মির্জাপুরে ওসি,এসআই,সাংবাদিকসহ আ. লীগের ১০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৫৬ পিএম, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪ | ২৫০

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গুলিতে হিমেলের চোখ হারানোর ঘটনায় মির্জাপুর থানার তৎকালীন ওসি, ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ ১০০ জনের নাম উল্লেখ করে ও ৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

এছাড়া এ মামলায় বাদির আইনজীবীর সাথে পূর্ব শত্রুতা থাকায় এক সাংবাদিকের  বিরুদ্ধে মামলা করে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। ওই সাংবাদিক যুগান্তর পত্রিকার মির্জাপুর উপজেলা প্রতিনিধি সাজ্জাদ হোসেন।

সোমবার (৭ অক্টোবর) হিমেলের মা নাছিমা বেগম টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রট মির্জাপুর আমলী আদালতে এ মামলা দায়ের করেন।

জানা যায়, ২৫ শতাংশ জমি নিয়ে ২০১৮ সালের টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মোঃ নং-১৬৮/২০১৮ সালে মামলা করেন সাজ্জাদ হোসেন। পরবর্তীতে আদালত ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল মামলাটি প্রসিডিং আদেশ চূড়ান্ত করে মামলাটি নথিজাত করেন। পুনরায় একই বছর মামলার বিবাদি দেলোয়ার হোসেন গংরা জজ কোর্টে আপিল করেন। পরে মামলাটি ১৪৫ ধারায় রূপান্তর করে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি নিস্পত্তি করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আদালত ২০২৪ সালের ২৮ মে মো. সাজ্জাদ হোসেনে পক্ষে রায় ঘোষনা করেন। মামলায় হেরে গিয়ে ২০৩ (১১১) ২০২৩-২০২৪ এর ২৫ শতাংশ জমি নিয়ে ২০২৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ৬৫০ নং নামজারির বিরুদ্ধে রিভিউ মোকদ্দমা দায়ের করেন মির্জাপুর উপজেলার পোষ্টকামুরী গ্রামের দেলোয়ার হোসেন গং। মামলাটি বর্তমানে মামলা করেন সহকারি কমিশনার (ভূমি) মির্জাপুর আদালতে চলমান রয়েছে। মামলার শুনানীর দিন ধার্য করা হয়েছে আগামীকাল বুধবার (৯ অক্টোবর)। এই মামলার বাদির আইনজীবী হচ্ছেন উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি একই এলাকার আব্দুর রউফ। এই মামলার শুনানীতে সাজ্জাদ হোসেন যাতে আদালতে হাজির না হতে পারেন এজন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিতে চোখ হারানোর ঘটনায় বাদির অজান্তেই আইনজীবী আব্দুর রউফ পূর্ব শত্রুতার জের ধরে যুগান্তর পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি সাজ্জাদ হোসেনের নাম জড়িয়ে দেন মামলায়।

মামলাটি আমলে নিয়ে আদালত মির্জাপুর থানার অফিসার্স ইনচার্জকে নথিভুক্ত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

এছাড়া এই মামলায় অন্য আসামিরা হলেন মির্জাপুর থানার তৎকালীন ওসি রেজাউল করিম, এসআই রামকৃষ্ণ, এসআই করিম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মীর শরীফ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার তাহরীম হোসেন সীমান্ত, আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার আব্দুল হাফিজ, গোড়াই ইউনিয়ন পূর্ব আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফ খান, সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন ভূইয়া ঠান্ডু, বাশতৈল ইউপি চেয়ারম্যান হেলাল দেওয়ান ও মীর আসিফ অনিক।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ৪ আগস্ট ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক সংলগ্ন গোড়াই হাইওয়ে থানার সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলছিল। ওই আন্দোলনে গোড়াই লালবাড়ি গ্রামের হিমেলও অংশ নেয়। আন্দোলন চলাকালে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় ধারালো অস্ত্রসহ অতর্কিত হামলা করে। এসময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের ছররা গুলিতে হিমেল গুরুতর আহত হয়। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, হিমেলের দু’চোখ স্থায়ীভাবে অন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে সে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

এদিকে হিমেলের মা মামলার বাদি নাছিমা বেগম বলেন, তার ছেলে বর্তমানে বাড়িতেই রয়েছে। মামলায় কাদের কাদের এবং কতজনকে আসামী করা হয়েছে তা তিনি জানেন না। মামলাটির বিষয়ে আইনজীবী আব্দুর রউফ ভালো বলতে পারবেন।

যুগান্তরের সাংবাদিক মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, জমির মামলায় আমি যাতে সহকারি কমিশনার (ভূমি) মির্জাপুর আদালতে হাজির হতে না পারি সেই জন্য আইনজীবি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট মামলা করেছেন। আমি তার শাস্তি দাবি করছি।

এ বিষয়ে মামলার বাদি পক্ষের আইনজীবী আব্দুর রউফের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।