আল জাজিরার প্রতিবেদন
পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের শর্ত বাদ দিলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় রাজি কিম


উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি সিউলের পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগ করার শর্ত থেকে সরে আসে, তবে তিনি আলোচনায় বসতে রাজি। রোববার পিয়ংইয়ংয়ের সুপ্রিম পিপলস অ্যাসেম্বলিতে দেয়া ভাষণে কিম এ কথা জানান।
কিম বলেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্র আমাদের নিরস্ত্রীকরণের অবাস্তব চিন্তা ছেড়ে বাস্তবতা মেনে নেয় এবং সত্যিকারের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চায়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বসতে না চাওয়ার কোনো কারণ নেই।’
সরকারি কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ)-এর বরাতে আল জাজিরা আরো জানিয়েছে, কিম একই সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়েও মন্তব্য করেন। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে দুজনের মধ্যে তিনবার সাক্ষাৎ হয়েছিল। কিম বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে, আমার এখনও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিয়ে সুন্দর স্মৃতি আছে।’
তবে ইতিবাচক বার্তার মাঝেও উত্তর কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ সামরিক মহড়াকে কঠোর সমালোচনা করেছে। একে ‘বেপরোয়া আগ্রাসনের মহড়া’ বলে আখ্যায়িত করেছেন কিম জং উনের বোন কিম ইয়ো জং।
এদিকে, উত্তর কোরিয়ার নতুন অস্ত্র সংগ্রহ বন্ধ করার কার্যকর পদক্ষেপ খুঁজছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং। সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারগুলোতে তিনি বলছেন, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পূর্ণ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের দাবি তুলে ধরার বদলে আরো বাস্তবসম্মত লক্ষ্য বিবেচনা করা উচিৎ।
বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, যে সময় আমরা নিরস্ত্রীকরণ দাবি পূরণে ব্যয় করছি সেসময়ে উত্তর কোরিয়াকে নতুন পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন বন্ধ করাতে পারলে স্পষ্ট সুফল পাওয়া যাবে।
রয়টার্সকে দেয়া আরেক সাক্ষাৎকারে লি স্বীকার করেন, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ব্যর্থ হয়েছে, উত্তর কোরিয়া এখন প্রতি বছর আনুমানিক ১৫ থেকে ২০টি নতুন পারমাণবিক অস্ত্র যোগ করছে। তিনি বলেন, বাস্তবতা হলো নিষেধাজ্ঞা ও চাপ কোনো সমাধান আনতে পারেনি; বরং সমস্যাকে আরো গভীর করেছে।
একই কথা ধ্বনিত হয়েছে কিমের ভাষণেও। নিজের ভাষণে কিম জোর দিয়ে বলেন, নিষেধাজ্ঞা উত্তর কোরিয়াকে আরো শক্তিশালী ও সহনশীল করেছে। যদি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে কিছু করতে হয় তবে শত্রুদের সঙ্গে কখনোই কোনো আলোচনায় বসা হবে না।
জাতিসংঘ প্রায় ২০ বছর আগে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কিন্তু গত বছর কিম ঘোষণা দেন, শত্রুতাপূর্ণ শক্তির বিরুদ্ধে রক্ষার জন্য তিনি দেশের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার গুণিতক হারে’ বাড়াবেন।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিপ্রি) সম্প্রতি সতর্ক করেছে, বিশ্বের নয়টি পারমাণবিক রাষ্ট্র—চীন, ফ্রান্স, ইসরায়েল, ভারত, উত্তর কোরিয়া, পাকিস্তান, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র—নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতার ঝুঁকিতে রয়েছে।