সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যুক্ত করতে হবে— সুজন

আলোকিতপ্রজন্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:৪৭ পিএম, বৃহস্পতিবার, ২৯ আগস্ট ২০২৪ | ২৮৬

দেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসানের পর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একটি নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তী সরকারকে সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করে দেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পদ্ধতি বহাল করে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে মর্মে আলোচনা করেছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।

আজ বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) সকালে রাজধানীতে ডেইলি স্টার ভবনের আজিজুর রহমান সম্মেলনকক্ষে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ অভিমত দেন। আলোচনার শুরুতেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও প্রাক্তন বিচারপতি আব্দুর রউফ। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজন-এর কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।

অনুষ্ঠানে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতি প্রবর্তন ও দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠনের দাবি, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতি প্রবর্তন, নারীদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণ এবং দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার দাবি জানিয়েছে সুজন। এছাড়া প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় কমানোর জন্য পোস্টার ছাপানোর খরচ, হলফনামার তথ্য প্রচার ও আসনভিত্তিক পরিচিতি সভা আয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন সুজন নেতারা।

বিচারপতি আব্দুর রউফ তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, স্থানীয় ভোটারদের কাছে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করলে অবশ্যই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোকে দল পরিচালনায় গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড অনুসরণে বাধ্যবাধকতা আনতে হবে। তাদের ভেতরে গণতন্ত্র চর্চা না থাকলে, মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারা বহাল রাখা সম্ভব হবে না। নির্বাচনে যতদিন পর্যন্ত নমিনেশন বাণিজ্য বজায় থাকবে ততদিন এ দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না বা হতে পারে না। তৃণমূল পর্যায়ে ভোটাররা দলকে ভোট দেবে, তাদের মনোনীত প্রার্থীকে নয়। প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে তারা সংসদের জন্য তাদের মনোনীত ব্যক্তিকে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন। অনূর্ধ্ব ৫০০ ভোটারের জন্য একটি করে ভোটকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে, সেটা অবশ্যই একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে। শিক্ষা ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় ওই সব প্রতিষ্ঠানকে দেখভাল করবে। ওটাই হবে গণতন্ত্রের বিকাশ কেন্দ্র। স্থানীয় বিষয়াদি যথা দেন-দরবার, সালিশ, খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চা, ধর্মীয় কার্যাদী সবকিছু সেখানেই চলবে। ১১ সদস্য বিশিষ্ট ওই ক্লাবে নির্বাহী কমিটিতে যারা কোনো রাজনৈতিক দলের সক্রিয় সদস্য নন তারা থাকবেন। ওই নির্বাহী কমিটির সদস্যরাই ভোট পরিচালনার দ্বায়িত্ব নেবে। স্থানীয় শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করবে। সকাল আটটা থেকে বারোটার ভেতর ভোটগ্রহণ শেষ করতে হবে। বেলা বারোটার মধ্যে অনলাইনে নির্বাচনের ফলাফল নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা থাকবে। ভোট না দেয়ার জন্য জরিমানার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। নির্বাচন প্রক্রিয়াটিকে সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে প্রতি ইউনিয়ন, পৌরসভা ও পৌর করপোরেশনের ওয়ার্ডে একজন সহকারী নির্বাচনী কর্মকর্তা ও তার কার্যালয় থাকবে।’

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফলে দেশে পরিবর্তনের একটি আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। সে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনতে পারলে আমরা আগামীতে এক সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পাব। একতরফা নির্বাচন কোনো নির্বাচন নয়। কারণ নির্বাচন মানেই বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প থেকে বেছে নেয়া। এ ধরনের নির্বাচন যাতে ভবিষ্যতে না হতে পারে সেজন্য দশম জাতীয় নির্বাচন বিষয়ে হাইকোর্টে যে রিট দাখিল করা হয়েছিল আমরা সেটির ব্যাপারে রিভিউ’র আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

স্থানীয় সরকার ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতির কিছু দুর্বলতা থাকলেও এটিই তুলনামূলক ভালো পদ্ধতি। পৃথিবীর ৯৭টি দেশে এ পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সফল গণতন্ত্রে এক কক্ষবিশিষ্ট সংসদ থাকে না। তাই জবাবদিহিতার কাঠামো প্রতিষ্ঠার জন্য দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদীয় কাঠামো প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। ভোট করে রাজনৈতিক দল, ভোট দেয় জনগণ। তাই নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ। তাই যতই শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করা হোক না কেন, নির্দলীয় সরকার ও নিরপেক্ষ প্রশাসন ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কর্তৃক গঠিত লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, ‘অনেকেই বলছেন এ নির্বাচনী ব্যবস্থা রেখেই সংশোধন করার কথা। কিন্তু আমরা একটু ভিন্নভাবে ভাবছি। কারণ আমরা ৯ দফার মধ্যে এক দফা দিয়েছিলাম ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ। সে জায়গা থেকে আমরা যেটি দেখি, বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থায় একটি দল ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ মানুষের সমর্থন নিয়ে বাকি ৬০ শতাংশের ওপর শাসন করছে। সরকারে যারা থাকে, তারা সরকারি সব প্রতিষ্ঠানে বাকি ৬০ শতাংশের মতামতকে উপেক্ষা করে দলীয়করণ করে। তাই এ ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন।’

সুত্র:বণিক বার্তা