এনামকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন ওবায়দুল কাদের। ছবি: ফোকাস বাংলাক্রসফায়ার নিয়ে সাভারের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এনামুর রহমান গণমাধ্যমে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। আজ রোববার এ কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সাভারের এমপির একটি পত্রিকায় সাক্ষাৎকার নিয়ে কথা উঠেছে। সেখানে তাঁর অসামঞ্জস্য বক্তব্য উঠে এসেছে। এটা সিরিয়াসলি খতিয়ে দেখছি। সেটা প্রমাণিত হলে শোকজ করব।’
সংবাদ সম্মেলনের আগে হওয়া বৈঠকে উপস্থিত সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস সাংসদ এনামুরের বক্তব্যের সমালোচনা করে বিষয়টি তোলেন। তিনি বলেন, সংসদ সদস্য যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা শিশুতোষ। তিনি অপরিপক্বতার পরিচয় দিয়েছেন। এ বক্তব্যের মাধ্যমে সরকার ও দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।
জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সাভারে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি নেই, এটা ঠিক। তবে সাংসদ এনাম যে কথা বলেছেন, তা তা ঠিক করেননি তিনি। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১৮ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ঢাকা-১৯ আসনের সংসদ সদস্য এনামুর রহমান বলেন, ‘সাভারে অনেক ক্যাডার আর মাস্তান ছিল। এখন সব পানি হয়ে গেছে। কারও টুঁ শব্দ করার সাহস নেই। পাঁচজনকে ক্রসফায়ারে দিয়েছি, আরও ১৪ জনের লিস্ট করেছি। সব ঠান্ডা। লিস্ট করার পর যে দু-একজন ছিল, তারা আমার পা ধরে বলেছে, আমাকে জানে মাইরেন না, আমরা ভালো হয়ে যাব।’ অবশ্য পরে সাংসদ এ বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
বৈঠক সূত্র আরও জানায়, গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম কলেজে আওয়ামী লীগের সমাবেশ করার জন্য পরীক্ষার স্থান পরিবর্তনের বিষয়টি ওবায়দুল কাদের নিজেই তোলেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশের পর দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পরীক্ষার স্থান পরিবর্তন করে সমাবেশ করার রাজনীতি তিনি বিশ্বাস করেন না। যাঁরা এই আয়োজন করেছেন, তাঁরা ঠিক করেননি। পরীক্ষার হলের আশপাশেই সমাবেশ হওয়া উচিত নয়।
এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, দলীয় প্রধানের এই মনোভাব জেনে তিনি সমাবেশ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর গাজীপুর আওয়ামী লীগের অনেক নেতা এসে কান্নাকাটি করেছেন যে এ আয়োজনের জন্য তাঁদের লাখ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে।
গত শনিবার নবগঠিত গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগ ভাওয়াল বদরে আলম কলেজে সমাবেশের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল ওবায়দুল কাদেরের। আগে থেকেই এই কলেজে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতকোত্তর পরীক্ষার কেন্দ্র ঠিক করা ছিল। সমাবেশের কারণে পরীক্ষার স্থান পরিবর্তন করা হয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নেতাদের জানান, গত বছর অক্টোবরে কেন্দ্রীয় কমিটি হলেও প্রায় সব নেতাই দলীয় চাঁদা পরিশোধ করেননি। দ্রুত চাঁদা পরিশোধের তাগিদ দেন তিনি। এ ছাড়া বিষয়ভিত্তিক উপকমিটিগুলোর সদস্যদের নামের তালিকা আজ রোববারের মধ্যে চূড়ান্ত করার নির্দেশনা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও যা বললেন
সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, শোকাবহ আগস্টে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচি যথাযথভাবে পালনের ব্যাপারে সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া বন্যাদুর্গত এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার নির্বাচন কমিশনে দলের হিসাব দেওয়া হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা কয়েক মাস ধরে কাজ করে হিসাব সম্পন্ন করেছি। এই হিসাব অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করেছি। আগামীকাল আমরা নির্বাচন কমিশনে গিয়ে তাদের কাছে জমা দেব।’
এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তারা (বিএনপি) ষড়যন্ত্রের চোরাবালি খুঁজছে। লন্ডনে তাঁরা (খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান) কী করছে, তার খোঁজখবর আমরা নিচ্ছি। সরকারি ও দলীয়ভাবে আমরা বিভিন্নভাবে খোঁজখবর নিচ্ছি।’