যুদ্ধবিরতিতেও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা অব্যাহত থাকবে: দক্ষিণ আফ্রিকা


যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতি চলছে। তবে অব্যাহত যুদ্ধবিরতির মধ্যেও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে (আইসিজে) গণহত্যা মামলার কার্যক্রম চালিয়ে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা। খবর আল জাজিরা।
যুদ্ধবিরতির ফলে গাজার ধ্বংসপ্রাপ্ত এলাকায় ফিরছে ফিলিস্তিনিরা। তবে এ চুক্তি স্থায়ী ও অর্থবহ শান্তি বয়ে আনতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার অনেক রাজনীতিক ও সমর্থকের মধ্যে। আর তাই যুদ্ধবিরতির এক সপ্তাহ পরেও, ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনের উপর সংঘটিত অপরাধের জন্য দায়ী করার চাপ অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার।
গত মঙ্গলবার কেপ টাউনে প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বলেন, গঠিত শান্তি চুক্তিকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। তবে তা আন্তর্জাতিক আদালতে চলমান মামলার উপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।
আর দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী নালেদি পানডর আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি অবশ্যই স্বাগতযোগ্য পদক্ষেপ, কারণ আমরা হত্যা বন্ধ করতে চাই। কিন্তু ফিলিস্তিনের সংগ্রাম শুধু চলমান যুদ্ধ ও সাম্প্রতিক দুই বছরের গণহত্যার ব্যাপার নয়। তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণ, স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের অধিকার রয়েছে। যুদ্ধবিরতি এ মূল বিষয়গুলোর সমাধান করতে পারবে না।
২০২৩ সালে গাজায় যুদ্ধ চলাকালীন, ইতিহাস গড়ে প্রথম দেশ হিসেবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যার অভিযোগে তোলার সিদ্ধান্ত নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে ‘ড্রিম টিম’ বলে খ্যাত দক্ষিণ আফ্রিকার আইনজীবী দল। দলটির মধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আইন প্রফেসর জন ডুগার, সিনিয়র কাউন্সেল ম্যাক্স দ্যু প্লেসিস ও ব্যারিস্টার আদিলা হাসিমও রয়েছেন।
জানুয়ারি মাসে মামলার শুনানীতে আইসিজে জানিয়েছিল, গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর কর্মকান্ড গণহত্যা বলে অভিহিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তা প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। পরে আরো দুটি আদেশে গাজায় খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা ও রাফাতে হামলা বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়।
যদিও ইসরায়েল কোনো আদেশই মেনে চলেনি। মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের অনুসন্ধানে এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে ইসরায়েলের ওপর এ মামলার প্রভাব পড়েছে ভিন্নভাবে। ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি স্থগিত করেছে বেলজিয়াম সরকার, আর জাপানের একটি প্রতিষ্ঠান ইলবিট সিস্টেমসের সঙ্গে চুক্তি বিচ্ছিন্ন করেছে।
আইসিজেতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যা প্রমাণ করা বেশ কষ্টসাধ্য কাজ। এ লক্ষ্যে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে ৫০০ পাতার দলিল জমা দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০২৬ সালের ১২ জানুয়ারি আত্মপক্ষ সমর্থন করে যুক্তি জমা দেবে ইসরায়েল। ২০২৭ সালে এ মামলার মৌখিক শুনানি হবে। চূড়ান্ত রায় ২০২৭ বা ২০২৮ সালের মধ্যে আসতে পারে।