শোকাচ্ছন্ন প্রবাসী কমিউনিটি
নিউ ইয়র্কবাসীকে বাঁচাতে গিয়ে নিহত বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত দিদারুল


নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের একটি অফিস ভবনে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় বন্দুকধারীর হামলায় নিহত হয়েছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের (এনওয়াইপিডি) কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম (৩৬)। ওই হামলায় আরো তিনজন নিহত এবং বন্দুকধারী নিজেও পরে আত্মহত্যা করেন। এই ঘটনায় নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশী ও মুসলিম কমিউনিটিতে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
নিউ ইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেছেন, ‘অফিসার ইসলাম নিউ ইয়র্কারদের জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তিনি এই শহরের চেতনার প্রতীক—একজন সত্যিকারের নিউ ইয়র্কার।‘
তিনি আরো বলেন, ‘আমি তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছি এবং বলেছি, তিনি আমাদের কাছে একজন নায়ক। আমরা তাকে শ্রদ্ধা করি, কারণ তিনি নিজের জীবন বাজি রেখে অন্যদের নিরাপদ রাখার কাজ করছিলেন।‘
এনওয়াইপিডি কমিশনার জেসিকা টিশ জানান, পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে পুলিশ বিভাগে কর্মরত ছিলেন। তার স্ত্রী বর্তমানে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা এবং তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। পরিবারকে একটি ভালো ভবিষ্যৎ দেয়ার স্বপ্ন নিয়েই তিনি বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন।
নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, দিদারুল ইসলাম শুধু পুলিশ অফিসার নন, নিউ ইয়র্কের পার্কচেস্টার এলাকার বাংলাদেশী কমিউনিটির একজন পরিচিত মুখ ছিলেন। মসজিদে সক্রিয় অংশগ্রহণ, নতুন অভিবাসীদের চাকরি খোঁজার পরামর্শ দেয়া, যুব সমাজকে পুলিশের ট্রাফিক এজেন্ট হিসেবে যোগ দিতে উৎসাহিত করা—এসব ছিল তার দৈনন্দিন জীবনের অংশ।
তার বন্ধু ও প্রতিবেশীরা জানান, দিদারুল ইসলাম আগে একটি স্কুলে নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ করতেন। সেখান থেকেই তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। বন্ধু মারজানুল করিমের ভাষ্য— ‘দিদারুল বলতেন, তিনি তার পরিবারের জন্য এমন কিছু রেখে যেতে চান যাতে তারা গর্ব করতে পারে।‘
এক প্রতিবেশী জানান, হজ পালনের পর দিদারুল ইসলাম তাকে একটি জায়নামাজ উপহার দিয়েছিলেন। এটি ছিল তার বিশ্বাস, ধর্ম ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রতীক।
দিদারুলের বাসভবনে সোমবার রাতভর চলেছে শোক প্রকাশ। মসজিদের ইমাম, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও সহকর্মীরা একে একে এসে শ্রদ্ধা জানান। দিদারুলের স্ত্রী ও সন্তানদের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এসেছেন অনেকেই।
নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগও দিদারুল ইসলামকে সম্মান জানিয়ে বলেছে, ‘তিনি নিউ ইয়র্কারদের রক্ষা করতে গিয়ে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তার এই আত্মত্যাগ চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।‘