জুলাই সনদ নিয়ে সমঝোতায় আসতেই হবে : প্রধান উপদেষ্টা

আলোকিতপ্রজন্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:৫৬ পিএম, রোববার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১৮৬

জুলাই সনদ থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় নেই বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, যে সমঝোতার রাস্তা শুরু করেছি, তা থেকে বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ সমঝোতায় আসতেই হবে। আমি হয়তো গায়ের জোরে বলছি কিন্তু কথাটা ফেলে দেওয়ার উপায় নেই। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান আমাদের নবযাত্রার সুযোগ দিয়েছে। এর একমাত্র সমাধান সমঝোতার পথে গিয়ে নতুন বাংলাদেশ তৈরি করা।

রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের তৃতীয় ধাপের সংলাপের দ্বিতীয় দিনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা জানান, নানান যুক্তি থাকতে পারে, কিন্তু সমাধানের পথে থাকতে হবে। অনেকের মনে কষ্ট হতে পারে, কিন্তু পরে শান্তি আসবে, দেশ শান্তি পাবে। দেশের শান্তিই বড় শান্তি। বিতর্কের মধ্যে থেকে গেলে সেটি যে কোনো সময় বিস্ফোরিত হতে পারে।

তিনি বলেন, প্রথমে আমি নিশ্চিত ছিলাম না এ প্রক্রিয়া থেকে কী পাওয়া যাবে। ভাবছিলাম কথার শুরুর পর সেটি কলাপস করে যাবে কিন্তু দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার পর আমি আভির্ভুত হয়েছি; সিদ্ধান্ত নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি চলছে। ঐকমত্য কমিশনের কাজ বিশ্বব্যাপী নজির হয়ে থাকবে। এটি যেন খুতোয়ালা নজির না হয়, এটা আমার আবেদন। এমন নজির সারাবিশ্ব দেখবে এবং অনুসরণ করার চেষ্টা করবে। আপনারা মূল কাজটি সম্পন্ন করেছেন; এখন সামান্য পথ বাকি। সবকিছু নির্ভর করছে শেষ অংশটুকুর ওপর।

প্রধান উপদেষ্টা রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে বলেছেন, আপনারা দীর্ঘ পথ অতিক্রম করেছেন। বাকি রাস্তাটুকু যাতে সুন্দরভাবে সমাপ্ত করে পৃথিবীর জন্য নজির সৃষ্টি করতে পারেন। যে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে সেটা শুধু আমাদের দেশের নয়; দুই দিন আগে নেপালেও একই ধরনের উদ্যোগ শুরু হয়েছে এবং ভবিষ্যতেই এমন সমস্যার সম্মুখীন হবে আরো অনেক দেশ। তাই আমাদের সমাধানের পথ সবাই মনোযোগ সহকারে দেখবে।

ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন কার্যকর করতে হলে সেটিকে ‘মহোৎসবের নির্বাচন’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, নির্বাচন যদি আমরা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারি, তাহলে তা একটি মহোৎসব ও জাতির সত্যিকারের নবজন্ম হবে। এত ত্যাগ ও আত্মত্যাগ তখনই স্বার্থক হবে।

ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানের আলাদিনের চেরাগের দৈত্য তৈরি করে দিয়েছে মন্তব্য করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা তার কাছে কি চাইব? আমরা কি তার কাছে এককাপ চা চাইব? না দুনিয়া পাল্টে ফেলতে চাইব। এটি হল আমাদের হাতে। কোনো বিষয় ছোট আকারে না রেখে, এই জাতিকে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে তৈরি করে দিয়ে যাব। এ সুযোগটা এসছে। সেখানে ছোটখাট বিষয়ের মধ্যে আটকে গিয়ে আমরা যেন মূল বড় জিনিস থেকে হারিয়ে না ফেলি। বড় জিনিসের জন্য যাই। যে এই জাতিকে আমরা ভাবে চালু করে দিলাম এটা খালি উপর থেকে উঠবে, ডানে-বায়ে দরকার নেই। ওই অংশটা করেন।

সবাইকে একমত হয়ে সনদ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টাবলেন, তাহলে নির্বাচন স্বার্থক হবে। যতই আমরা নোক্তা দিয়ে যাই কিন্তু আমাদের মহান ঐক্য দরকার। কি চাই সেটা ঠিক করলেই, কিভাবে করবে তা দৈত্য ঠিক করবে। কোনো অসুবিধা হবে না। আমরা বিশেষজ্ঞদের বলব, এটা করে দাও। সে পথে অগ্রসর হতে পারব।

কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন।

সুত্র:বণিক বার্তা