টাঙ্গাইলে ১০৩ হেক্টর জমিতে পাট চাষ বেশি হলেও বাড়েনি উৎপাদন

স্টার্ফ রিপেটার
প্রকাশিত: ০৬:৪০ পিএম, বুধবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৫৯৪

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে জেলায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণের তথ্য অনুযায়ি চলতি মৌসুমে জেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ১৫ হাজার ৯৮৫ হেক্টর নির্ধারণ হলেও আবাদ হয়েছে ১৬০৮৮ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১০৩ হেক্টর জমিতে বেশি পাট চাষ হয়েছে। এছাড়াও পাট উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ২৮৩ বেল্ট। তবে অর্জিত হয়েছে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৯৮৯ বেল্ট। তবে চলতি মৌসুমে লক্ষমাত্রার চেয়ে পাট উৎপাদন কম হয়েছে ৭ হাজার ২৯৪ বেল্ট। এরপরও গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে পাটের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। পাট চাষ ভালো হওয়াসহ বাজারে দাম ভালো থাকায় খুশি এ জেলার কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো ১৫ হাজার ৯৮৫ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ১৬ হাজার ৮৮ হেক্টর। চলতি মৌসুমে এ জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১০৩ হেক্টর জমিতে বেশি পাট চাষ হয়েছে। এছাড়াও উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ২৮৩ বেল্ট আর অর্জিত হয়েছে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৯৮৯ বেল্ট। চলতি মৌসুমে লক্ষমাত্রার চেয়ে উৎপাদন কম হয়েছে ৭ হাজার ২৯৪ বেল্ট।

চলতি মৌসুমে টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় ২ হাজার ৭৮০ হেক্টর, দেলদুয়ারে ১ হাজার ৪৩৫ হেক্টর, নাগরপুরে ১ হাজার ৪১৮ হেক্টর, মির্জাপুরে ১ হাজার ৮৫ হেক্টর, বাসাইলে ৪৪৫ হেক্টর ও সখীপুরে ১৩৫ হেক্টর, কালিহাতীতে ১ হাজার ৮৫ হেক্টর, ঘাটাইলে ৯৬০ হেক্টর, ভূঞাপুরে ৪ হাজার ১২৯ হেক্টর, গোপালপুরে ২ হাজার ২১০ হেক্টর, মধুপুরে ২০৬ হেক্টর আর ধনবাড়ী উপজেলা ২০০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। গত বছর জেলায় পাটের চাষের লক্ষ্যমাত্রা ১৫হাজার ৯৮৫ নির্ধারণ করা হয়েও অর্জিত হয়েছিল ১৫ হাজার ৮১৫ হেক্টর। এর আগে গত বছর লক্ষমাত্রার চেয়ে পাট চাষ কম হয়েছিল ১৭০ হেক্টর জমিতে।

সরেজমিন দেখা যায়, কেউ পাট কাটছেন, কেউ পাট জাগ দিচ্ছেন, আবার কেউ পাট ধুয়ে শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। যথা সময়ে খাল, বিল ও ডোবায় পানি আসায় পাট জাগ দেয়া সুবিধাও ভোগ করছেন এই কৃষকরা। পুরুষের পাশাপাশি এ সব কাজে বাড়ির মহিলারও সহযোগিতা করছেন। এছাড়া অনেকেই আবার পাট হাটে নিয়ে বিক্রিও করেছেন। কোন কোন বাড়িতে পাইকাররা এসে পাট কিনে নিয়েও যাচ্ছেন। 

পাট চাষীরা জানায়, এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমি চাষ করতে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকার মতো খরচ হয়। প্রতি বিঘায় ছয় থেকে সাড়ে ছয় মন পাট হয়। প্রতি মন পাটের বর্তমান মূল্য সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা। অপর দিকে প্রতি বিঘায় চার থেকে সাড়ে চারশ আটি পাট খড়ি হয়। প্রত্যেক আটি পাট খড়ির দাম আট থেকে নয় টাকা। এ কারণে চলতি বছর কৃষকরা অন্যান্য ফললের চেয়ে পাটে বেশি লাভবান হচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকা ও বন্যা দেরিতে হওয়াসহ বৃষ্টিপাত তুলনার চেয়ে কম হওয়ায় এ বছর পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার পয়লা গ্রামের পাট চাষী মইদুল বলেন, দশ শতাংশ জমিতে আমি পাট চাষ করছি। এ বছর তিন মণ পাট আর দেড়-দুই হাজার টাকার পাটকাঠি পামু বৈইলা আশা করতাছি। এবছর পাটের দাম ভালোই। মণ ৩৫-৩৬’শ টাকা। পাট চাষে আমার খরচ হইছে প্রায় আড়াই-তিন হাজার টাকা। এ বছর পাট চাষ কৈইরা লাভ পামু। 

একই উপজেলার রাঙ্গাচিরা গ্রামের পাট চাষী আব্দুল হামিদ বলেন, ইরি ধান কাইটাই আমি ওই জমিতে পাটের বীজ ছিটিয়ে দিছিলাম। হাল চাষ না কৈইরাও আমার পৌনে তিন বিঘা জমিতে পাটের বাম্পার ফলন হইছে। দেরিতে বন্যা আর বৃষ্টি কম হওয়ায় ফলন খুবই ভাল হইছে। সব মিলাইয়া আমার ২০ মণের মত পাট হইছে। গত বছর ২২’শ টাকা মণ পাট বিক্রি করলেও গত সপ্তাহে আমি ৩২’শ টাকায় ১০ মণ পাট বিক্রি করছি। গত বুধবার বাড়িতে পাইকার আইসা বাকি ১০ মণের জন্য প্রতি মণ ৩৮’শ টাকা মন দাম কৈইছে, আমি তাও বিক্রি করি নাই। আমি দাম সাড়ে চার হাজার টাকা মণ চাইছি। পাটের দাম আরও বাড়বো। এই জমিতে পাটের পরিবর্তে অন্য ফসল চাষ করলে এতো টাকা পাইতাম না।

অলোয়া ভবানী এলাকার পাট চাষী শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে খরচ হইছে ৫ হাজার টাকা। পাট হইছে সাড়ে ৬ মণ। সাড়ে তিন হাজার টাকা করে পাট বিক্রি করছি। এছাড়াও চারশ আটি পাটকাঠি হইছে। পাইকাররা আইসা ৮ টাকা আটি দাম করছে তাও আমি বিক্রি করি নাই।

একই এলাকার পাট চাষী সমেজ মিয়া বলেন, আমার ৫ বিঘা জমিতে অন্য বছরের তুলনায় এ বছর অনেক ভাল ফলন হইছে। নিজে কাম করায় শ্রমিক খরচ লাগে নাই। এ বছরের মত পাটের দাম আমার বয়সেও পাই নাই। পাটের ফলন আর দাম বাম্পার হওয়ায় আমি অনেক খুশি।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আহসানুল বাসার বলেন, চলতি মৌসুমে বিএডিসিও বেসরকারি বীজ বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে আর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কৃষকদের উন্নত জাতের বীজ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ কারণে এবার লোকাল জাতের চেয়ে উপসী জাতের পাট