নাটোরে আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে

মাথা গোজার ঠাঁই হচ্ছে দেড় সহস্রাধিকের

নাটোর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০২:৩৬ পিএম, রোববার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | ৪৩৫

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চরবালশা গ্রামের বিধাব খায়রুন বেওয়া-একদিন যার স্বামী ছিল, আবাদী জমি ছিল, সংসারে প্রাচুর্য না থাকলেও স্বাচ্ছন্দ ছিল। স্বামী মারা যাওয়ার পরে কপাল পোড়ে খায়রুন বেওয়ার। জমিজমা ভাগ করে নিয়ে ছেলেরা যার যার মত সংসার শুরু করে।

অন্যদিকে বয়সের ভারে নুব্জ একাকী খায়রুন বেওয়ার শুরু হয় কষ্টে ভরা অনিশ্চয়তার জীবন। অন্যেও বাড়ীতে কাজ করে, কখনো সন্তানদের দয়া দাক্ষিন্যে পেট চললেও মাথা গোজার ঠাঁই ছিলনা। বাগাতিপাড়া উপজেলার ঠেঙ্গামারা গ্রামের গরীব রডমিস্ত্রি নুর ইসলাম স্কুল পড়ুয়া দুই মেয়েকে নিয়ে থাকতেন পাট কাঠির বেড়া আর ছনের চালার ছোট্র একটা ঘরে। বৃষ্টি হলেই ছনের চালার ফাঁক ফোকড় দিয়ে ঘরের মধ্যে নেমে আসে পানি।

এই সময়ে মেয়েদের নিয়ে অসহায় পিতার আশ্রয় হয় প্রতিবেশীর বাড়িতে। এসব অসহায় মানুষ-যাদের এক খন্ড জমি আছে, কিন্তু মাথা গোজার ঠাঁই নেই-তাদের জন্যে এগিয়ে এসেছে সরকার। সারাদেশের মত নাটোরেও বাস্তবায়িত হচ্ছে আশ্রয়ন প্রকল্প-২। প্রকল্পের মাধ্যমে নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে এক লাখ টাকার একটি করে বসত বাড়ী।

প্রথম পর্যায়ে নাটোর জেলায় নির্মাণ করা হচ্ছে এক হাজার ৬২০টি বাড়ী। প্রকল্পের মাধ্যমে উপকারভোগীদের জন্যে তৈরী করে দেওয়া হচ্ছে-২৯৭ বর্গফুটের বারান্দাসহ টিনের একটি ঘর আর পাশেই টয়লেট। প্রতিটি বাড়ীর উপকরনসহ নির্মাণ খরচ এক লাখ টাকা। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে সদস্য সচিব হিসেবে আছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এবং উপজেলা প্রকৌশলী, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।

যে ব্যক্তির এক থেকে ১০ শতাংশ জমি আছে, কিন্তু ঘর নেই অথবা থাকলেও জরাজীর্ণ বাবসবাসের অনুপযোগী-এমন দুঃস্থ ব্যক্তি, অসহায় মুক্তিযোদ্ধা, বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্তা, প্রতিবন্ধী, উপার্জন অক্ষম ব্যক্তি, ভিক্ষুক, অতিবার্ধক্য ব্যক্তি প্রকল্প সুবিধা পাচ্ছেন। নাটোর জেলায় প্রকল্প সুবিধাপ্রাপ্তদের মধ্যে নাটোর সদর ও নলডাঙ্গা উপজেলায় ৪০০জন ব্যক্তি, সিংড়া উপজেলায় ২৯৩, লালপুরে ১৫৭, বড়াইগ্রামে ১৪০, গুরুদাসপুরে ১৩০ এবং বাগাতিপাড়া উপজেলায় ১০০ ব্যক্তি রয়েছেন। গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, লালপুর ও বাগাতিপাড়া উপজেলায় প্রকল্পের ঘর নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।

নাটোর ও নলডাঙ্গা উপজেলায় নির্মাণ সামগ্রী ক্রয় শেষে নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করার প্রস্তুতি চলছে। গুরুদাসপুর উপজেলার চরবালশা গ্রামের বাসিন্দা ইজিবাইক চালক সোহেল প্রকল্প থেকে নির্মিত ঘর পেয়ে উচ্ছসিত। সোহেল জানায়, ঝড়-বৃষ্টিতে আর মানুষের বাড়ীতে আশ্রয় খুঁজতে হবেনা। একই এলাকার উপকারভোগী মজিবর রহমানের স্ত্রী হেনা বেগম বলেন, ঘর করার সামর্থ্য আমাদের ছিলনা, ভবিষ্যতে কখনো হতো কিনা জানিনা।

আমরা কৃতজ্ঞ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে, তাঁর এই নিজস্ব উদ্যোগের জন্যে। গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মনির হোসেন জানান, প্রকল্পের নির্দেশিত ডিজাইন ও প্রাক্কলিত ব্যয়ে ঘরগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। সর্বোচ্চমান নিশ্চিত করে প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সকল সদস্য নিরলসভাবে পরিশ্রম করছেন।

নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোছাঃ শরীফুন্নেসা বলেন, আশ্রয়ন প্রকল্পের অধীনে উপকারভোগী বাছাই এবং তাদের গৃহনির্মাণ কার্যক্রম যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং মনিটরিং করা হচ্ছে। পরবর্ত্তীতে এসব পরিবারের পূনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

নাটোরের জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন বলেন, যাদের জমি ও ঘর কোনটাই নাই, যাদের দশ শতাংশ পর্যন্ত জমি আছে কিন্তু ঘর নাই এবং যাদের দশ শতাংশ পর্যন্ত জমি ও জরাজীর্ণ ঘর আছে-এই তিন শ্রেণীতে জেলায় গৃহহীনের মোট সংখ্যা ১৪ হাজার ৭০০। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প তালিকার এই কার্যক্রম বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে কোন ব্যক্তি বা পরিবার আর গৃহহীন থাকবেনা।

এমএমআর/ফিরোজ