কক্সবাজার -০১ দু'ডজন প্রার্থী দলীয় মনোনীয়ন ফরম নিয়ে দেশের শীর্ষ স্থানে

চকরিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০১:১৮ পিএম, মঙ্গলবার, ১৩ নভেম্বর ২০১৮ | ৪৫৫
কক্সবাজার -০১ ( চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীয়ন ফরম নিয়েছে দু'ডজন প্রার্থী। বাংলদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডি ৩নং কার্যালয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত জহিরুল ইসলাম জানান ১২ নভেম্বর পর্যন্ত ২৪ জন প্রার্থী দলীয় মনোনীয়ন ফরম ক্রয় করেছেন।
 
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসি’র ঘোষিত তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে জাতীয় সংসদের আসন নং ২৯৪, কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের হিড়িক পড়েছে। এরমধ্যে অনেকেরই ছিলো না নির্বাচনী এলাকায় জনসাধারণের সাথে সম্পৃক্ততা।
 
আবার কেউবা ছিলেন এ্যাড সাইন কিংবা ফেষ্টুন ব্যানারে সরগরম। তবে সাধারণ ভোটারদের প্রত্যাশা একটায় যিনি সবসময় সুখে-দুঃখে মাঠে ময়দানে অতীতেও ছিলেন ভবিষ্যতেও দেখা মিলবে এমন যোগ্য প্রার্থী মনোনীত হউক। সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে একদিকে যেমন চলছে উৎসবের আমেজ পক্ষান্তরে চলছে নানা গুঞ্জন।
 
তবে শেষপর্যন্ত অপেক্ষার প্রহরে রয়েছেন নির্বাচনী এলাকা (চকরিয়া-পেকুয়া) নৌকা, ধানের শীষ, লাঙ্গল কিংবা অন্যান্য প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে কে কে লড়ছেন।
 
এ নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার ঢাকার ধানমন্ডীস্থ রাজনৈতিক কার্যালয় হতে সারাদেশের ন্যায় কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) থেকে আসা মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মনোনয়ন পত্র ফি: জমা দিয়ে দলীয় ফরম সংগ্রহ করেছেন। 
 
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, চকরিয়া উপজেলায় ১৮টি ইউনিয়নের ৯৯টি ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে এক লাখ ৪৮ হাজার ৮০৫ জন পুরুষ ও এক লাখ ৩৫ হাজার ৬০৬ জন নারী মিলিয়ে ভোটার রয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৪১১ জন। পেকুয়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ৪০ ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে ৫৫ হাজার ৬২০ জন পুরুষ ও ৫০ হাজার ৬৫০ নারীসহ ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৬ হাজার ২৭০ জন। সর্বমোট ভোটার সংখ্যা ৩লাখ ৯০ হাজার ৬৮১জন
 
প্রাপ্তসূত্র তথ্যে জানা গেছে, জাতীয় সংসদের আসন নং ২৯৪, কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে সোমবার পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ১৬জন মনোনয়ন প্রত্যাশী। তারা হলেন; কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপি, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জাফর আলম বিএ(অনার্স)এমএ, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম, সহসভাপতি এডভোকেট আমজাদ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক খালেদ মোহাম্মদ মিথুন, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এটিএম জিয়াউদ্দিন চৌধুরী জিয়া, চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মিজানুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য উম্মে কুলছুম মিনু, জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবকল্যাণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম সজিব, মাতামুহুরী সাংগঠনিক থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহসিন বাবুল, যুক্তরাজ্য আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা এডভোকেট ফয়াসাল উদ্দিন সিদ্দিকী, চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু, পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম, চকরিয়া পৌরসভা যুবলীগের সিনিয়র সহসভাপতি এম খলিল উল্লাহ চৌধুরী। সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সরওয়ার আলম, সুরাজপুর-মানিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক ও শফিউল আলম বাহার।
 
মনোনয়নপত্র সংগ্রহের ৪র্থ দিন পর্যন্ত ২৪ জন প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও দলীয় মনোনয়ন বোর্ড যাকেই নৌকা প্রতীকে দলীয় মনোনয়ন দেবেন তার পক্ষে নৌকার বিজয়ে সর্বোচ্চ ত্যাগ শিকার করে কাজ করবেন। বিশেষ করে তিনি এলাকায় রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে যিনি সরকার বিরোধী পক্ষকে দমন করেছেন তাকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য নেত্রীর প্রতি আহবান জানান।
 
অপরদিকে মহাজোট থেকে এই আসনটি চায় শরীকদল জাতীয় পার্টি (এরশাদ) বর্তমান সাংসদ হাজী মোহাম্মদ ইলিয়াছ, জাতীয় পার্টি (জেপি) প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক এমপি ও জেলা চেয়ারম্যান এএইচ সালাহউদ্দিন মাহমুদ এবং ওয়ার্ককাস পার্টি হাজী আবু মো: বশিরুল আলম।
 
এদিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে আসার ঘোষণা দেওয়ায় নির্বাচনের মোড় অন্যদিকে ঘুরে গেছে। 
 
উল্লেখ্য, বিগত ২০১৪ সনের নির্বাচনে বিএনপি জোট নির্বাচনে না আসায় চকরিয়া-পেকুয়ার এই আসন থেকে বিনাপ্রতিদ্বন্ধীতায় এমপি নির্বাচিত হন মহাজোটের অন্যতম শরীকদল জাতীয় পার্টির আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইলিয়াছ।
 
ইতোপূর্বে বিগত ৩টি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন আওয়ামী লীগের সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপি। ওই সময়ে এই আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়ে আসছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদ ও তার স্ত্রী এডভোকেট হাসিনা আহমদ।
 
বিগত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভ করেছিলেন চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম। পরবর্তীতে আসন ভাগাভাগির কারণে মহাজোটের শরীকদল জাতীয় পার্টিকে এই আসনটি ছেড়ে দেন আওয়ামী লীগ।
 
এই আসনে জাপা থেকে মনোনয়ন পান জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হাজী মোহাম্মদ ইলিয়াছ। ওই নির্বাচনে বিএনপি না আসায় বিনা ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এবারও তিনি মহাজোট থেকে মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে এলাকায় গুঞ্জন রয়েছেন। এদিকে মাঠে ময়দানে চসে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের অন্যতম মনোনয়ন প্রত্যাশী উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম।
 
তিনিও এবারে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে মরিয়া হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাবেন এমনটা মনে করছেন নেতাকর্মীরা। এছাড়াও মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ সিআইপি, জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ড. আশরাফুল ইসলাম সজিব। নেতারা মনোনয়ন পেতে জোর লবিং চালাচ্ছেন বলে জানান সমর্থকরা। এসব প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
 
তবে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাশীরা জানিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী বা মহাজোট যাকে মনোনয়ন দিবেন তার পক্ষে মাঠে কাজ করবেন।