অস্থির হয়ে উঠছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিবেশ

জেলা সংবাদদাতা (কক্সবাজার)
প্রকাশিত: ১১:০৩ এএম, মঙ্গলবার, ২০ মার্চ ২০১৮ | ৫০১

পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে রোহিঙ্গাদের একটি অংশ। এছাড়াও প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করতে গিয়ে প্রত্যাবাসন বিরোধীদের হত্যাকান্ডের শিকার হচ্ছেন নিরহ রোহিঙ্গারা।

যে কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিবেশ দিন দিন অস্থির হয়ে উঠছে। ঘটছে হত্যাকান্ডের মতো জঘন্যতম কর্মকান্ড। ২০১৭ সালের আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ জনের বেশি রোহিঙ্গা খুন হয়েছে সন্ত্রাসীদের হাতে।

এ নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছাড়াও স্থানীয়দের মাঝে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক,উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরো বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ।

সরজমিন উখিয়ার কুতুপালং লম্বাশিয়া, মধুরছড়া, বালুখালী, ময়নারখোনা, তাজনিমারখোলা সহ বেশ কয়েকটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে রোহিঙ্গাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, রাতে অস্ত্রধারী রোহিঙ্গারা প্রায় ক্যাম্পের অলিতে গলিতে মহড়া দিতে থাকে। তাদের ভয়ে আতঙ্কে থাকেন সাধারণ রোহিঙ্গারা। অস্ত্রধারীরা মাঝে মধ্যে ক্যাম্পে ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।

কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গা মাঝি’ খালেদ হোসেন জানায়, ক্যাম্পে বসবাস করতে হলে ওই সব অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে মুখ খোলা সম্ভব নয়। যেহেতু সত্য কথা বললেই অপহরণ বা হত্যা করা হবে। সে একটি কথাই বললেন ক্যাম্পের অবস্থা ভাল নয়। পরিবেশ দিন দিন অস্থির হয়ে উঠছে।

কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তি ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি আবু ছিদ্দিক জানায়, বর্তমানে ক্যাম্পের বিভিন্ন স্থানে হত্যাকান্ড, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ নানান অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে বিভিন্ন সংগঠন নামধারী কিছু অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী রোহিঙ্গা।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ২৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীর হাতে প্রায় ১০ রোহিঙ্গা খুন হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২জন নারীও আছেন। গত ১৩ জানুয়ারি কুতুপালং লম্বাশিয়া ডি-৪ বøকের রোহিঙ্গা নেতা মমতাজ আহমদ(৩৬), ২১ জানুয়ারি থাইংখালী তাজনিমারখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মোহাম্মদ ইউছুপ(৪৬), ২৩ জানুয়ারি বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মসজিদের মোয়াজ্জেম ইউছূপ জালাল (৫৫), ২ মার্চ কুতুপালং ক্যাম্পের আবু তাহের (৩০), ১৭ মার্চ কুতুপালং ক্যাম্পের নুর হাকিম (৩৫) ১৬ মার্চ থাইংখালী তাজনিমারখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দূরে জঙ্গল থেকে এক অজ্ঞাতনামা রোহিঙ্গা মৌলভীর লাশ উদ্ধার করা হয় ।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি খুন হন রোহিঙ্গা নারী রেনুয়ারা বেগম (৩২)। এছাড়া ও কুতুপালং টিভি রিলে কেন্দ্র সংলগ্ন খাল থেকে ২৩ অক্টোবর উদ্ধার করা হয় অজ্ঞাত রোহিঙ্গা নারী,শিশুর লাশ। এর ২দিনে আগে ওই খাল থেকে পুলিশ উদ্ধার করে আরো একজন রোহিঙ্গা বৃদ্ধের লাশ।

এ প্রসঙ্গে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো.আবুল খায়ের বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রণে ইতিমধ্যে ৫টি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে। এসব পুলিশ ক্যাম্প স্থাপিত হলে ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হবে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, এক সাথে বেশি রোহিঙ্গা বসবাসের কারণে ক্যাম্পের অস্থিরতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, অস্ত্রধারী ও সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের কাছে এখন সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। তাই প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত তিনি ক্যাম্পে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের দাবি জানান।

চাকমা পল্লীতে হামলার ঘটনায় মামলা : এদিকে উপজেলার পালংখালি ইউনিয়নের থাইংখালী তাজনিমারখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন তেলখোলা এলাকার চাকমা পল্লীতে হামলার ঘটনায় অজ্ঞাত ৬’শ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়েন করা হয়েছে। গত রবিবার রাতে চাকমা পল্লীর হেডম্যান বাউনু চাকমা বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

উখিয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল খায়ের জানান, গত শনিবার ১০/১৫ জনের একটি রোহিঙ্গার দল চাকমা পল্লীর আশপাশের গভীর পাহাড়ে লাকড়ি সংগ্রহ করতে যায়। এসময় তারা চাকমা স¤প্রদায়ের লোকজনের পানের বরজের সবকটি খুঁটি উপড়ে ফেলে নিয়ে যায়। এছাড়া রোহিঙ্গারা চাকমা সম্প্রদায়ের লোকজনের কলাবাগান, আদা, হলুদ ও মরিচ সহ অন্যান্য সবজী ক্ষেতেও লুটপাট চালায়।

ওসি আরো জানান, এই ঘটনায় রোহিঙ্গাদের লুটপাটে চাকমা সম্প্রদায় লোকজন বাধা দিলে কথাকাটিসহ ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এই হামলার ঘটনায় দুইজন আহত হন। এরা হলেন উমংচা চাকমার ছেলে সুখীনু চাকমা (৩২),রবিচান চাকমার ছেলে ক্যাচিং চাকমা (৫৫)। তারা এখন চিকিৎসা শেষে বাড়িতে রয়েছে। চাকমা পল্লী এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।