নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে ২০ দলের সংশয়

আলোকিতপ্রজন্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৩৪ পিএম, বৃহস্পতিবার, ১৫ নভেম্বর ২০১৮ | ৪০৮

সারাদেশ অনিশ্চয়তা ও আতঙ্কের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে নির্বাচন আদৌ হবে কিনা, কিংবা সব দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে ২০ দলীয় জোট৷

বৃহস্পতিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ২০ দলের বৈঠক হয়। বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে জোটের অন্যতম নেতা ও এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অবঃ) অলি আহমেদ এই সংশয় প্রকাশ করেন।

অলি আহমেদ বলেন: ‘সমগ্র দেশ আজ অনিশ্চয়তা ও আতঙ্কের মধ্যে যাচ্ছে৷৷ এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও ২০ দলের পক্ষ থেকে আমাদের প্রয়াস ছিলো দেশের মানুষের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা এবং জনগণের ভোট নিশ্চিত করা৷ কিন্তু এখন নির্বাচন হবে কিনা, আমরা অংশগ্রহণ করব কিনা তা সরকারের আচরণের উপর নির্ভর করছে। কারণ এই নির্বাচন কমিশনের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।’

তিনি বলেন: গতকাল ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন কমিশনে গিয়ে নির্বাচন ৩ সপ্তাহ পেছানোর দাবি জানানোর পর নির্বাচন কমিশনের কাছে অনেকদিন পর সাহসী বক্তব্য পেলাম। কিন্তু একটু পরই আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিরা নির্বাচন কমিশনে যায় এবং কমিশনকে আঙ্গুল উঁচিয়ে বলে, নির্বাচন একদিনও পেছানো যাবে না।

‘নির্বাচন কমিশনের সাথে এমন আচরণ থেকে আমরা কি মনে করবো নির্বাচন কমিশন স্বাধীন নয়? নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণাধীন?’, বলেন কর্নেল অলি আহমেদ।

তার অভিযোগ, ‘গতকাল পুলিশ বিনা উস্কানিতে নয়াপল্টনে হামলা চালায়। এতে নারী পুরুষ সহ ৬০-৭০ জন আহত হয়। পুলিশের টিয়ারশেলের আঘাতে হাসপাতালে আছে অনেকে। বিএনপি নেতা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, আনিসুজ্জমান খান বাবুসহ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। অথচ হেলমেটধারী একদল যুবক এসে পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই হেলমেট বাহিনী নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে কোমলমতি শিশুদের উপর হামলা করেছিলো। যে যুবক পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে সে ছাত্রলীগ নেতা বলে অনেকে বলেছে।’

তিনি বলেন: এর আগে আওয়মাী লীগের মনোনয়ন বিক্রির সময় কোনো আচরণবিধি লংঘন হয়নি। কেউ বাধা দেয়নি। কিন্তু বিএনপি কার্যালয়ের সামনে মানুষের ঢল দেখে বাধা দেয়া হয়েছে। এটা কেন করা হলো?

‘সরকারি দলের এমপি মন্ত্রীদের নির্বাচনী কাজে পুলিশ সহযোগিতা করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে নির্বাচনী প্রচারণা চালান। অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কোনো গণতান্ত্রিক দেশে রাজনৈতিক বক্তব্য মিডিয়ায় প্রকাশ করা যাবে না এমন কোনো নিয়ম নাই। বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে তার নেতৃবৃন্দের বক্তব্য বঞ্চিত করা হচ্ছে। এভাবে তো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হতে পারে না।’

অলি আহমেদ আরো বলেন, ‘এমন অবস্থা চলতে থাকলে নির্বাচন আমরা কববো কিনা কিংবা আমি বলবো সরকার নির্বাচন করতে দেয় কিনা তা নিয়ে সন্দিহান আমরা। তারা ক্ষমতায় থেকে এতো বেশি অপকর্ম করেছে, যার কারণে ভয়ে থাকে। অন্যরা নির্বাচন করে ক্ষমতায় চলে এলে তাদেরও কারাগারে যেতে হবে। এ কারণে সরকার চায় না আমরা নির্বাচন করি। কিন্তু দেশবাসীকে বলবো, এবার মুক্তিযুদ্ধের মতো ভোটযুদ্ধে নামুন, এটা সবার দায়িত্ব৷ কেউ যদি মনে করে আমরা মাঠ ছেড়ে পালিয়ে যাবো তা ভুল হবে। মুক্তিযোদ্ধারা মাঠ ছেড়ে পালায় না।’

এসময় তিনি আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আওয়ামী লীগ মনোনীত সভাপতিদের প্রত্যাহার করে নিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০ দলের মুখপাত্র নজরুল ইসলাম খানসহ ২০ দলীয় জোটের প্রতিনিধিরা।