নাটোরে টানা লোকসানে কমে যাচ্ছে রসুন চাষ

ফিরোজ আহমেদ, নাটোর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৪:৫৫ এএম, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০১৯ | ৭১২

বড়াইগ্রামসহ নাটোর জেলায় উৎপাদিত রসুনেই দেশের মোট চাহিদার ২০-২৫ ভাগ মেটে। কিন্তু এখানকার চাষিরা ন্যায্যমূল্য না পেয়ে কয়েক বছর ধরে টানা লোকসান গুনছেন। এতে তারা রসুন চাষ ছেড়ে দিচ্ছেন। এতে জেলায় কমে গেছে রসুন উৎপাদনের পরিমাণ। এ অবস্থায় দেশের সবচেয়ে বেশি রসুন উৎপাদনকারী জেলার গৌরব হারাতে বসেছে নাটোর। চীন ও ভারত থেকে ব্যাপক হারে আমদানি করায় দেশি রসুনের দাম অস্বাভাবিক কমে গেছে বলে মনে করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রসুনের মোট চাহিদার ২০-২৫ ভাগই উৎপাদিত হয় নাটোর জেলায়। ২০১৮ সালে জেলায় ২৮ হাজার ২২৫ হেক্টর জমিতে রসুন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু আগের বছর রসুনের দাম কম পাওয়ায় রসুন চাষ হয় ২৫ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে। সে রসুন মণপ্রতি ৬০০-৮০০ টাকা দরে বিক্রি হওয়ায় চাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হন।

পরের বছর কৃষি বিভাগ রসুন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরে ২৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু এবার চাষিরা আরও কমিয়ে মাত্র ১৮ হাজার ৯৮০ হেক্টর জমিতে রসুন চাষ করেন। এবার মূল্য কিছুটা বেড়ে মণপ্রতি ১০০০-১৫০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তাতেও রসুনের উৎপাদন খরচের অর্ধেকও উঠছে না।

সোমবার বড়াইগ্রাম পৌর সদরের লক্ষ্মীকোল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, শ’ শ’ চাষী রসুন নিয়ে বিক্রির অপেক্ষায় বসে আছেন। কিন্তু দাম না থাকায় বস্তা নিয়ে হতাশভাবে দাঁড়িয়ে আছেন তাঁরা। জানতে চাইলে রসুন বিক্রেতা রয়না গ্রামের আবু বকর মন্ডল জানান, বিঘা প্রতি রসুন চাষে যে খরচ হয়েছে, রসুন বিক্রি করে সে টাকা তোলাই দায় হয়ে পড়েছে। হাটে প্রতি বস্তা রসুন ১০০০-১৫০০ টাকা দাম বলছে।

মামুদপুর গ্রামের ইউসুফ আলী জানান, প্রতি বিঘা জমিতে রসুন চাষে ব্যায় হয়েছে ৩০-৩৫ হাজার টাকা। কিন্তু বর্তমানে যে দাম, তাতে উৎপাদণ খরচই উঠবে না। এভাবে বছর বছর লোকসান দিয়ে কি আবাদ করা যায়।

জালশুকা গ্রামের খোরশেদ আলম পূর্ণি জানান, রসুন চাষে বেশি শ্রমিক লাগে। জনপ্রতি শ্রমিকের মজুরি ৩৫০-৪০০ টাকা। সার, ওষুধ, বীজের দাম মিলিয়ে প্রতি মণ রসুনে খরচ পড়ে প্রায় দেড়-দুই হাজার টাকা। এবার প্রতি বিঘা জমিতে রসুন হয়েছে ২৫-৩০ মণ। এটা বাম্পার ফলন হলেও তুলনামূলক দাম না পাওয়ায় লোকসান থেকেই যাচ্ছে। প্রতি মণ রসুন ৩ হাজার টাকা দরে বিক্রি হলে রসুন চাষে লাভ হওয়া সম্ভব বলে তিনি জানান।

বড়াইগ্রামের কৃষক নেতা ডিএম আলম জানান, সরকারীভাবে রসুন ক্রয় ও কেজি প্রতি দাম নির্ধারণ করাসহ দেশে উৎপাদিত রসুনের পরিমাণের সাথে সমন্বয় করে শুধু অবশিষ্ট পরিমাণ আমদানী করা হলে কৃষকেরা রসুনের ন্যায্য দাম পাবেন। বড়াইগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইকবাল আহমেদ বলেন, এ বছরও রসুনের অর্ধেক দাম পাচ্ছেন কৃষকেরা। এভাবে চললে এই এলাকা থেকে রসুন চাষ বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, জেলার মধ্যে বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি রসুন চাষ হয়। বিনা হালে রসুন উৎপাদনের উদ্ভাবক এই এলাকার চাষিরা। তাই তাঁদের রসুন উৎপাদনে উৎসাহিত করতে কৃষি বিভাগ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এবার ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। তবে দাম কম হওয়ায় হতাশার মধ্যে রয়েছেন তারা।