ঘটনা থেকে মুখ ফেরাতে আলামত নষ্ট করা হয়: প্রধানমন্ত্রী

আলোকিতপ্রজন্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:৩৩ পিএম, রোববার, ২২ আগস্ট ২০২১ | ৩৯৭
ফাইল ছবি

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনা থেকে মুখ ফেরাতে সে সময় আলামত নষ্ট করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আক্রমণকারীদের রক্ষা করার জন্য সেদিন ভয়াবহতার মধ্যেই পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারগ্যাস ছুড়েছে। সব আলামত সিটি করপোরেশনের গাড়ি দিয়ে ধুয়ে নষ্ট করা হয়েছে। হামলার ওই ঘটনা থেকে মুখ ফেরাতে এটা করা হয়। একটা গ্রেনেড অবিস্ফোরিত ছিল, সেটি সংরক্ষণের কথা বলায় একজন অফিসারকে ধমকানো হয়। পরে তাকে নির্যাতনও করা হয়েছে। সরকারের সহযোগিতা না থাকলে তো এমন হতে পারে না।

গতকাল গ্রেনেড হামলার ১৭তম বার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। আলোচনা সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নেন সরকারপ্রধান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর হামলা হলো। আমরা সেটার প্রতিবাদ করলাম। সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ ডাকলাম। মুক্তাঙ্গনে সভা হওয়ার কথা ছিল, অনুমতি দেয়নি। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আওয়ামী লীগ অফিসের সামনেই করব। পোস্টার করা হলো, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলাম। কিন্তু তারা মধ্যরাতে মুক্তাঙ্গনে করার অনুমতি দিল। তখনই সন্দেহ হলো এত রাতে অনুমতি দিল কেন? তাছাড়া আমাদের সমাবেশ করার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছিল। অবশ্য প্রকাশ্যে দিবালোকে এভাবে আর্জেস গ্রেনেড হামলা করে মানুষ হত্যা করবে, তা কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি।

তিনি বলেন, জেলখানার ভেতর গ্রেনেড পাওয়া গেল। এরা অনেকগুলো ক্রিমিনাল জোগাড় করেছিল। তাদের মধ্যে কিছু জেলখানা থেকে বের করে নিয়ে এসেছিল। কিন্তু প্রত্যেকের হাতে যে গ্রেনেডগুলো ছিল, সবাই সেগুলো মারতেও পারেনি। রমনা হোটেলের সামনের গলিতে এবং কয়েকটি জায়গায় সেই গ্রেনেড পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, এমন কথাও বলা হলো, পাশের দেশের গোয়েন্দা সংস্থা নাকি এ কাণ্ড ঘটিয়ে চলে গেছে। পাশের দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এসে দিন-দুপুরে এভাবে এতগুলো গ্র্রেনেড যদি শহরের ভেতরে মেরে যেতে পারে, তাহলে সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো কী করছিল? তাহলে তারা দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে কীভাবে? আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত সশস্ত্র বাহিনী, বিডিআর, পুলিশ, তারা কি করছিল? এভাবে তারা সবার দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরাবার চেষ্টা করেছিল।

তিনি আরো বলেন, যদিও এর আগেই খালেদা জিয়া বক্তৃতা দিয়ে নাম ধরেই বলেছে, প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, বিরোধী দলের নেতাও কোনোদিন আমি হতে পারব না। এর আগে কোটালীপাড়ায় যখন বোমা পেতে রাখে, তার আগেও খালেদা জিয়া বলেছিলেন, একশ বছরেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না।

ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন জাতীয় সংসদে গিয়ে বিষয়টি তুলতে চেষ্টা করলাম, তখন কিছুতেই এ ব্যাপারে কথা বলতে দেবে না। শোক প্রস্তাব দিতে চাইলাম সেটা প্রত্যাখ্যান করা হলো, নিল না। আমরা যারা কথা বলতে চেয়েছি তাদের কোনো মাইক দেয়া হলো না। খালেদা জিয়া নিজেই দাঁড়িয়ে বললেন—ওনাকে আবার কে মারবে। উনি তো ভ্যানিটি ব্যাগে করে নিজেই গ্রেনেড নিয়ে সেখানে গেছেন এবং নিজেই গ্রেনেড মেরেছেন। এটা খালেদা জিয়ার নিজের ভাষ্য। আমি বাবার পথ ধরেই এ দেশের মানুষের জন্য কাজ করছি। গ্রেনেড, বোমা, বুলেট দিয়ে বারবার হত্যা চেষ্টা হয়েছে। আল্লাহর রহমতে নেতাকর্মীরা আমাকে বাঁচিয়েছেন।

আলোচনা সভায় বিএনপির সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তারা গুম-খুনের কথা বলে। তাদের হারিছ চৌধুরী, সালাউদ্দিন আরো কে কে গুম হয়েছে বলে বেড়ায়। পরে বিদেশে খোঁজ পাওয়া যায়, কেউ ভারতে, লন্ডনে। আসলে তারা নিজেরা নিজেদের গুম করে রাখে। এটাও এ দেশে ঘটে, দুর্ভাগ্য।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির অত্যাচারটা শুরু হয়েছিল ২০০১ সালের ১ অক্টোবর থেকে। এমনকি জুলাইয়ে আমার ক্ষমতা হস্তান্তরের পর থেকেই এক অদৃশ্য শক্তির বলে তাদের দুর্বৃত্তায়ন শুরু হয়। সামরিক অসামরিক আমাদের অনেক কর্মকর্তাকে ওএসডি করা, চাকরিচ্যুত করা থেকে শুরু করে হত্যা, গুম, নারীদের ওপর পাশবিক অত্যাচারসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর ওপর অকথ্য অত্যাচার-নির্যাতন শুরু করে। তারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতোই নির্যাতন শুরু করেছিল।

গ্রেনেড হামলার সেদিনের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রেনেড বিস্ফোরিত হওয়ার শব্দ শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে হানিফ ভাইসহ (সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফ) কয়েকজন ঘিরে ফেলেন। আমি দেখলাম আমার গায়ে শুধু রক্ত আর রক্ত। অর্থাৎ ওই যে স্প্লিন্টারগুলো সব এসে আঘাত করছে হানিফ ভাইয়ের মাথায় ও গায়ে। যেহেতু সে ধরে রেখেছে, তার রক্তে আমার শরীর ভেসে যাচ্ছে। তিনটি গ্রেনেড ফোটার পর কয়েক সেকেন্ড বিরতি দিয়ে আবার। মনে হ