নন্দীগ্রামে আমন ধানক্ষেত জুড়ে সবুজের সমারোহ

নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১১:২৯ এএম, বুধবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | ২৭১

বগুড়ার শস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত নন্দীগ্রাম উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে এবার ধানের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। আমন মৌাসুমের মাঝামঝি এই সময় মাঠের পর মাঠ শোভা পাচ্ছে সবুজের সমারোহ। আর এ সময়েই উপজেলার বিভিন্ন মাঠের আমন ধানের লকলকে তরতাজা সবুজ গাছগুলোতে পোকামাকড় দমনে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।

উপজেলার রিধইল গ্রামের কাসেম আলী, দোহার গ্রামের তোতা মিয়া, কৈগাড়ি গ্রামের আবুল কালাম সহ বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই বুক ভরা আশা নিয়ে দিনভর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মাঠে কাজ করছেন। এই অঞ্চলের কৃষকরা বিপুল পরিমান ফসল উৎপাদন করে অত্রাঞ্চলের খাদ্য চাহিদা পূরনের পরেও ৭০ভাগ ধান দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে থাকে।

উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে , এ বছর চলতি আমন মৌসুমে শুধু নন্দীগ্রাম উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে সর্বমোট ১৯হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। এই জমি থেকে ৮৩ হাজার ১শ ৬০ মেট্রিকটন ধান উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর উৎপাদিত ধান থেকে ৫৫ হাজার ৪শ ৪০ মেট্রিক টন চাল হবে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। এ বছর কৃষকরা জমিতে বিনা-৭, ব্রিধান-৩৪, ব্রিধান-৪৯, ব্রিধান-৫১, ব্রিধান-৬২, মিনিকেট সহ বিভিন্ন জাতের ধান চাষ করেছে। যা এ উপজেলার চালের চাহিদা পূরন করেও বাহিরে রপ্তানী করতে পারবে কৃষকরা। এ বছর আবহাওয়া ভাল রোগ বালাই কম কৃষি অফিসের সময় মত পরামর্শ পেয়ে কৃষকরা জমিতে যে পরিশ্রম করেছে তাতে বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলার রিধইল, দোহার, কৈগাড়ী, সিংড়া খালাস, চকরাম দেবপুর, ফোকপাল, বর্ষন, মাঝগ্রাম সহ বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় মাঠের পর মাঠ যেন সবুজের সমারোহ।

উপজেলার কৈগাড়ী গ্রামের মাঠে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফারুক হোসেন নামে এক যুবক পিঠে স্প্রে মেশিন নিয়ে আমন ধান ক্ষেতে কীটনাশক প্রয়োগ করছেন। তার কাছে গিয়ে এ প্রতিবেদক জমিতে কি স্প্রে করছেন জানতে চাইলে তিনি জানালেন, আমন ধান মৌসুমের এটা মাঝামাঝি সময়, এ সময়েই ধান গোর গামর হবে ঠিক এ সময়েই ধানে রোগ সহ বিভিন্ন পোকা-মাকড় আক্রমন করে থাকে।

তিনি আরো জানান, যাতে কোন রোগ ও পোকা-মাকড় আক্রমন করতে না পারে এ জন্য ধান গাছে কীটনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। একই মাঠে একটু দুরে গিয়ে আমন ধান ক্ষেতে কৃষক মামুনের সাথে দেখা হলে পরিচয় পাওয়ার পর তিনি জানালেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সময় মত বৃষ্টি হওয়ায় এখন পর্যন্ত আমন ধান ক্ষেত ভালোই আছে। ইতিমধ্যে ধান গামরে বসতে শুরু করেছে।

কাথম গ্রামের কৃষক ঠান্ডু মিয়া জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবছর আমন ধান অনেক ভালো হয়েছে। বর্তমানে ধানের বাজার ও বেশ চড়া। ধানের বাজার এর যদি পরিবর্তন না ঘটে তাহলে আমরা এবার অনেকটা লাভবান হবো।

এছাড়া এ উপজেলার বেশ কয়েক জন সাধারণ কৃষকদের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, আমরা কৃষি অফিসের পরামর্শে সঠিক সময়ে সঠিক বয়সের চারা সারিতে রোপন করেছি এতে করে আমাদের ফসল অনেক ভালো হয়েছে। সারিতে চারা রোপনের ফলে আমন ধানের ত্রাস সৃষ্টিকারী কারেন্ট পোকার প্রাদূর্ভাব নেই বললেই চলে।

উপজেলা কৃষি অফিসার মোহা. মুশিদুল হক এই প্রতিবেদককে জানান, এ উপজেলার কৃষকরা পরামর্শমত ধান চাষ করেছে , এছাড়াও আবহাওয়া ভালো, রোগ-বালাই পোকামাকড় নেই ও সময় মতো বৃষ্টিপাত হওয়ার কারনে আমন ধান ভালো হয়েছে। বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না দেখা দিলে আমন ধানের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।