জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা
রাখাইনে সাহায্য প্রদানের ব্যাপারে এখনো কোনো চুক্তি হয়নি


রাখাইনে সাহায্য প্রদানের ব্যাপারে এখনো কোনো চুক্তি হয়নি বলে জানিয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, চুক্তির জন্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সম্মতি এবং সহায়তা প্রদানের জন্য বেশকিছু পূর্বশর্ত পূরণের প্রয়োজন যা বিশ্বের সবখানেই মানবিক সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে একইভাবে পূরণযোগ্য। এর মধ্যে রয়েছে, সহায়তা প্রদানকারী এবং গ্রহীতাদের নিরবিচ্ছিন্ন প্রবেশাধিকার, সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে বৈষম্য না করা, সহায়তাকে সামরিক উদ্দেশে ব্যবহার না করা এবং সশস্ত্র কার্যকলাপ স্থগিত রাখা।
আজ (২১ মে) দুপুর ২টায় রোহিঙ্গা সংকটের মানবিক করিডোর ইস্যুতে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান।
রাখাইন রাজ্যে মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সর্বশেষ অবস্থান জানতে চাইলে খলিলুর রহমান বলেন, ইউএনডিপির পূর্বাভাস অনুযায়ী, রাখাইনে আসন্ন দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ আশঙ্কা করছে যে, এমন পরিস্থিতি রাখাইন থেকে আরো মানুষকে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য করবে। এরইমধ্যে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পক্ষে আরো বাস্তুচ্যুত মানুষকে আশ্রয় দেয়া সম্ভব নয়। এরইমধ্যে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় বোঝায় পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া, বাংলাদেশ মনে করে যে, রাখাইনে সাহায্য প্রদান রাজ্যটিকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করবে এবং রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির পথ প্রশস্ত করবে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে আরাকান বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগের কারণ এবং সংকট মোকাবেলায় মিয়ানমারের জান্তার সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, আরাকান সশস্ত্র বাহিনী যখন মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অংশের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয় তখন বাংলাদেশ সরকার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে। নিজ সীমান্ত রক্ষা এবং শান্তিপূর্ণ রাখা বাংলাদেশের কর্তব্য। এ কারণেই, বাংলাদেশ আরাকান সেনাবাহিনীর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগের সিদ্ধান্ত নেয়। বাংলাদেশ সরকার রাখাইনে মানবিক সহায়তা প্রদান, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এবং আরাকানের শাসনব্যবস্থা ও নিরাপত্তা কাঠামোর সকল স্তরে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ও অন্তর্ভুক্তির বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার স্বার্থে আরাকান বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে।
তিনি আরো বলেন, বাস্তবিক প্রয়োজনেই আরাকান বাহিনীর সঙ্গে বাংলাদেশের এই যোগাযোগ। একইসঙ্গে, মিয়ানমার সরকারের সঙ্গেও যোগাযোগ বজায় রাখছে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গা সংকট টেকসইভাবে সমাধানের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জানতে চাওয়া হয়— বাংলাদেশী কর্মকর্তারা সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবিক সহায়তার প্রস্তাবে বাংলাদেশের সম্মতির জন্য কিছু শর্ত পূরণের যে আবশ্যকতার কথা বলেছেন, সেই শর্তগুলো কী কী এবং এই বিষয়ে আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয়েছে কি না।
এর জবাবে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে সহায়তা প্রদানের বিষয়ে একমত হতে হবে। পাশাপাশি আরাকান বাহিনীকে নিশ্চিত করতে হবে যে, সহায়তা প্রদানকারী এবং গ্রহীতাদের প্রবেশাধিকার যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সহায়তাকে সামরিক উদ্দেশ্যে যেন ব্যবহার না করা হয় এবং কোনো সশস্ত্র কার্যকলাপ যেন না ঘটে।
খলিলুর রহমান আরো বলেন, আরাকান বাহিনী রাখাইনের শাসনব্যবস্থা ও নিরাপত্তা কাঠামোর সকল স্তরে রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্ত করে রাখাইনে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এই প্রতিশ্রুতির প্রতি তাদের অবিচল থাকতে হবে। তা না হলে এটিকে সারাবিশ্বে জাতিগত নিধন হিসেবে দেখা হবে, যা বাংলাদেশ মেনে নেবে না। আমরা এ বিষয়ে আরাকান বাহিনীর প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় আছি।
মানবিক সহায়তা প্রদানে কী কী নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে— এ প্রশ্নের উত্তরে খলিলুর রহমান বলেন, সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে মানবিক সহায়তা যিনি প্রদান করেন এবং যিনি গ্রহণ করেন উভয়ের জন্যই নিরাপত্তা ঝুঁকি আছে। ল্যান্ডমাইন ও আইইডির মতো বিস্ফোরক নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য হুমকি। সহায়তা প্রদানের আগে এই বিষয়গুলো সমাধান করা প্রয়োজন।
রাখাইনে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সম্পর্কে আঞ্চলিক দেশগুলোর অবস্থানের ব্যাপারে জানতে চাইলে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, আসন্ন মানবিক বিপর্যয় থেকে মানুষের জীবন বাঁচানো বিশ্ব সম্প্রদায়ের একটি সম্মিলিত দায়িত্ব। এই সংকট মোকাবেলায় সবাইকে একযোগে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। রাখাইনে স্থিতিশীলতা বাংলাদেশের অন্যতম অগ্রাধিকার। স্থিতিশীল না হলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতির সম্ভাবনা একেবারেই কম।
রোহিঙ্গাদের আগমন অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ কীভাবে তা মোকাবেলা করার পরিকল্পনা করছে— এ প্রশ্নের জবাবে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের পক্ষে আরো বাস্তুচ্যুত মানুষকে আশ্রয় দেয়া সম্ভব না। আরো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ না করে সেটি ঠেকাতে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বয় করছে। বিশেষ করে, বাংলাদেশ সরকার আরাকান বাহিনীকে স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর আর কোনো সহিংসতা, বৈষম্য এবং বাস্তুচ্যুতি যেন না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। আরাকান বাহিনীকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনসহ সকল আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে হবে। গোটা বিশ্ব তাদের কার্যক্রম দেখছে। বাংলাদেশ আরাকান বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখবে কি না তা এই অঞ্চলে তাদের কার্যক্রম এবং রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্বের ওপর নির্ভর করবে।
সুত্র:বণিক বার্তা