সরিষা উৎপাদনে টাঙ্গাইল দেশের বৃহত্তম দ্বিতীয় জেলা


টাঙ্গাইলে ভোজ্যতেলের চাহিদা পুরণের লক্ষ্যে এ বছর সরিষা চাষে ঝুঁকেছেন কৃষকরা। ১২টি উপজেলায় চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে দেশি ও উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন জাতের সরিষার আবাদ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে সরিষা উৎপাদনকারী টাঙ্গাইল এখন দেশে বৃহত্তম দ্বিতীয় জেলা ।
আবহাওয়া অনুকূল থাকলে সরিষার ভালো ফলন পাওয়ার আশা করছেন কৃষকরা। টাঙ্গাইল জেলায় সরিষার আবাদ বৃদ্ধি করার লক্ষে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। এ বছর কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের মাঝে সরকারিভাবে কৃষি প্রণোদনা বিতরণ করায় এবার সরিষার আবাদ বেড়েছে।
ইতি মধ্যে জেলায় ২৯ হাজার পাঁচ’শ জনকে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। এবং প্রতি কৃষককে ১ বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন জাতের ১ কেজি করে সরিষার বীজ,ডিওপি ১০ কেজি, এমওপি ১০ কেজি করে বিনামূলে সার বিতরণ করা হয়েছে। সরিষার ফলন যাতে ভালো হয়, সে লক্ষে কৃষি কর্মকর্তরা কৃষকদের পাশে সার্বক্ষণিক রয়েছেন।
ফসলের মাঠে সরেজমিনে গিয়ে তারা ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে করণীয় বিষয়ে হাতকলমেও প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। প্রথম বছরেই এবার টাঙ্গাইলে ব্যাপক সরিষা চাষ হয়েছে। শুধু সরিষার আবাদ বৃদ্ধিই নয়, এর সাথে সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে মৌচাষ ও মধুর উৎপাদন। অন্যদিকে, আমন ও বোরোর মধ্যবর্তী সময়ে পতিত জমিতে সরিষার আবাদ হওয়ায় ধানের উৎপাদন কমছে না। একইসঙ্গে কৃষকেরা অতিরিক্ত ফসল হিসেবে এই সরিষা পেয়ে লাভবানও হচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে সরিষার তেলের ব্যবহার বেড়েছে কয়েকগুন। তেলের আমদানী নির্ভরতা কমাতে কৃষি মন্ত্রীর নির্দেশনায় টাঙ্গাইলের ১২ টি উপজেলায় চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে টাঙ্গাইল জেলায় ৫৮ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষার আবাদ করা হয়েছে।
কৃষি বিভাগ আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ৫২ হাজার হেক্টর জমিতে। গত বছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬১২০ হেক্টর জমিতে বেশি সরিষা চাষ হচ্ছে। গতবছর কৃষকরা সরিষার ভালো দাম পেয়েছিলেন। এতে লাভবান হয়েছিলেন তারা। এবছরও অধিক লাভবানের আশায় সরকারী প্রনোদনার পাশাপাশি নিজস্ব উদ্যোগেও অনেক কৃষক সরিষার আবাদ করেছেন।
কৃষকরা জানান, ইতিমধ্যে সরিষার গাছে ফুল এসেছে। জমি পরিচর্চায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া সরিষা চাষের অনুকুলে আছে। পরিস্থিতি এমন থাকলে কৃষকরা এবারও সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছেন। সরিষা উত্তোলনের পর একই জমিতে কৃষকরা ইরি ধানের আবাদ করবেন। এতে করে কৃষকরা এক মৌসুমে একই জমিতে দুইটি ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। এবং বর্তমান বাজারে যে তেলের দাম বেড়েছে, তাতে কিনে খাওয়া কঠিন। তাই জমিতে বারি-১৪ ও বারি-১৮ জাতের সরিষা চাষ করেছে। পরিবারে তেলের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি সরিষা বিক্রি করে বোরো আবাদের খরচ যোগান দিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। দিন দিন কমে যাচ্ছে কৃষি জমির পরিমাণ। বাড়ছে খাদ্যের চাহিদা। আমদানী নির্ভরতা কমিয়ে দেশের তেলের চাহিদা পূরণ করতে বেশী পরিমানে সরিষা আবাদের কোন বিকল্প নেই। তাই দেশের সর্বত্র সরিষার আবাদ ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হলে লাভবান হবে সবাই। এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো: আহসানুল বাসার বলেন, এবার টাঙ্গাইলে দেশি ও উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন জাতের ব্যাপক সরিষা চাষ হয়েছে। ইতিমধ্যে ধনবাড়ীর মুরশুদি ইউনিয়নে প্রায় ১৪ বিঘা জমিতে একসাথে উচ্চ ফলনশীল বারি-১৮ জাতের সরিষা আবাদ করা হয়েছে। এ জাতের ফলনের দিকে তুলনা করলে অন্যান্য জাতের চেয়ে দ্বিগুন। আমাদের অন্য যে সকল জাত এখন মাঠে রয়েছে সে জাতের ফলন ১.৪৫৬ মেট্রিক টন পার হেক্টর সেখানে বারি-১৮ সরিষার ফলন ২.২৪ হতে ২.২৬ পর্যন্ত বা তার চেয়ে আরোও বেশি।
আরেকটি উল্লেখ্যযোগ্য বিষয় এখানে আছে ইউরিক এসিডের পরিমান ১.০৬ থেকে ০৬% সেখানে অন্যান্য জাতের ইউরিক এসিডের পরিমান ৪০-৪৫%। এই ইউরিক এসিডের পরিমান কম হওয়ায় অধিক ফলন এবং এ জাতের সম্প্রসারণের জন্য ব্যাপকভাবে প্রচার প্রচারনা এবং কৃষকের পাশ থেকে টাঙ্গাইলে কাজ করে যাচ্ছি।