পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা

মির্জাপুরে পাহাড়ী বনের ভেতর গড়ে উঠেছে কয়লার কারখানা

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল ) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১০:৪৫ এএম, সোমবার, ১৪ মে ২০১৮ | ৭৬৯

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় আইন অমান্য করে পাহাড়ি অঞ্চল হিসেবে খ্যাত আজগানা, তরফপুর,বাঁশতৈল ও গোড়াই ইউনিয়নের সাতটি গ্রামের আটটি স্থানে ৩২টি কয়লার কারখানা গড়ে উঠেছে। একারনে ওইসব এলাকায় পরিবেশ বিপর্য়য়ের আশংকা দেখা দিয়েছে বলে পরিবেশ আন্দোলনকারীরা আশংকা প্রকাশ করছেন।

এসব কারখানায় অবাধে শাল, গজারিসহ বিভিন্ন ধরনের কাঠ পুড়িয়ে কয়লা বানানো হয়। ওখানকার সৃষ্ট ধোঁয়ায় বৃদ্ধ ও শিশুদের শ্বাসকষ্ট নানা ধরনের সমস্যা তৈরী হচ্ছে। ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো কমে যাওয়ায় অভিনব এ পদ্ধতিতে ব্যবসায়ীরা কাঠ পাচার করছে।

জানা গেছে, ওই ইউনিয়ন চারটির বিভিন্ন গ্রামে বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে। বনাঞ্চলে ঘেরা ইউনিয়ন চারটির আজগানা, তেলিনা, চিতেশ্বরী, গায়রাবেতিল, খাটিয়ারহাট, মাটিয়াখোলা, ছিট মামুদপুর, গোড়াই ইউনিয়নের রহিমপুর গ্রামের আটটি স্থানে ৩২টি কয়লা তৈরির কারখানা তৈরি করা হয়েছে। বন বিভাগের বাঁশতৈল রেঞ্জের বাঁশতৈল, কুড়িপাড়া, পাথরঘাটা ও হাটুভাঙ্গা বিট অফিসের আওতায় গ্রামগুলো অবস্থিত।

সরেজমিনে দেখা যায়, এলাকাগুলোতে প্রায় ১২ ফুট গোলাকৃতির ১৫ ফুট উঁচু কারখানায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। চুল্লিগুলো ইট ও কাদা মাটি দিয়ে তৈরি। কারখানার আশপাশেই স্তুপ করে কাঠ রাখা আছে। পাশেই রয়েছে বন বিভাগের গাছপালা। অদূরে আছে কিছু বসতঘর ও বাজার।

খাটিয়ারাহাট এলাকার কারখানার শ্রমিক গায়রোবেতিল গ্রামের জগদিশ জানান, একটি কারখানায় কাঠ পুড়িয়ে কয়লা বানাতে ১৪ দিন সময় লাগে। প্রতিটি কারখানায় মাসে দুবার ৮০ থেকে ৯০ মণ কাঠ পুড়িয়ে ৩০ কেজি ওজনের ৪০ বস্তা কয়লা তৈরি হয়।

চিতেশ্বরী এলাকার ব্যবসায়ী মান্নান সরকারের দেয়া তথ্যমতে, চিতেশ্বরী ও খাটিয়ারহাটে ১২টি এবং গায়রাবেতিল, আজাগানা ও মাটিয়াখোলাতে ১৬টি কারখানা রয়েছে। ছিট মামুদপুর ও রহিমপুর এলাকায় আরও চারটি কারখানা রয়েছে। এসব কারখায় তৈরি করা প্রতি বস্তা কয়লা তারা ৬২০ থেকে ৬৫০ টাকা দরে পার্শ্ববর্তী আজগানা ও আশেপাশের বাজারে বিক্রি করেন।

কারখানার শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্যমতে, ৩২টি কারখানায় মাসে প্রায় ৩ হাজার মণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। অথচ বন বিভাগের লোকজন সেদিকে খেয়াল করছে না।

এদিকে, বনের ভেতর কাঠ পোড়ানোয় সৃষ্ট ধোঁয়ার কারণে আশেপাশে বসবাসকারী লোকজনের মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে। রাস্তাঘেষে গড়ে ওঠা কারখানাগুলোর ধোঁয়ায় কোমলমতি শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের ভয়ে সাধারণ মানুষ কিছু বলতে পারে না।

চিতেশ্বরী গ্রামের নজরুল ইসলাম ও সুরুজ মিয়া জানান, কারখানাগুলো দীর্ঘদিন ধরে চলছে। কারখানার ধোঁয়ার কারণে শিশু ও বৃদ্ধদের শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) টাঙ্গাইলের জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা সোমনাথ লাহিরী জানান, বনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে পরিবেশ বিধ্বংসী কোনো কারখানা গড়ে তোলা বেআইনি। কারখানাগুলোর কারণে জীববৈচিত্র্যের পরিবর্তন হচ্ছে। ধোঁয়া থেকে উৎপাদিত কার্বন এবং কার্বন মনোক্সাইড বাতাসের সঙ্গে মিশে হাইড্রো কার্বণ তৈরি হচ্ছে। যা প্ররিবেশ (জীব অনুজীব) ব্যবস্থা (ইকোসিস্টেম) ধ্বংস করেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বন নষ্ট হয়ে যাবে। বেলার পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে বিষয়টি নিয়ে রিট করতে যাচ্ছি। এ জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সংগ্রহ করা হচ্ছে।

বন বিভাগের বাঁশতৈল রেঞ্জ কর্মকর্তা ফজলুল হক জানান, গ্রামগুলো বাঁশতৈল রেঞ্জের আওতায় থাকলেও কারখানাগুলো বন বিভাগের জায়গার বাইরে। পরিবেশ ধ্বংস করার চেষ্টার কারণে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তর টাঙ্গাইলের পরিদর্শক সজীব কুমার ঘোষ বলেন, পরিবেশ নষ্ট করা কারখানাগুলো ধ্বংস করা হবে। একইসঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নেয়া হবে।