পঞ্চগড়ে উনিশ শতকের শিব মন্দির আজ ধ্বংসের মুখে

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৬:০৩ পিএম, শনিবার, ২০ অক্টোবর ২০১৮ | ৫৭০
উনিশ শতকের প্রথম দিকে এই অঞ্চলটি পর্যায়ক্রমে শাসিত হয়েছে প্রাগ জ্যোতিষ, কামরূপ, কামতা, কুচ বিহার ও গৌর রাজ্যের রাজা, বাদশা, সুবাদার এবং বৈকুণ্ঠপুর অঙ্গ রাজ্যের দেশীয় রাজা ও ভূস্বামীদের কাছে।
 
দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতকের মধ্যে রাজা শালিবাহন, রাজা পৃথু এবং রাজা জল্লেশ পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া উপজেলার শালবাহান ও জেলার ভেতরগড় এলাকায় রাজ্য ও সমৃদ্ধ অঞ্চল গড়ে তুলেছিলেন। 
 
সে সময়ের কয়েকটি মন্দির পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া সদরের পুরাতন বাজার এলাকাজুড়ে রয়েছে। এদের মধ্যে শিব, কালি মন্দিরগুলি সনাতন ধর্মালম্বীদের কাছে খুবই তাৎপর্য বহন করে। হাজার বছরের গৌরবগাথা ও প্রাচীন ইতিহাস ঐতিহ্যের অগণিত স্মৃতিমণ্ডিত এই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উপাসনালয়গুলো আজ অবহেলা অযত্নে কালের তলে হাড়িয়ে যেতে বসেছে।
 
পঞ্চগড় তেতুলিয়া সদরের পুরাতন বাজার সংলগ্ন মহানন্দা নদীর তীরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় এই শিব মন্দিরটি অবস্থিত।
 
এলাকাবাসী ও সনাতন ধর্মীয় লোকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আনুমানিক মন্দিরগুলো ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে তৈরি হতে পারে। এটি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের খুব কাছে মন্দিরটি নির্মিত হয়।
 
১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে এ এলাকায় জনবসতি কম ছিল কিন্তু সনাতন ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজাসহ অন্য পূজাও ধুমধাম করে পালন করা হত। আর সেই উৎসবে সবাই মাতে। ঢাকের তালে তালে আনন্দে মেতে উঠতো। সুসজ্জিত প্রতিমাগুলো মন্দিরে মন্দিরে শোভা পেতো।
 
এলাকাবাসী ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক সূবর্ণ কেতু দাস (৬৫) বলেন, বর্তমানে অবহেলার কারণে মন্দিরটি ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। তাছারা সীমান্ত এলাকায় হওয়ায় ধর্মীয় লোকেরা সেখানে গিয়ে পূজা দিতে সংকোচ বোধ করেন। বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। এই শিব মন্দিরটি ১৯১০ সালে নির্মিত হতে পারে।
 
তেতুলিয়া সার্বজনীন শিব মন্দির কমিটির সভাপতি শ্রী বিমল চন্দ্র সেন (৭০) বলেন, তেতুলিয়ায় বেশ কয়েকটি মন্দির রয়েছে যেমন- ২ শিব মন্দির, ১ কালি মন্দির। এদের মধ্যে ১টি শিব মন্দিরে পূজা অর্চনা হয়ে থাকে। তবে অবহেলা অযত্নের কারণে পুরাতন বাজার সংলগ্ন কালী মন্দির ও শিব মন্দিরটি দিন দিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। যদি এ অবস্থায় এটির সংরক্ষণ করা না যায় তাহলে পরবর্তী প্রজন্ম কি দেখবে। তাই এটির সংরক্ষরণের দাবি জানায়।
 
তেতুলিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব রেজাউল করিম শাহিন বলেন, উপজেলায় বেশ কয়েকটি পুরোনো মন্দির রয়েছে। তবে সদরের ১টি শিব মন্দির ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় মেরামত ও রং এর কাজ করা হয়েছে।
 
বর্তমানে মন্দিরটি আছে কিন্তু কার্যক্রম বা লোকজন বলতে গেলে কেউ নেই। সীমান্ত সংলগ্ন হওয়ায় সেখানে আর কেউ পূজা দিতে যায় না। এখন এই মন্দিরের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। মন্দিরটির সংস্কারের প্রয়োজন।
 
এমএমআর/আমিরুল ইসলাম