মা ও ছোট ভাই এর পরে বাবাও হারালো শিশু আব্দুল্লাহ্

স্টার্ফ রিপোটার
প্রকাশিত: ০৩:৫৫ পিএম, শনিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২১ | ৪৮৩

টাঙ্গাইলে ট্রেনে কাটা পড়ে মা ও ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর পরে গুরুতর আহত বাবাকে হারারো শিশু আব্দুল্লাহ। শুক্রবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় এমনই এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার হাতিলা রেলক্রসিং এলাকায়। এতে এক পরিবারের শিশু আব্দুল্লাহ ছাড়া বেঁচে নেই কেউ। প্রথমে ট্রেনে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় শিশু আব্দুল্লাহ’র মা সানসিয়া সুলতানা সারা (২৫) ও তার আড়াই বছরের ছেলে আব্দুর রহমান রাইয়ান। এঘটনায় আহত হন সারা'র স্বামী আজগর আলী (৩০) ও তার পাঁচ বছরের ছেলে আব্দুল্লাহ।

পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। কর্তব্যরত শিশু আব্দুল্লাহকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিলেও উন্নত চিকিৎসার জন্য বাবা আজগর আলীকে ঢাকায় পাঠান। ঢাকায় যাওয়ার পথেই আব্দুল্লাহ্র বাবা আজগর আলীর মৃত্যু হয়। তবে প্রাণে বেঁচে যায় শিশু আব্দুল্লাহ।

সম্প্রতি তারা সদর উপজেলার করটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকায় বসবাস করে আসছিলেন। তবে তাদের গ্রামের বাড়ি জেলার বাসাইল উপজেলার ময়থা গ্রামের উত্তরপাড়া এলাকায়।

শনিবার (২৩ অক্টোবর) সকালে নিহত আজগর আলীর গ্রামের বাড়ি বাসাইল উপজেলার ময়থা গ্রামে তিনজনের দাফন সম্পন্ন করেন স্বজনরা। এ সময় স্বজনদের আহাজারিতে সেখানকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।

নিহতের স্বজনরা জানায়, আজগর আলী একজন প্রবাসী। তিনি বাড়িতে আসার পর পরিবার নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে মামার বাড়িতে তার দুই শিশুসহ স্ত্রীকে নিয়ে বেড়াতে যান। সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফেরার পথে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার হাতিলা অরক্ষিত লেভেলক্রসিং পার হওয়ার সময় হঠাৎ মোটরসাইকেল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় লেভেলক্রসিংয়ের আশপাশ বন জঙ্গলে ঢেকে যাওয়ায় ট্রেন চলাচল দেখা যায়নি। এতে ট্রেনে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলে আজগর আলীর স্ত্রী সারামনি ও ছোট ছেলে আব্দুর রহমান আইয়ান নিহত হয়। এতে গুরুতর আহত হন আজগর ও বড় ছেলে আব্দুল্লাহ।

পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। এ সময় শিশু আব্দুল্লাহকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হলেও আজগর আলীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। পরে ঢাকায় যাওয়ার পথে আজগর আলীর মৃত্যু হয়।

নিহত সারার ভাই জামিলুর রহমান জানান, আজগরের মামার বাড়ি থেকে দাওয়াত খেয়ে মোটরসাইকেল যোগে করটিয়ার বাসায় ফেরার পথে হাতিলা রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় ট্রেনের ধাক্কায় ছিটকে পড়ে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ঘটনাস্থলেই আমার বোন ও শিশু ভাগ্নে নিহত হয়। এ সময় স্থানীয়রা আহত ভগ্নিপতি ও বড় ভাগ্নেকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক আজগরকে ঢাকার আগারগাঁও নিউরো সাইন্স হাসপাতালে রেফার্ড করেন ও ভাগ্নে আব্দুল্লাহকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেন। ঢাকায় যাওয়ার পথে রাতেই ভগ্নিপতি আজগরের মৃত্যু হয়। 

এ বিষয়ে নিহত আজগর আলীর উকিল শ্বশুর আশরাফ আলী বলেন, ট্রেনে কাটা পড়ে একই পরিবারের চারজনের মধ্যে তিনজনই মারা গেছেন। শুধু বেঁচে রয়েছে শিশু আব্দুল্লাহ। শনিবার সকালে আব্দুল্লাহ্র বাবা, মা আর ভাইয়ের মরদেহ তাদের গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। শিশু আব্দুল্লাহ এখন তার দাদা-দাদির কাছে রয়েছে।