সখীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অস্ত্রোপচার ও জরুরি প্রসূতিসেবা বন্ধ

সজল আহমেদ, সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৩:০৩ পিএম, বুধবার, ৩ অক্টোবর ২০১৮ | ১৯১

দীর্ঘদিন ধরে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি বিভাগের চিকিৎসক না থাকায় জরুরি প্রসূতি সেবা ও সিজার অপারেশন বন্ধ রয়েছে। ফলে জরুরি প্রসূতি মা ও মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার প্রকল্পের (ডিএসএফ) আওতায় গরিব কার্ডধারী রোগীরা বিনামূল্যে সেবা থেকে হচ্ছেন বঞ্চিত। তারা এক প্রকার বাধ্য হয়েই স্থানীয় ক্লিনিকে সাধ্যের বাইরে টাকা খরচ করে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মা হচ্ছেন।

জানা যায়, দেড় বছর আগে জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি) তাজমিরা সুলতানা সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দেন। তিনি রাজধানী ঢাকা থেকে সপ্তাহে ২/৩ দিন হাসপাতালে আসতেন। গত ১৯ আগস্ট তিনি হঠাৎ করেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলি হন। এরপর থেকে গাইনি বিভাগের চিকিৎসক না থাকায় জরুরি প্রসূতি মায়েদের সব ধরনের সেবা ও অস্ত্রোপচার বন্ধ রয়েছে।

হাসপাতালের হিসাব সহকারী কাম অফিস সহকারী মিজানুর রহমান বলেন, ব্রিটিশ সরকারের অর্থায়নে সখীপুর হাসপাতালে ১৩ বছর ধরে মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার প্রকল্প (ডিএসএফ) চালু আছে। এই প্রকল্পের আওতায় কার্ডধারী একজন গরিব ও অসহায় প্রসূতি মা হাসপাতালে সাধারণ প্রসব হলে ৫০০টাকা, অস্ত্রোপচার হলে দুই হাজার টাকা, অস্ত্রোপচারের সব ধরনের ওষুধ, প্রসবের আগে হাসপাতালে চিকিৎসকের সেবা নিতে আসা ভাড়া বাবদ প্রতিবার ১০০ টাকা হারে পাঁচবারে ৫০০ টাকা, শিশু খাদ্য, কাপড়-চোপরসহ নানা সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। কিন্তু হাসপাতালে গাইনি চিকিৎসক না থাকায় সাধারণ প্রসব ও অস্ত্রোপচার বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে কার্ডধারী মায়েরা বাধ্য হয়ে স্থানীয় ক্লিনিকে টাকা খরচ করে অস্ত্রোপচার করছেন।

উপজেলার কাকড়াজান গ্রামের ভ্যানচালক জসীম উদ্দিন তাঁর স্ত্রীর জন্য ওই প্রকল্পের কার্ড করেছেন। তাঁর স্ত্রী প্রসবকালীন ব্যাথা উঠলে তাঁকে দ্রæত সখীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা গাইনি চিকিৎসক নেই বলে জানিয়ে দিলে বাধ্য হয়ে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ভর্তি করে। পরে ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মা হন ওই ভ্যানচালকের স্ত্রী।

জসীম উদ্দিন জানান, হাসপাতালে প্রসব করালে আমি উল্টো টাকা পেতাম। কিন্তু ক্লিনিকে করানোর কারণে অপারেশন বাবদ আট হাজার, ওষুধবাবদ ছয় হাজারসহ সব কিছু মিলে ১৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ওই টাকা আমাকে স্বজনদের কাছ থেকে ধার আনতে হয়েছে।

হাসপাতালের জেষ্ঠ সেবিকা শিরিন আক্তার জানান, গাইনি চিকিৎসক থাকলে মাসে কমপক্ষে ৫০টি সাধারণ প্রসব ও কমপক্ষে ৩০টি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসব হতো। একমাস আটদিন ধরে ওই চিকিৎসক চলে যাওয়ায় সাধারণ প্রসব কয়েকটা হলেও অস্ত্রোপচার একবারেই বন্ধ হয়ে গেছে।

গাইনি সেবা ও সিজার অপারেশন (অস্ত্রোপচার) বন্ধ থাকার কথা স্বীকার করে সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, মহাপরিচালকের দপ্তর থেকে আসা গাইনি চিকিৎসক তাজমিরা সুলতানার বদলির পরিপত্রে আরেকজন গাইনি চিকিৎসক দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে এ হাসপাতালে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বিষয়টি আমি টাঙ্গাইল সিভিল সার্জন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানিয়েছি। আশা করছি শিগগিরই গাইনি চিকিৎসক পাওয়া যাবে।