জিটিসিএল’র নিরাপত্তা প্রহরী লাঞ্চিত! থানায় অভিযোগ


গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানী লিমিটেড নাটোরের বাগাতিপাড়ায় তমালতলা ডিআরএস সেন্টারে নিয়োজিত নিরাপত্তা প্রহরী আফাজ উদ্দিন শেখ লাঞ্চিত।
দীর্ঘদিন যাবৎ বেতন থেকে একটি অংশ নিরাপত্তা প্রহরীর সুপারভাইজার গোলাম ওয়াহাব আলী জোর পূর্বক আদায় করার প্রতিবাদ করলে তাকে লাঞ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। পরে নিরাপত্তা প্রহরী আফাজ উদ্দিন শেখ বাগাতিপাড়া মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
সূত্রে জানা যায়, তমালতলা ডিআরএস সেন্টারে চারজন নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োজিত আছে। তিনমাস পরপর তারা বেতন পান। কিন্তু প্রতি মাসের বেতন থেকে ২হাজার, ঈদ বোনাস থেকে ১হাজার ও বৈশাখী ভাতা থেকে ৫শত টাকা করে সুপারভাইজার আদায় করেন দীর্ঘদিন যাবৎ।
সম্প্রতি সুপার ভাইজারের চাহিদা বাড়তে থাকে কিন্তু তার প্রতিবাদ করেন নিরাপত্তা প্রহরী আফাজ উদ্দিন শেখ। রোষ্টার অনুযায়ী মঙ্গলবার সকালে ডিউটি করেন নিরাপত্তা প্রহরী আফাজ। ঈদের বোনাস সহ তিন মাসের বেতন আসার পূর্বেই কতটাকা দিতে পারবে তা নিয়ে দরকষাকষি চলে উভয়ের মধ্যে।
এ সময় আফাজ টাকা কম দিতে চাওয়া নিয়ে উভয়ের মধ্যে বাক-বিতন্ডা বাধে এক পর্যায়ে সুপারভাইজার ওয়াহাব আলী আফাজকে মারধর করে। কিন্তু দুপুর ২টায় ডিউটি শেষ করে বাসায় ফেরার পথে হাজীপাড়া স্থানে আবারো সুপারভাইজার ও তার সহযোগী মারপিট করেছে বলে অভিযোগ করা হয়। পরে বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয় তিনি।
লাঞ্চিত হওয়া ওই নিরাপত্তা প্রহরী আরো অভিযোগ করেন তিনি তমালতলা ডিআরএস সেন্টারে দায়িত্ব পালন করতে গেলে তাকে ভিতরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।
তমালতলা ডিআরএস সেন্টারে নিয়োজিত নিরাপত্তা প্রহরী ভুক্তভোগী আফাজ উদ্দিন শেখ দাবী করেন, ‘প্রতিমাসের বেতন থেকে টাকা নেয় সুপারভাইজার ওয়াহাব আলী। বর্তমানে বেশী টাকা চাইলে আমি দিতে অস্বীকার করি। প্রথমে সেন্টারে, পরে সেন্টারের বাইরে মুখোশধারী একজনকে সাথে করে মারধর করে। আর বলে আমার সাথে বড় শক্তি আছে তুই কিছুই করতে পারবি না। পরে ডিউটি করতে গেলে আমাকে সেন্টারে ঢুকতে দেয় না। বলে তোকে বদলি করা হয়েছে। কিন্তু আমাকে কোন লিখিত আদেশ/নির্দেশ দেয়া হয় নাই।
তবে অভিযুক্ত গোলাম ওয়াহাব দাবী করেন, ‘আমার সাথে নিরাপত্তা প্রহরী আফাজের ঝগড়া হয়, কিন্তু আমি তাকে মারপিট করিনি। আর প্রতি মাসের বেতনের টাকার একটি অংশ আমরা উঠাই কিন্তু টাকাগুলো আল-আরাফাত অফিসে পাঠাতে হয়। তবে আমাদের উত্তর বঙ্গের এই টাকাগুলো উঠানোর বেশিরভাগ দায়িত্ব পালন করেন সিরাজগঞ্জ হাটিকুমরুল সেন্টারের সুপারভাইজার আব্দুর রাজ্জাক।’
সিরাজগঞ্জ হাটিকুমরুল সেন্টারের সুপারভাইজার আব্দুর রাজ্জাকের দাবী, ‘আমরা মাসিক বেতনের টাকাগুলো উঠাই। কিন্তু ঈদ বা বৈশাখী বোনাস বাবদ কোন টাকা উঠাই না। আর এই টাকাগুলো আল-আরাফাতের এমডি নিজে এসে গ্রহণ করে অনেক সময় তাকে দিয়েও আসতে হয়।’
গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানী লিমিটেড এর রাজশাহী আঞ্চলিক সঞ্চালন কার্যালয়ের ইনচার্জ মুতামিদ বিল্লাহ আজ্জাফী বলেন, তমালতলা ডিআরএস সেন্টারের নিরাপত্তা প্রহরীর সাথে সুপারভাইজারের বিবাদের ঘটনাটি আমরা জানি। তারা টাকা কোথায় দেয় সেটা তাদের ব্যপার, আমরা জানি না। তবে আফাজকে মৌখিকভাবে বদলী করা হয়েছে। তবে লিখিত আদেশ না পাওয়া পর্যন্ত সে পূর্বের স্থানে ডিউটি করতে পারে বলে জানান তিনি।
টাকাগুলো কেন নিরাপত্তাকর্মীদের কাছ থেকে উঠানো হয় প্রশ্নে আল-আরাফাত সার্ভিসেস (প্রাঃ) লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেলায়েত হোসেন দাবী করেন, ‘সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল সেন্টারের চুরির ঘটনায় জরিমানার অর্থ জোগানদিতেই প্রতি মাসে তাদের কাছ থেকে টাকা নিতে হয়। এক জায়গাতে চুরি হলে সকলকেই দিতে হবে এটাই আমাদের নিয়ম। এভাবেই আমাদের চুক্তি আছে।’
এব্যাপারে বাগাতিপাড়া মডেল থানার এসআই রাকিব বলেন, ‘অভিযোগটি তদন্ত চলছে। গ্যাস একটি জাতীয় সম্পদ তার নিরাপত্তার বিষয়টি খুবই গুরুত্ব পূর্ণ। এ ঘটনায় উভয় পক্ষকে থানায় ডাকা হয়েছে।’