আজ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১৯তম বার্ষিকী


দেশের ইতিহাসে একটি নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের দিন আজ। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে নারকীয় হামলা চালানো হয়। সমাবেশ লক্ষ্য করে ছোড়া গ্রেনেডে আক্রান্ত হন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলীয় নেতাকর্মীদের তৈরি মানববর্মে তিনি প্রাণে রক্ষা পেলেও নিহত হন দলের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২২ নেতাকর্মী। আহত হন আরো অনেকে। ভয়াবহ সেই হামলার ১৯তম বার্ষিকীতে আজ আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝতে ট্রাকে অবস্থানরত নেতারা ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তারা মানবঢাল সৃষ্টি করে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেন শেখ হাসিনাকে। পরে ঘাতকরা তার গাড়িকে টার্গেট করে গুলি চালায়। শেখ হাসিনাকে আড়াল করে বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে জীবন দেন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ। রক্তাক্ত ওই দিনে ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। পরে সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২২-এ। ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ছাড়াও আহত হয়েছিলেন বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘২১ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ভয়াল দিন। ২০০৪ সালের এ দিনে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশে বর্বরতম গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এ হামলার মূল লক্ষ্য ছিল দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করা এবং আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশকে নেতৃত্বশূন্য করে হত্যা, ষড়যন্ত্র, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি ও দুঃশাসনকে চিরস্থায়ী করা।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার নির্মমভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতায় ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। বীভৎস হত্যাকাণ্ডটি বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় অধ্যায় হিসেবেই চিহ্নিত থাকবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এখনো নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছে। আসুন, ঐক্যবদ্ধভাবে এ অপশক্তির যেকোনো চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে আগামী প্রজন্মের জন্য বাংলাদেশকে একটি নিরাপদ-শান্তিপূর্ণ আবাসভূমি হিসেবে গড়ে তুলি।’
দিবসটি স্মরণে বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করা হবে। এছাড়া গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদ ও নিহতদের স্মরণে বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে আয়োজন করা হয়েছে আলোচনা সভার। এতে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন। এছাড়া দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।