মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নির্মূলে ব্যতিক্রমি কাজ করে চলেছেন ওসি

কালিহাতীতে ৮ মাসে মাদকের মামলা ১৭৮- গ্রেফতার ৩৫০

কালিহাতী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০১:৪২ পিএম, মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ | ৪৭৪

মাদকের ভয়াল থাবা যুব সমাজকে গ্রাস করেছে। মাদকের কুÑপ্রভাবে সমাজে বেড়ে চলেছে অন্যায় এবং সমাজের অবক্ষয়। মাদকের অবাধ বিস্তারের কারনে জাতির উজ্জল ভবিষ্যত আজ ম্লান হতে চলেছে। শুধু মাত্র একজন মাদকাসক্ত সন্তান সমগ্র পরিবারের জন্য বয়ে আনছে সীমাহীন দূর্ভোগ ও হতাশা। মাদকের এই করাল গ্রাস যাতে আমাদের সমাজ আক্রান্ত হতে না পারে তাই টাঙ্গাইলের কালিহাতী থানায় দায়িত্বরত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর মোশারফ হোসেন মাদক,জুয়া,সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্বে জিরো টলারেন্সে থেকে ব্যতিক্রমি কাজ করে দায়িত্ব পালন করে আসছে।

আর তার এ পদক্ষেপে বিগত ৮ মাসে ১৭৮টি মাদক দ্রব্যের মামলায় ৩৫০ জন মাদক ব্যাবস্যায়ীকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে পুলিশ । পাশাপাশি আইন শৃংখলার উন্নতির জন্য উপজেলার ২ টি পৌরসভা ও ১৩ টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে মাদক, জুয়া, বাল্যবিবাহ, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নির্মূলে ২৪০ টি জনসচেতনতা মূলক উঠান বৈঠক সম্পূর্ন করেছেন। যার ফলে কালিহাতী থানার প্রত্যেকটি অঞ্চলে অপরাধ প্রবণতা কমে আসছে। যা কালিহাতী থানায় অপরাধ নির্মূলে সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি সমাজের এই অবক্ষয় রোধে মাদকের বিরুদ্বে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, জনসমাবেশ, ছাত্রসমাবেশসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকদের সম্পৃক্ত করে সচেতনতামূলক সভা ও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানসহ ইত্যাদি কার্যক্রম করে আসছেন।

জানাগেছে, মীর মোশারফ হোসেন ২০১৭ সালের ২০ মে কালিহাতী থানায় অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পরপরই তিনি কালিহাতী উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিক,রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকজনদের সাথে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি উন্নতির লক্ষে বিভিন্ন সময় মতবিনিময় করেন।

তার প্রধান লক্ষ্যই মাদকমুক্ত কালিহাতী থানা ও মাদকের বিরুদ্ধে জনগনকে সোচ্চার করা। তারই ধারাবাহিকতায় উপজেলার ২ টি পৌরসভা ও ১৩ টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ২৪০ টি জনসচেতনতা মূলক উঠান বৈঠক সম্পূর্ন করেছেন। ওসি মীর মোশারফ হোসেনের সততা, ন্যায় নিষ্ঠতা ও কর্মদক্ষতার কারনে ৮ মাসে ১৭৮টি মাদক দ্রব্যের মামলায় ৩৫০ জন মাদক ব্যাবস্যায়ী,২৬৮ জন সেবনকারীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন পুলিশ ।এছারাও ১৯৭ জন জুয়ারুকে গ্রেফতার ও ১,২২০ টি ওয়ারেন্ট নিষ্পত্তি করেছে থানা পুলিশ।

যা বিগত যেকোন সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওসির যোগদানের আগে বিভিন্ন হাট-বাজার, চায়ের দোকান, অলিতে-গলিতে মাদক দ্রব্যের সয়লাব ছিল। পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও জনগনের সচেতনতার জন্য ওইসব স্থানে সেগুলো এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না। এছাড়াও তিনি মাদকমুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো: মাহবুব আলম পিপিএম বার (অতিরিক্ত ডিআইজি) এর নির্দেশে উপজেলার বিভিন্ন স্কুল,কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিল, মন্দির ও কীর্ত্তনে বাল্য বিবাহ, জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস বিরোধী এবং মাদকদ্রব্যের ভয়াবহতা ও কুফল সম্পর্কে জনসচেতনামূলক আলোচনা করে আসছেন।

এব্যাপারে কালিহাতী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর মোশারফ হোসেন জানান,তিনি কালিহাতী থানায় যোগদান করার পর থেকেই তার প্রধান লক্ষ্য মাদকমুক্ত সমাজ গড়া। কারন আজকের এই যুবসমাজই আগামীদিনে এদেশে নেতৃত্ব দিবে। তাই মাদকের এই ভয়াল থাবা থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করার জন্য টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো: মাহবুব আলম পিপিএম বার(অতিরিক্ত ডিআইজি) এর নির্দেশে যুবসমাজের মধ্যে মাদকের কুফল সম্পর্কে ধারনা দেয়ার জন্য নিয়মিত উঠান বৈঠকসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন।

এছারাও ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে ইতিপূর্বে কমিউনিটি পুলিশিং সমাবেশ ও ডে পালন করা হয়েছে। এদিকে থানায় প্যারেড গ্রাউন্ড, অত্যাধুনিক গোলঘর, পুকুর ভরাট, স্যালেটিং ডাইসসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড চলমান রয়েছে। তিনি আরো জানান, উপজেলার প্রত্যেক এলাকার জনগনকে সাথে নিয়ে এবং কমিউনিটি পুলিশের সমন্বয়ে অপরাধ ও মাদক নির্মূলে পুলিশ সর্বাত্বক কাজ করে যাচ্ছে।

এব্যাপারে স্থানীয় সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি ও কমিউনিটি পুলিশিং এর সকল সদস্যরা সর্বাত্বক সহযোগীতা করায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশসহ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন। তিনি অভিভাবকদের আপনার সন্তান সন্ধ্যার পর কোথায় যায়, কি করে, কার সাথে মিশে, সে মাদকাসক্ত কি-না এগুলোর প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখারও আহবান জানিয়েছেন।

শুভ্র মজুমদার/এইচএইচ