জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব শৈশবের মতো হারিয়ে যাচ্ছে জোনাকি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:০৮ পিএম, সোমবার, ১১ আগস্ট ২০২৫ | ২০৩

গ্রীষ্মের সন্ধ্যায় মাঠ, বন কিংবা উঠানে জোনাকির ঝিলমিল আলো শৈশবের কত স্মৃতি, বিস্ময় আর আনন্দের অংশ! কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন, আলো দূষণ, কীটনাশকের ব্যবহার ও আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে সেই জোনাকি আজ বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। ঠিক যেমন হারিয়ে যায় আমাদের শৈশব। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন, এভাবে চলতে থাকলে এক সময় গ্রীষ্মের শৈশবের স্মৃতি জাগানিয়া এ আলো হয়তো গল্পে-গানে সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে। খবর দ্য গার্ডিয়ান।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কিছু এলাকায় বেশি বৃষ্টিপাতের কারণ জোনাকির উপস্থিতি বেড়েছে। তবে গবেষকরা বলছেন, এটি দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতা নয়। বরং স্বল্পমেয়াদী আবহাওয়ার প্রভাবে তৈরি পরিস্থিতি বলা যেতে পারে। উত্তর আমেরিকায় জোনাকির অন্তত ১৮টি প্রজাতি এরই মধ্যে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে পড়েছে। এর বাইরে অর্ধেকের বেশি প্রজাতি নিয়ে পর্যাপ্ত তথ্যও নেই। অর্থাৎ ঝুঁকি আরো বড় হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, জলবায়ু পরিবর্তন সরাসরি জোনাকির জীবনচক্র প্রভাবিত করছে। খরা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও অনিয়মিত মৌসুমি বৃষ্টি এদের প্রজনন ও বেঁচে থাকার জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মানুষের তৈরি নানা প্রতিবন্ধকতা—আলো দূষণ, কৃষি ও বাগানে অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার, আর প্রাকৃতিক আবাসস্থল ধ্বংস। রাতের কৃত্রিম আলো জোনাকির যোগাযোগ ও সঙ্গী খোঁজার ক্ষমতাকে বিঘ্নিত করে। ফলে প্রজনন ব্যাহত হয়।

প্রাচীনকাল থেকে বিশ্বের নানা সংস্কৃতিতে জোনাকিকে আনন্দ, সৌন্দর্য ও বিস্ময়ের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। জাপানে এগুলো ভালোবাসা ও শহীদের স্মৃতির প্রতীক। যুক্তরাষ্ট্রে গ্রীষ্মের উষ্ণ রাতে শিশুদের কাচের জারে জোনাকি ধরা এবং কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দেয়ার চল এখনো আছে। এর মধ্য দিয়ে শিশুরা পাচ্ছে প্রকৃতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হওয়ার এক সহজ ও আনন্দময় অভিজ্ঞতা।

১৯৮৮ সালের জাপানি অ্যানিমেশন গ্রেভ অব দ্য ফায়ারফ্লাইসে জোনাকি জীবন, আশা ও ক্ষণস্থায়িত্বের প্রতীক হিসেবে ফুটে উঠেছে। যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞে দুই শিশুর অন্ধকার জীবনে জোনাকির ক্ষণিকের আলো যেন প্রকৃতির সৌন্দর্য ও হারিয়ে যাওয়া শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়। জাপানি সংস্কৃতিতে এভাবেই জোনাকি গভীর আবেগ ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সংযুক্ত।

কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জোনাকির সংখ্যা কমে যাওয়ায় জোনাকির আলোআঁধারির দৃশ্য অনেক জায়গায় বিরল হয়ে গেছে। ফলে শিশুদের শৈশবের সেই আলো-খেলা ও বিস্ময়ের মুহূর্তগুলো ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।

তবে জোনাকির আলোতে এখনো আশা রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ছোট ছোট উদ্যোগও জোনাকি রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে। বাড়ির আঙিনায় ঘাস বাড়তে দেয়া, শুকনো পাতা না সরিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে রেখে দেয়া, কীটনাশক ব্যবহার কমানো ও রাতের কৃত্রিম আলোর ব্যবহার সীমিত করা। কারণ জোনাকির অনেক প্রজাতি পাতার নিচে মাটিতে পিউপা অবস্থায় সময় কাটায়। পাতা সরিয়ে ফেললে সেই ক্ষুদ্র আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের আরকানসাস অঙ্গরাজ্যে মাস্টার গার্ডেনাররা জোনাকি সংরক্ষণের জন্য বিশেষ অভয়ারণ্য তৈরি করেছেন। আবার মেরিল্যান্ড রাজ্যে সরকার নতুন আইন করেছে, যাতে রাজ্য তহবিল দিয়ে কেনা আলোতে আলোক দূষণ কমানোর মানদণ্ড মেনে চলতে হবে। গবেষকরা মনে করেন, এসব প্রচেষ্টা মানুষের সচেতনতা ও আগ্রহ বাড়াবে।