থেমে নেই রোহিঙ্গা আসা, আবারও ২০০ রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ


মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতার চার মাস অতিবাহিত হলেও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ থেমে নেই। একদিকে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা চলছে।
অপরদিকে রাখাইন রাজ্যে মগ সেনাদের নির্যাতন ও পুরুষদের ধরে নিয়ে বিনা বেতনে শ্রমিক খাটানোর অভিযোগে এখনো প্রতিদিন সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পালিয়ে আসছে রোহিঙ্গা। গতকাল বুধবার ভোরে রাখাইনের বুছিডং থানার দুই শতাধিক রোহিঙ্গা টেকনাফের সদর ইউনিয়নের মহেশখালীয়া পাড়া সৈকত পয়েন্ট দিয়ে এপারে ঢুকেছে।
তারা সকলে টেকনাফ বাস স্টেশনে এসে জড়ো হলে প্রতিবেদকের কথা হয় এসব রোহিঙ্গাদের সঙ্গে। বুছিডং থানার ছিনদিপ্রাং গ্রামের রোহিঙ্গা ছৈয়দ আলমের পুত্র আবু ছৈয়দ (৩৫) জানান, ১২ই জানুয়ারি ভোর রাতে বাড়ি থেকে বের হয়ে পাহাড়, বিল অতিক্রম করে এপারে আসার জন্য মিয়ানমার সীমান্তে পৌঁছে।
আসার সময় সেনারা তাদের টাকা, স্বর্ণালংকার কেড়ে নিয়ে এপারে আসতে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা করেনি। তিনি আরো জানান, সেনারা পুরুষদের ধরে নিয়ে পারিশ্রমিক ছাড়া কাজ করাচ্ছে।
অন্য কোথাও কাজ করা যাচ্ছে না। ফলে স্ত্রী, সন্তানরা অর্ধাহারে অনাহারে দিনাতিপাত করেছে। তাই আবারো ধরে নিয়ে যাওয়ার ভয়ে এপারে আশ্রয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছি। একই এলাকার সনজিদা বেগম (৩০) জানান, তার স্বামীকে সেনারা ধরে নিয়ে ১০ দিন ধরে বন্দি রেখে কাজ করিয়েছে। কিন্তু কোনো পারিশ্রমিক দেয়নি। এতদিন ঘরের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে ছিলাম।
পালিয়ে আসা সকল রোহিঙ্গার একই অভিযোগ। নুরে জান্নাতের কোলে দুই মাসের ফুটফুটে শিশু। সে জানায়, এপাড়া থেকে ওপাড়া পালিয়ে অনেক সহ্য করে এতদিন নিজের দেশের মাটি আঁকড়ে ধরেছিলাম। কিন্তু বর্বর মগ সেনাদের বিভিন্ন কৌশলে নির্যাতন-নিপীড়ন থামছে না। কাজ কর্ম না থাকায় চরম খাদ্য সংকটে থেকেছি।
অবশেষে ক্ষুদার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে এদেশে আশ্রয়ে চলে আসতে বাধ্য হয়েছি। পুঁইমালি গ্রামের ফয়েজুর রহমান জানান, তারা একসঙ্গে ৩০ জন এসেছি। তিনি জানান, পাঁচদিন হেঁটে পাহাড়ি ও বিল অতিক্রম করে মিয়ানমার সীমান্তের কাঁটাতারের বেরা পার হয়ে নাইক্ষ্যংদিয়া সীমান্তে নৌকার অপেক্ষায় থেকেছি। পরে নৌকা পেয়ে জনপ্রতি ৫০ হাজার কিয়াতের বিনিময়ে এপারে ঢুকেছি।
টেকনাফ বাস স্টেশনে অবস্থান করা টেকনাফ মডেল থানার এএসআই রিংকন জানিয়েছেন, সকাল সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত তিনি ৯১ জন রোহিঙ্গাকে রেজিস্ট্রেশন তালিকায় লিপিবদ্ধ করেছেন। পরে তাদের সকলকে বালুখালী ও কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠিয়ে দিয়েছেন।