পরিবর্তন আনলেও ক্ষমতা ও রাজনীতির অংশ হতে চান না নেপালের তরুণরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:০৮ পিএম, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১৭০

জেনজি আন্দোলনের মাধ্যমে নেপালের রাজনীতিতে পরিবর্তন আনলেও সরাসরি ক্ষমতা কিংবা রাজনীতির অংশ হচ্ছেন না দেশটির তরুণরা। রাষ্ট্র ও সরকারের কাঠামো পুনর্গঠনে তারা মতামত দিচ্ছেন। মত দিচ্ছে নতুন মন্ত্রীসভা গঠনেও। সরাসরি সরকারের না থেকেও ভবিষ্যৎ নেপালের রাজনৈতিক রূপরেখা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে তরুণ প্রজন্ম। জনগণের কণ্ঠস্বর বা সরকারের প্রেসার গ্রুপ হিসেবেই কাজ করতে চান তারা।

মূলত এক প্রাক্তন ডিজে এবং তার তুলনামূলক স্বল্প পরিচিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘হামি নেপাল’ (আমরা নেপাল) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তরুণদের মাঝে ঝড় তুলে উৎখাত করে ফেলল নেপালের সরকার। জনপ্রিয় গেমার প্ল্যাটফর্ম ডিসকর্ড ও ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করে তারা বিশাল বিক্ষোভ সংগঠিত করে। যার ফলশ্রুতিতে প্রধানমন্ত্রী পদ ছাড়তে বাধ্য হন কে.পি. শর্মা অলি।

৩৬ বছর বয়সি সুদান গুরুং, হামি নেপালের প্রতিষ্ঠাতা, আগে ছিলেন ডিজে। ২০১৫ সালের ভূমিকম্প ও কভিড মহামারির সময় তিনি নাগরিক ত্রাণ কার্যক্রম সংগঠিত করেছিলেন। এবার তিনি তরুণদের সঙ্গে যোগ দিয়ে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের মুখ হয়ে ওঠেন।

বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে গুরুং বলেন, ‘ক্ষমতা থাকবে জনগণের হাতে। প্রত্যেক দুর্নীতিবাজ রাজনীতিককে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।‘

বিক্ষোভকারীরা ভিপিএন ব্যবহার করে সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করে, নির্দেশনা ছড়ায় এবং হাসপাতালে যোগাযোগের নম্বর শেয়ার করে। ডিসকর্ডে শেয়ার করা বার্তাগুলো এতটাই প্রভাবশালী হয় যে জাতীয় টেলিভিশনেও তা উল্লেখ করা হয়।

১৮ বছর বয়সি ছাত্র করণ কুলুঙ রাই বলেন, ‘ডিসকর্ডে আমি এক গ্রুপে আমন্ত্রণ পাই, সেখানে ৪০০ জন ছিল। তারা আমাদের সংসদ থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে মিছিলে যোগ দিতে বলে।‘

হামি নেপালের তরুণ নেতারা এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সরাসরি প্রভাব ফেলছেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধানকে রাজি করিয়ে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগে সহায়ক হন। এর মাধ্যমে নেপাল পেল তার প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী।

রোববার গুরুং ও তার দল নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের আলোচনায় ছিলেন। হ্যামি নেপালের বক্তব্য— ‘প্রক্রিয়াটি সতর্কতার সঙ্গে চলছে, যাতে যোগ্য ও দক্ষ তরুণরা অন্তর্ভুক্ত হয়।‘

গ্রুপের একজন সদস্য বলেন, ‘কার্কি এবং গ্রুপটির সদস্যদের মধ্যে বৈঠক চলছে। আমরা শিগগিরই মন্ত্রিসভা চূড়ান্ত করব।‘ গুরুং এবং কার্কি তাদের মোবাইল ফোনে পাঠানো প্রশ্নের তাৎক্ষণিক কোনো উত্তর দেননি।

বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন মূলত ২০-এর কোটার তরুণরা। গুরুংয়ের বয়স তাদের চেয়ে কিছুটা বেশি। তিনি নিজে বা তার দল মন্ত্রিসভার কোনো পদে যাবেন না বলে জানিয়েছেন। ‘আমরা রাজনীতিবিদ হতে চাই না। আমরা জাতির কণ্ঠস্বর, ক্ষমতা চাই না,’ বলেন ২৬ বছর বয়সী স্বেচ্ছাসেবক রনেশ প্রধান।

আন্দোলনের অন্যতম তরুণ মুখ ছিলেন ২৪ বছর বয়সী ক্যাফে মালিক ওজাস্বী রাজ থাপা এবং আইনশাস্ত্র স্নাতক রেহান রাজ দাঙ্গল। দ্রুতই এই বিক্ষোভ আন্দোলনের একজন বলিষ্ঠ নেতা হিসেবে উঠে আসা থাপা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন যে, বিচার বিভাগ স্বাধীন নয় এবং অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর এর স্বাধীনতা নিশ্চিত করা একটি প্রধান অগ্রাধিকার হবে। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘আমাদের সংবিধানে কিছু পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হতে পারে। তবে আমরা সংবিধান ভেঙে দিতে চাই না।‘