কালিহাতীর পৌলীতে মাটি বিক্রির মহোৎসব
হুমকির মুখে বসতবাড়ী ও রেলসেতু! ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা


বঙ্গবন্ধুসেতু-ঢাকা মহাসড়কে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার পৌলী নদী থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটার ফলে চরম হুমকির মুখে পড়েছে ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়ক ও রেল সেতু। দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে মাটি কাটার ফলে সড়ক ও রেল সেতুর দুই পাশ থেকে মাটি সড়ে গিয়ে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া অবৈধ মাটি কাটায় আশপাশের এলাকায় বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক ভাঙনের কবলে পড়ে দেড় শতাধিক পরিবার ভিটেবাড়ি ছাড়া হয়েছে।
গত বর্ষা মৌসুমে রেলসেতুর দক্ষিণ পাশের নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় ঢাকার সাথে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তারপরও স্থানীয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় মাটি খেকোরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধুসেতু-ঢাকা মহাসড়কে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার পৌলী নদীর ওপর কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত সড়ক ও রেল সেতুর অদূরে কমপক্ষে ১০টি বেকু বসিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। এতে পুংলী নদীর ওপর পাশাপাশি নির্মিত সড়ক ও রেল সেতু দুইটি হুমকির মুখে রয়েছে। দিনের পর দিন এভাবে মাটি কাটার ফলে যে কোনো সময় নদীর ওপর সেতু দুটি দেবে যেতে পারে।
এলাকাবাসী জানায়, স্থানীয় প্রভাবশালী আ: কদ্দুছ (৪৫), হাবেল (৪৬), সবুজ (৪০), জাকির (৩৫),মনির (৩৫), বন্দেজ (৫০) সহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তি প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে দেধারছে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে মাটি কর্তন ও বিক্রি করছেন। মাটি খেকোরা পুংলী নদী থেকে কর্তন করা কোটি কোটি টাকার মািট বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে। এদিকে, অতিরিক্ত বালুভর্তি ট্রাক যাতায়াতের কারণে পৌলী ও মহেলা গ্রামের একমাত্র পাকা রাস্তাটি ভেঙে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
অপরদিকে, বেকু দিয়ে মাটি কাটার কারণে সম্প্রতি দু’বার তিতাস গ্যাসের মূল পাইপলাইন ভেসে উঠে টাঙ্গাইল, গাজিপুরসহ আশপাশের জেলাগুলোতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এতে সাধারণ জনগণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় । ওই সময় নদীতে নৌচলাচল ও ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পরে পাইপ লাইন মেরামত করা হলে আবার অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করে প্রভাবশালীরা। গ্যাসপাইপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, লোক দেখানোর জন্য মাঝেমধ্যে নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালানো হলেও ভ্রাম্যমান আদালত চলে যাওয়ার পর পরই আবার শুরু হয় মাটি কাটার মহোৎসব। ফটিকজানী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আক্তারুজ্জামান জানান, স্থানীয় প্রভাবশালী মহল ও রেলওয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এ অবৈধ মাটি কর্তন করা হচ্ছে।
এতে রেলসেতু,কবরস্থান,বসতভিটা ও স্কুলের ব্যপক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এব্যাপারে ওই স্কুলের সভাপতি মোকছেদ অনুরুপ মন্তব্য করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কতিপয় ব্যবসায়ী জানান, মাটি কাটতে তাদেরকে প্রশাসন কোন অনুমতি দেয়নি সত্য। কিন্তু মাটি কাটার জন্য রাজনৈতিক নেতাসহ মসজিদ-মাদ্রাসায়ও তারা টাকা দিয়ে থাকেন।
বিষয়টি কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তারকে অবহিত করলে তিনি তাৎক্ষনিক উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ’মি) নাফিসা আক্তারকে দিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ’মি) নাফিসা আক্তার জানান, ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে বেকু ও ট্রাক ড্রাইভারসহ ৬ জনকে আটক করা হলে স্থানীয় ঠিকাদার আব্দুল কদ্দুস ৫০ হাজার টাকা মুচলেকা প্রদান ও আধা ঘন্টার মধ্যে মাটি কাটার যাবতীয় সরঞ্জাম সরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আটককৃত ৬ জনকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান।