ঝিনাইগাতীতে
শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণ ও হত্যার দায়ে ৩ যুবকের মৃত্যু দন্ডাদেশ

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের সীমান্ত ঘেষা বাকাকুড়া গ্রামের ব্র্যাক স্কুলের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী বিনা আক্তারকে গণধর্ষণ ও নির্মমভাবে হত্যার দায়ে ২৭সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় এক জনার্কীণ আদালতে তিন যুবককে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছেন, শেরপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুানাল আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মোঃ আখতারুজ্জামান। সেই সাথে দন্ডপ্রাপ্তদের আদালত এক লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেন।
মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামীরা হলেন, মামলার ১নং আসামী বাকাকুড়া গ্রামের ফজল হকের ছেলে আমান উল্যাহ্ (২৩), মৃত মজিবর রহমানের ছেলে কালু (৩০) (পলাতক), হাবিবুর রহমানের ছেলে নূরে আলম (২৮)।
এছাড়াও আদালতে দোষ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার অপর ৩ আসামী হারুন-অর-রশিদ (৩৬), সুন্দরী বেগম (৩৬), আনোয়ার হোসেন আনু (১৮) কে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।
মামলা ও আদালত সূত্রে জানা যায়, ঝিনাইগাতী উপজেলার বাকাকুড়া গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল সেকের কন্যা ব্র্যাক স্কুলের ৫ম শ্রেণিতে পড়ুয়া বিনা আক্তারের সাথে একই গ্রামের প্রতিবেশী ফজল হকের ছেলে আমান উল্যাহ্র সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরে আমান উল্যাহ্ বিনাকে বিয়ে করতে চাইলে তার বাবা মা বাঁধসাধে।
এঘটনার পর বিনার বাবা মা সহ তারা ঢাকায় চলে যায় এবং গামেন্টের্স চাকুরি নেন। পরবর্তীতে বেশকিছু দিন পর বিনা আক্তার ও তার বাবা-মা গ্রামের বাড়ী বাকাকুড়া গ্রামে ঈদ করতে আসেন। ঈদ শেষে কিশোরী বিনা আক্তারকে তার নানীর কাছে রেখে তার বাবা মা পুনরায় ঢাকায় চলে যান।
এদিকে ২০১৬ সালের ১৯ জুলাই রাত ৮টার দিকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আসামী কালু বিনার নানী বাড়ী থেকে কৌশলে বিনাকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে মামলার ১নং আসামী আমান উল্যাহ্, নূরে আলম, কালুসহ বিনা আক্তারকে পালাক্রমে গণধর্ষণ করে এবং ধর্ষণ শেষে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা শেষে বিনার লাশ যাতে কেউ চিনতে না পারে এজন্য হত্যাকারীরা তার মুখোমন্ডল এসিড দিয়ে জ্বলসে দেয়, পরে তার যৌনাঙ্গে ২ ফুট লম্বা একটি গাছের ডাল ঢুকিয়ে রাখে। পরবর্তীত বিনার লাশ বাকাকুড়া এতিমখানার পশ্চিম পার্শ্বে শিলঝুড়া খালে ফেলে দেয়।
এদিকে বিনার নানীসহ আত্মীয় স্বজন অনেক খোঁজাখুজির দুইদিন পর ২১ জুলাই স্থানীয় এক ইউপি সদস্য বিনার লাশ ওই খালে ভাসতে দেখে বিনার পরিবারের কাছে খবর দেয়। আত্মীয় স্বজন ঘটনাস্থল গিয়ে বিনার জামা কাপড় দেখে তার লাশ সনাক্ত করে। খবর পেয়ে বিনাইগাতী থানার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে সূরতহাল রিপোর্ট তৈরি শেষে ময়না তদন্তের জন্য শেরপুর জেলা সদর হাসপাতল মর্গে প্রেরণ করে।
এঘটনায় বিনা আক্তারের মা সবুজা খাতুন আমান উল্যাহ্ (২৩), কালু (৩০), নূরে আলম (২৮), হারুন-অর-রশিদ (৩৬), সুন্দরী বেগম (৩৬), আনোয়ার হোসেন আনু (১৮)সহ ৬ জনকে চিহ্নিত করে ২১/৭/১৬ইং তারিখে ঝিনাইগাতী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। ট্রাইব্যুানাল মামলা নং- ২৩৫/১৬ মামলার পর পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত প্রেমিক আমান উল্যাহ্ ও সহযোগি নূরে আলমকে গ্রেফতার করলেও এ ঘটনার পর থেকেই অপর আসামী কালু পলাতক থাকে।
মামলা তদন্তকারী অফিসার উপ পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল করিম তদন্ত শেষে ৬ আসামীর বিরুদ্ধে বিগত ২০/১০/২০১৬ ইং তারিখে আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন। মামলার ১৬জন সাক্ষীর স্বাক্ষী শেষে আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। মামলা চলাকালে রাষ্ট্র পক্ষে ছিলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুানাল আদালতের পিপি এড. গোলাম কিবরিয়া বুলু ও আসামী পক্ষে ছিলেন এড. হরিদাস কর্মকার স্বপন।