শিউলী হত্যা
রহস্যের জট খুলতে শুরু করলেও রয়েছে নানা প্রশ্ন


চলন্ত বাস থেকে পড়ে গার্মেন্টস কর্মী শিউলী বেগমের মৃত্যুর ১৫ দিন পর রহস্যের জট খুলতে শুরু করলেও শিউলীর এক সহকর্মী আরিফের গ্রেফতার নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। ঘটনার দিন আরিফ ও শিউলী একই বাসে য়ায়নি বলে আরিফের অন্য দুই সহকর্মী সুরাইয়া ও রাশেদা জানিছেন। বাস চালকের ভাষ্য মতে আরিফই শিউলীকে বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এই ঘটনার সাথে জড়িত গ্রামীণ শুভেচ্ছা পরিবহন নামের বাসের (নম্বর ঢাকা মেট্রো ব ১৫-৩৬৩৭) চালকসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে মির্জাপুর থানা পুলিশ। আরিফ নামে শিউলীর এক সহকর্মী বাসের মধ্যে শ্লীলতাহানির সময় শিউলীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলে ঘটনাস্থলেই বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে শিউর্লী মারা যান।
বৃহস্পতিবার রাত সোয়া আটটার দিকে মির্জাপুর থানায় স্থানীয় সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন টাঙ্গাইলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মির্জাপুর সার্কেল মো. আফসার উদ্দিন খাঁন । এসময় মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ একে এম মিজানুল হক, পরিদর্শক (তদন্ত ) শ্যামল কুমার দত্ত উপস্থিত ছিলেন। যে বাসে ঘটনা সংঘটিত হয় সে বাসটিও আটক করা হয়েছে বলে তিনি তথ্যে উল্লেখ করেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার গ্রামীণ শুভেচ্ছা পরিবহন বাসের ড্রাইভার রুহুল আমীন ওরফে রনি শেখ বৃস্পতিবার টাঙ্গাইল কোর্টে সেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন বলেও সহকারী পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
লিখিত বক্তব্যে আফসার উদ্দিন খাঁন জানান, গত ২৬ জুলাই সকাল ৭টার দিকে শিউলী তার কর্মস্থল গোড়াই শিল্পাঞ্চলের কমফিট কম্পোজিট গার্মেন্টেসে যাওয়ার জন্য তার বাড়ি সংলগ্ন ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পুষ্টকামুরী চরপাড়ায় বাসের জন্য অপেক্ষা করেন। চন্দ্রাগামী একটি খালি বাস থামালে শিউলী ও তার সহকর্মী আরিফও ওই বাসটিতে উঠেন। বাসটি কিছুদূর যাওয়ার পর আরিফ শিউলীর সিটে গিয়ে বসেন। এ সময় আরিফ শিউলীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। দুজনের মধ্যে ধস্তাাধস্তি হলে শিউলী বেগম বাসের ভেতর থেকে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে থাকেন। এক পর্যায় আরিফ শিউলীকে বাস থেকে ধাক্কা দিলে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বাওয়ার কুমারজানী নামক স্থানে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান শিউলী।
বাসটি আটক হওয়ার পর মির্জাপুর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে বাসের ড্রাইভার রনি শেখ ও তার ছোট ভাই হেলপার সোহেল রানা ওরফে রানা শেখ সহ ৩ জনকে গ্রেফতার করে। রনি শেখ ও রানা শেখ নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার পাংখার চর গ্রামের মুক্তার শেখের ছেলে। শিউলীর সহকর্মী আরিফ মির্জাপুর উপজেলা সদরের পুষ্টকামুরী চরপাড়া গ্রামের জয়নাল মিয়ার ছেলে।
এদিকে বৃহস্পতিবার গ্রামীণ শুভেচ্ছা পরিবহন বাসের ড্রাইভার রনি শেখ টাঙ্গাইল কোর্টে সেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন বলে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আফসার উদ্দিন জানান। এছাড়া গ্রেফতারকৃত আরিফ ও সোহেল রানাকে ৩ দিনের রিমান্ড এনেছে মির্জাপুর থানা পুলিশ।
অন্যদিকে আরিফের পরিবারের সদস্যরা আরিফকে নির্দোষ দাবী করে বলেছেন, আরিফ ঘটনার আগেই অন্য একটি গাড়িতে সুরাইয়া ও রাশেদা নামে দুই গার্মেন্টস কর্মীর সাথে তার কর্মস্থলে যোগদান করেছেন।
উল্লেখ, গত ২৬ জুলাই সকাল আনুমানিক ৭টার দিকে ৭ বাস যোগে চরপাড়া গ্রামের শরীফ খানের স্ত্রী গার্মেন্টস কর্মী শিউলী তার কর্মস্থল গোড়াই শিল্পাঞ্চলের কমফিট কম্পোজিট গার্মেন্টসে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে বাসে আর্তচিৎকারের কিছুক্ষণ পর দেড় কিলোমিটার দূরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বাওয়ার কুমারজানী নামক স্থান থেকে শিউলীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।