ঘরমুখী মানুষের উপচে পড়া ভিড়
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা হতে উভয় দিকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার যানজট


ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড়। দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে প্রতিদিন প্রায় ২৬ টি জেলার সহস্রাধিক যানবাহনসহ লক্ষ লক্ষ মানুষের যাতায়াত ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার চন্দ্রা ত্রিমোড় হতে। আর ঈদ উপলক্ষে এই যাত্রার যাত্রীর সংখ্যা যেন বেড়ে হয়েছে কয়েক গুণ। নাড়ির টানে মানুষের বাড়ি ফেরা তার মধ্যে আবার মুসলমান ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদুল আযহা। এই ঈদকে কেন্দ্র করে সবারই ইচ্ছা থাকে গ্রামের বাড়ি গিয়ে মা-বাবার সাথে পশু কুরবানী করার। তাই শত কষ্ট হলেও যে কোন কিছুর বিনিময়ে শত শত কিলোমিটার রাস্তা ও নদ-নদী পাড়ি দিয়ে তবুও যেন বাড়ি যেতে হবে এমনটা আশঙ্কা সবার মাঝেই বিরাজ করে।
আজ মঙ্গলবার ভোররাত থেকেই ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাজীপুরের চন্দ্রা ত্রিমোড় ও আশপাশের এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। থেমে থেমে যানবাহন চলাচল করছে। এ ছাড়া যানবাহন না পেয়ে ঘরমুখী শত শত মানুষকে চন্দ্রা বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। উভয় দিকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। দিন যতই গড়াচ্ছে যানজটের তীব্রতা যেন ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে ভোগান্তিতে পড়ছে ঘরে ফেরা অসংখ্য যাত্রী।
এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সড়কে স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই বললেই চলে। দূরপাল্লার যানবাহনগুলো স্বাস্থ্যবিধি কিছুটা মানলেও ছোট পরিবহনগুলো তা একেবারেই মানছে না। মানুষ ঠাসাঠাসি করে যে যেভাবে পারছে চলাফেরা করছে। অধিকাংশ যাত্রীদের মুখে দেখা যায়নি মাস্কও।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকা থেকে গাজীপুরের কড্ডা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার, চন্দ্রা-নবীনগর সড়কের নবীনগর পর্যন্ত এবং টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। মাঝখানে চন্দ্রা হতে কড্ডা পর্যন্ত যানজট কমলেও এখন আবার তিব্র যানজট সৃষ্টির প্রবণতা দেখা দিচ্ছে।
চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকার আশেপাশে শিল্প-কারখানার শত শত শ্রমিক বাড়ি যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণ যানবাহন না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। মহাসড়কের যানজট নিরসনে বিভিন্ন পয়েন্টে থানা-পুলিশ, ট্রাফিক-পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ দায়িত্ব পালন করলেও যানজটের কাছে অসহায় হয়ে পড়ছেন তারা। চন্দ্রা ত্রিমোড় পার হওয়ার একমাত্র উড়াল সড়কটিও যানজটে স্থবির হয়ে নাকাল হয়ে পড়েছে।
চন্দ্রা বাসের অপেক্ষায় থাকা পাবনা এলাকার বাসিন্দা খোকন বলেন, ভোর পাঁচটায় চন্দ্রা এসেছি কিন্তু যানবাহনের সংকটের কারণে স্ত্রী-সন্তান ও মাকে নিয়ে ব্যাপক বিপাকে পড়েছি যাওয়ার মত কোন উপায় পাচ্ছি না।
চন্দ্রা ত্রিমোড়ে স্বপন নামের একজনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, কোনাবাড়ী হতে চন্দ্রা পর্যন্ত আসতে আমার তিন ঘন্টা সময় লেগে গেল। যেখানে মাত্র আধা ঘন্টায় আসতে পারতাম।
ট্রাকের উপরে বসে থাকা বৃষ্টিতে ভেজা শাহজাহান নামের এক যাত্রীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, গরু বিক্রি করে ট্রাক ফিরছেন উত্তরবঙ্গে যেহেতু আমি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর যাব তাই গাড়ি না পেয়ে আমি ট্রাকে করেই বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত করেছি। গাড়ি পাচ্ছিনা তাই বৃষ্টিতে ভিজলেও কিছু করার নেই বাড়ি যেতেই হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল সোমবার দুপুরের পর থেকে সড়কে যানবাহনের চাপ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এ কারণে যানজট পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। অনেকেই বলছেন, টাঙ্গাইলের যমুনা সেতু থেকে যানজট শুরু হয়ে চন্দ্রা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এদিকে বৃষ্টির কারণে যানবাহনগুলো গতি পাচ্ছে না। এতেও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
কোনাবাড়ী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর গোলাম ফারুক বলেন, সড়কের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। চন্দ্রা থেকে নবীনগর ও টাঙ্গাইল রোডের গোড়াই পর্যন্ত উভয় দিকে এই যানজট দেখা যাচ্ছে। তবে চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইলের দিকে যানজট তুলনামূলকভাবে একটু কম মনে হচ্ছে। যানজটে আটকা পড়ে ঘরমুখী মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।