প্রক্রিয়াজাতকরণ, চামড়া ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাত গড়ে তোলা যায়। ইন্ডাস্ট্রি ৪.০-এর জন্য মানবসম্পদ তৈরি করা যায়—যেখানে কর্মশক্তিকে অটোমেশন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং আধুনিক উৎপাদন দক্ষতায় প্রশিক্ষিত করা হবে। মানসম্পন্ন এফডিআই বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা যায়, যারা প্রযুক্তি, বৈশ্বিক সংযোগ এবং টেকসই প্রক্রিয়া নিয়ে আসবে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা এবং জলবায়ু সহনশীলতা বাড়ানো যাবে—যেখানে স্বচ্ছ শাসনব্যবস্থা ও জলবায়ু-সহায়ক পরিকল্পনা প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ধরে রাখতে সহায়তা করবে।
আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন থার্ড ওয়ার্ল্ড নেটওয়ার্কের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার ও জ্যেষ্ঠ গবেষক সানয়া রেইদ স্মিথ।
সেমিনারে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বক্তৃতা করেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ, তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার, বহুজাতিক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক (এসসিবি) বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও আইসিসি বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট নাসের এজাজ বিজয়, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাসকিন আহমেদ, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আব্দুল মোক্তাদির।
এ ছাড়া অর্থনীতিবিদ ও গবেষকদের মধ্যে বক্তব্য দেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান জাইদি সাত্তার, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান এবং পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ।
সুত্র:বণিক বার্তা