সখীপুর উপ কারাগারের জমি দখল করে বাস স্ট্যান্ড, কেজি স্কুল ও বাজার

সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৬:৫৬ পিএম, বৃহস্পতিবার, ১ মার্চ ২০১৮ | ২২১

সখীপুর উপ-কারাগারটি গত ২৮ বছর ধরে অনাদর ও অবহেলায় পড়ে আছে । জাতীয় পার্টি হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ সরকারের আমলে ওই উপ-কারাগারটি দুই দশমিক ২৩ একর জমিতে নির্মিত হয়।

বর্তমানে ওই কারাগারের কার্যালয়, সহকারী জেল সুপারের আবাসিক ভবন ও পরিত্যাক্ত মাঠ ব্যবহার করে কেজি স্কুল, মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড, ক্লাব ও বাজার গড়ে তোলা হয়েছে।

এদিকে গত ২০০৫ সালে স্থানীয় উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় টাংগাইল গনপূর্ত বিভাগ থেকে কাগজে কলমে কারাগারটি বুঝে নিলেও বাস্তবে তাদের দখল নেই। ফলে গত ২৮ বছরে ওই কারাগারটি সরকারের কোন কাজেই আসেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কারাগারের অফিস কক্ষটি ব্যক্তি মালিকাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিন্ডার গার্টেন কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছেন। কারাগারের সহকরী জেল সুপারের আবাসিক ভবনটির এক অংশে উপজেলা মাইক্রোবাস মালিক শ্রমিক সমিতি , আরেক অংশে স্থানীয় যুবকদের ক্লাব ও অপর অংশে স্থানীয় মসজিদের ইমাম দখল করে আছেন।

অন্যদিকে পরিত্যাক্ত মাঠের এক অংশে বাজার, অপর অংশে শতাধিক মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড ও কারাগারের চারদিকে সীমানা প্রাচীর না থাকায় আশেপাশের বাসা-বাড়ির লোকজনও আংশিক জমির দখল নিয়ে ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, ১৯৮৫-৮৭ অর্থবছরে প্রায় কোটি টাকা ব্যায়ে দুই দশমিক ২৩ একর জমিতে কারাগারটির ভবন নির্মানের কাজ শুর হয়। ২৫ জন কয়েদীর জন্য ওই কারাগার ভবনটি ১৯৮৮ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হয়। কিন্তু রাজনীতির পটপরিবর্তনের কারনে কারাগারটি আর আলোর মুখ দেখেনি। ফলে দীর্ঘদিন অযতন্ত ও অবহেলায় পড়ে থাকায় কারাগারসহ অন্যান্য ভবনের দেয়াল খসে পড়ছে, লোহার গেটগুলো মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। কাঠের জানালাগুলোও পচে নষ্ট হয়ে গেছে। কারাগারের ভিতরে ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী,পানির ট্যাংকসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি চুরি হয়ে গেছে। কারাগারের ভিতরে ঘাস গজিয়ে গভীর জঙ্গলে পরিণত হয়েছে।

টাংগাইল গণপূর্ত বিভাগের তৎকালীন কার্যসহকারী মো. তহিজ উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ২০০৫ সালের ২৬ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে টাংগাইল গণপূর্ত বিভাগ সখীপুর উপজেলা সমাজ সেবা কার্যালয়কে শিশু পরিবার ও নিরাপদ আবাসন কেন্দ্র বা সেফ হোম গড়ার লক্ষে ওই কারাগারটি লিখিতভাবে হ¯ত্মাšত্মর করেন। দীর্ঘ ১৪ বছর আমি ওই কারাগারের দায়িত্বে ছিলাম।

এ ব্যাপারে সখীপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মুনসুর আহমেদ বলেন, কারাগারের জমি সরেজমিনে পরিমাপ বুজে নেওয়ার জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সরকারের কাছ থেকে শিশু পরিবার ও নিরাপদ আবাসন কেন্দ্র বা সেফ হোম গড়ার কোন নির্দেশনা এখনও পাননি বলে তিনি জানান।

এ ব্যাপারে কারাগারের অফিস কক্ষ দখলে থাকা পাইলট বিদ্যা নিকেতন নামে কেজি স্কুলের মালিক ফজলুল হক বলেন, স্থানীয় প্রসাশনের লিখিত অনুমতি নিয়েই আমি জনস্বার্থে অস্থায়ীভাবে অফিস কক্ষটি ব্যবহার করছি। সরকার চাইলে যেকোন সময় ছেড়ে দেব।

মাইক্রোবাস শ্রমিক সমিতির নেতা মো. শাহজাহান আলী মিয়া একই সুরে বলেন, স্থানীয় প্রসাশনের অনুমতি নিয়েই ওই কারাগারের জেল সুপারের আবাসিক ভবন ও পরিত্যাক্ত মাঠ ব্যবহার করছি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা মৌসুমী সরকার রাখী বলেন , এ বিষয়ে খোঁজ -খবর নেওয়া হচ্ছে। কেউ অবৈধভাবে জমি দখল করে থাকলে অচিরেই তাদের উচ্ছেদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সজল আহমেদ/পিএইচ