খরা ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় যুদ্ধ-পরবর্তী সিরিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:২০ পিএম, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ৯৮

দীর্ঘ ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধের পর যখন সিরিয়া স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার চেষ্টা করছে, তখন দেশটিতে দেখা দিয়েছে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরা। এতে দেশটির কৃষি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে খাদ্য নিরাপত্তা। মধ্যপ্রাচ্য ও পূর্ব ভূমধ্যসাগরের বড় অংশজুড়ে খরা পরিস্থিতির কারণে নদী ও হ্রদগুলোকে শুকিয়ে গেছে। ফসল নষ্ট হয়েছে। বড় শহরগুলোতে দিনের পর দিন পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। খবর এপি।

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের উপকণ্ঠে সাইয়িদা জায়নাব এলাকার কৃষক মনসুর মাহমুদ আল-খাতিব বলেন, ‘যুদ্ধের সময়ও জমিতে যেতে পারতাম না। সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো রাস্তা আটকে রাখত। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর সে সমস্যা দূর হয়েছে। কিন্তু খরা তার কৃষি খামারকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সেচের কুয়াগুলো শুকিয়ে গেছে।’

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) কর্মকর্তা জালাল আল-হামুদ বলেন, যুদ্ধের কারণে কৃষকরা এমনিতেই অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত। এ খরা তাদের টিকে থাকার শেষ অবলম্বনটুকুও কেড়ে নিচ্ছে।

২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে সিরিয়ার কৃষকরা প্রতি বছর গড়ে ৩৫ থেকে ৪৫ লাখ টন গম উৎপাদন করত, যা দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট ছিল। যুদ্ধ চলাকালে তা কমে ২২ থেকে ২৬ লাখ টনে নেমে আসে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণের জন্য সরকারকে তাদের চাহিদার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ গম আমদানি করতে হচ্ছে। কিন্তু চলতি বছর ফসল মাত্র ১০ লাখ টন হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর ফলে সরকারকে আমদানির জন্য আরো বেশি অর্থ ব্যয় করতে বাধ্য করবে।

সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও ভোক্তা সুরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মুদার দায়ুব বলেন, এ বছরের উৎপাদিত গম মাত্র দুই থেকে তিন মাসের জন্য যথেষ্ট হবে। বর্তমানে সরকার বিদেশ থেকে গম আমদানির জন্য চুক্তি করছে। প্রতিবেশী দেশগুলোসহ অন্যান্য দেশ থেকে অনুদানের ওপর নির্ভর করছে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিরিয়ার অর্ধেক মানুষই খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এমন পরিস্থিতিতে শুধু্ আমদানি ও সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল থাকা দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি এবং এটি টেকসই নয় বলে সতর্ক করেছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা সাঈদ ইব্রাহিম।