প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি: এলাকায় তোলপাড়

ভূঞাপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৭:৪৫ পিএম, বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | ২২৬

নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে টাঙ্গাইল ভূঞাপুর উপজেলার নিকরাইল বেগম মমতাজ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম ইকবালের বিরুদ্ধে পাহাড়সম অভিযোগ জমা পড়েছে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে।

বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো.আবু সুফিয়ান আল মাসুদ পরিচালনা পর্ষদের অন্যান্য সদস্যদের স্বাক্ষরে রেজুলেশন করে তিনি এ অভিযোগ করেছেন। প্রধান শিক্ষকের এমন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারনে এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ব্যহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা।


অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার নিকরাইল বেগম মমতাজ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০১৫ সালে অনিয়মের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান একেএম ইকবাল। এ নিয়ে একটি মামলাও হয়েছিল।

আর মামলার বাদী ছিলেন অপর প্রার্থী মো.ইব্রাহীম তালুকদার। নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে একেএম ইকবাল নানা অনিয়ম আর দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। আয়ের অংশ বিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা না করে তিনি নিজেসহ অন্যান্য শিক্ষকদের মধ্যে ভাগ করে দেন।

সেশন চার্জের টাকা আদায় সত্তে¡ও প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের কাছ অতিরিক্ত আরো ৩০ টাকা করে আদায় করেন। যা নিজেদের মধ্যে বন্টন হয়। যার অধিকাংশ টাকা চলে যায় প্রধান শিক্ষকের পকেটে। রেজাল্ট শীটের নামে প্রত্যেক ছাত্রীর কাছ থেকে ৫০ টাকা আদায় করা হয় যা প্রধান শিক্ষক নিজেই হস্তগত করেন।

প্রধান শিক্ষকের যোগসাজসে অন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে চালানো হয় কোচিং। কোচিংয়ের শিক্ষকরা ভাগবাটোয়ারা করে নেন। ছাত্রীদের সরকার প্রদত্ত যে উপবৃত্তির টাকা প্রদান করা হয় তার একটি অংশ কর্তন করে শিক্ষকরা ভাগ করে নেন।

এ টাকার বেশির ভাগ চলে যায় প্রধান শিক্ষকের পকেটে। গত জেএসসি পরীক্ষায় নকল শিক্ষক মনিরুজ্জামান পুলিশের হাতে আটক হন। পরে প্রধান শিক্ষকের হস্তক্ষেপে তা টাকার বিনিময়ে পার পেয়ে যান।

প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে সহকারি শিক্ষক মনিরুজ্জামান ও রফিকুল ইসলাম মোল­া জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় নকল সরবরাহের জন্য পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন। যা সব অভিভাবক অবগত রয়েছেন।


২০১৫ সালে হিসাব বিজ্ঞান শিক্ষক পদে শূণ্য হওয়ার পরও মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সমাজ বিজ্ঞান পদে মানবিক শাখায় মনিরুজ্জামানকে নিয়োগ দেয়া হয়। ২০১৩ সালে জাল সার্টিফিকেট থাকা সত্তে¡ও গ্রন্থাগারিক পদে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় নিয়োগ দেয়া হয় হুমায়ুনকে।

এখনও তিনি ওই পদে কর্মরত। এছাড়াও প্রধান শিক্ষক অন্যান্য শিক্ষকদের দিয়ে জরিমানার শিক্ষার্থী অনুপস্থিতির জরিমানার টাকা বিদ্যালয় ফান্ডে জমা না করে নিজের ইচ্ছেমত খরচ করেন। এদিকে পরিচালনা পর্ষদের অনুমতি ও রেজুলেশন ছাড়াই প্রধান শিক্ষক ডলি নামের এক আয়াকে নিয়োগ দিয়েছেন।

যা ওই এলাকায় ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এরকম হাজারো অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষক একেএম ইকবালের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো.আবু সুফিয়ান আল মাসুদ পরিচালনা পর্ষদের অন্যান্য সদস্যদের স্বাক্ষরে রেজুলেশন করে ডাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশন, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। প্রধান শিক্ষকের এমন অনিয়ম ও দূর্নীতির কারণে এলাকায় অভিভাবকদের মাঝে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ব্যহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা।

অভিযোগের বিদ্যালয়ের বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম ইকবাল বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত সব অভিযোগ মিথ্যা। আমি এ ধরনের কোনো কাজ করিনি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো.শাহীনুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের একটি অভিােগ পেয়েছি। তদন্তে সত্য প্রমানিত হলে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারি কমিশনার ভূমি এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, একটি অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।