নবীন বাংলাদেশের জন্য প্রবীণ বাজেট: সিপিডি


এবারের প্রস্তাবিত বাজেট মধ্য ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের ওপর চাপ বাড়াবে। ব্যাংক খাতের নৈরাজ্য দূর না করে উল্টো ব্যাংকগুলোর কথায় কর্পোরেট কর কমানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সব মিলিয়ে এবারের বাজেটকে নবীন বাংলাদেশের জন্য একটি প্রবীণ বাজেট বলে উল্লেখ করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত জাতীয় বাজেট ২০১৮-১৯ সিপিডির পর্যালোচনা শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে একথা জানায় গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে কর্পোরেট কর কমানো হয়েছে। এক্ষেত্রে মালিকপক্ষেরই বেশি লাভ হবে। কেন এ কর কমানো হয়েছে তার পেছনে যৌক্তিক ও প্রশাসনিক কোনো কারণ দেখছি না। ব্যাংকিং খাতে নৈরাজ্যের মধ্যে এ ধরনের কর্পোরেট কর ছাড় দেয়া ঠিক হয়নি।
তিনি বলেন, দেশে অর্থনীতিতে সম্পদ ও পুঁজিবাদিরা বেশি উপকৃত হচ্ছে। কিন্তু সম্পদহারা ও পুঁজিহীন মানুষের খুব বেশি উপকার আসছে না। বাজেটে এদের নিয়ে খুব বেশি দিক নির্দেশনা নেই।
২০১৮-১৯ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তা অর্জন নিয়ে গভীর সংসয় প্রকাশ তিনি বলেন, এই মুহূর্তে দেশের অর্থনীতির জন্য ব্যক্তি খাতের স্থবির বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করা, কর্ম সংস্থান বৃদ্ধির হার বাড়ানো, মানবসম্পদের গুনগত উন্নয়ন, সম্পদের বৈষম্য কমানো বড় সমস্যা।
এই সব সমস্যা থেকে উত্তরণ করেই বাজেটে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের টার্গেট পূরণ করতে হবে, যা নিয়ে আমরা গভীর সংশয় প্রকাশ করছি।
দেবপ্রিয় বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বর্তমান বিানয়োগের চেয়ে ১১৭ হাজার কোটি টাকা বাড়াতে হবে, একই সঙ্গে সরকানি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে বর্তমান সময়ের চেয়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা। পুঁজির উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। এটি বাস্তবে করা অনেক কঠিন, এজন্য জিডিপির এই প্রবৃদ্ধি নিয়ে গভীর সংশয় রয়েছে।
চলতি (২০১৭-১৮) বাজেটে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। তার আগের বছরে (২০১৬-১৭) জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ।
দেশের উঠতি অনলাইন নির্ভর নতুন ব্যবসা-উদ্যোগগুলোর সামনে কর-ভ্যাটের চ্যালেঞ্জ এবং বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রায় চলতি বছরের তুলনায় কোনো পরিবর্তন আসেনি। গত ৫ বছরে প্রবৃদ্ধি হলেও আয়বৈষম্য বেড়েছে, বাজেটে উল্লেখিত মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ধরে রাখা কঠিন বলেও জানায় সংগঠনটি।
সব মিলিয়ে এই বাজেট নির্বাচনমুখী স্থিতাবস্থার বাজেট মন্তব্য করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, নবীন বাংলাদেশের জন্য একটি প্রবীণ বাজেট তৈরি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য কী পরিমাণ অর্থ খরচ হচ্ছে সেরকম কোনো আর্থিক মূল্যায়ন করা হয়নি। সঞ্চয়পত্রের ওপর চাপ কমিয়ে ব্যাংকিং খাতকে চাঙ্গা করা উচিত ছিল। কিন্তু এই ঘোষিত বাজেটকে দেখে মনে হচ্ছে সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকতে হবে।
তিনি আরো বলেন, সিপিডির দীর্ঘ দিনের দাবি ছিলো চাল আমদানি ওপর শুল্ক কমানো হবে, এবার এটা বাজেটে কমানো হয়েছে। সিপিডি খুশি হয়েছে। কৃষক এটাতে লাভবান হবে।
নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলন অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, সিনিয়র গবেষক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষক তৌফিকুল আলম প্রমুখ।.
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ‘সমৃদ্ধ আগামী পথযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আাবুল মাল আবদুল মুহিত। চলতি অর্থ বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ আকার বেড়েছে প্রস্তাবিত বাজেটের।
দেশের ৪৭ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট এটি। ব্যক্তিগতভাবে অর্থমন্ত্রীর ১২তম বাজেট। বৃহস্পতিবারের বাজেট পেশের মধ্য দিয়ে টানা দশবার বাজেট পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী।