৪০দিন টানা নামাজ আদায়েই ৮ স্কুল ছাত্র পেল বাইসাইকেল


টানা ৪০ দিন মসজিদের জামাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়, কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করাসহ দ্রুত ১০টি সুরা শিখতে পারা ৮ স্কুল ছাত্রকে দেয়া হলো নতুন বাইসাইকেল। সামাজিক অবক্ষয়রোধ আর স্কুল পড়–য়া ছাত্রদের মাঝে ধর্মীয় অনুভুতি সৃষ্টির চেষ্টায় এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার ফাজিলহাটি ইউনিয়নের কামার নওগাঁ গাছপাড়া গ্রামের যুবসমাজ।
গত ২৩ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া বিদ্যালয় পড়–য়া চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণীর ১০ থেকে ১৬ বছর বয়সী ২৩জন ছাত্রের অংশগ্রহণে ধর্মীয় চর্চার এ ব্যতিক্রমী প্রতিযোগিতায় প্রশংসীত এর আয়োজকরা। প্রতিযোগিতা শেষে শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) বাদ জু’মা অংশগ্রহণকারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়েছে।
আয়োজক সুত্রে জানা যায়, প্রায় ৫হাজার মানুষ আর ২ হাজার ভোটারের ঘনবসতিপূর্ণ গ্রাম কামার নওগাঁ গ্রাম। ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রাম এটি। ফাজিলহাটি ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড হলেও উপজেলার প্রত্যন্ত এই গ্রামটিতে রয়েছে চরম শিক্ষা ব্যবস্থার অভাব। নেই প্রাথমিক বা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এর ফলে গ্রামটিতে রয়েছে সামাজিক অবক্ষয়ের চরম ঝুঁকি। ঝুঁকির শঙ্কা এড়াতে স্কুল পর্যায়ের ছাত্রদের অংশগ্রহণে নেয়া হয়েছে ধর্মীয় চর্চার এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ।
শুক্রবার (২০ নভেম্বর) কামার নওগাঁ গ্রামের বায়তুল মামুর জামে মসজিদে শুরু হয় এ প্রতিযোগিতা। এতে অংশ গ্রহণ করে ২৯জন ছাত্র।
প্রতিযোগিতায় যথাক্রমে প্রথম অস্টম শ্রেণীর ছাত্র রাতুল মিয়া, দ্বিতীয় দশম শ্রেণীর ছাত্র নাসিম, তৃতীয় তাইম মিয়া, চতুর্থ ইমন মিয়া, পঞ্চম নাজমুল মিয়া, ষষ্ঠ নিরব মিয়া, সপ্তম সিফাত ও অস্টম হয়েছেন সজিব মিয়া।
প্রতিযোগিতার আয়োজক প্রধান ফয়সাল আহম্মেদ জানান, আমাদের গ্রামের সামাজিক অবক্ষয়রোধে ১০ থেকে ১৬ বছর বয়সী ছাত্রদের মোবাইল ও মাদকের আশক্তমুক্ত রাখতে নেয়া হয়েছে এই উদ্যোগ। উদ্বোধনী দিন (২০ নভেম্বর) শুক্রবার মসজিদের জামাতে ফজর নামাজ আদায় করাসহ টানা ৪০দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়কারী চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত ছাত্রদের নিয়ে শুরু হয় এই প্রতিযোগিতা।
এ প্রতিযোগিতায় নামাজ পড়ার পাশাপাশি নেয়া হয় কোরআন শিক্ষা গ্রহণসহ কমপক্ষে ১০টি সুরা মুখন্ত করার নিয়ম। প্রতিযোগিতার শেষ দিনে টানা ৪০দিন মসজিদের জামাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়, দ্রুত কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করাসহ সর্বোচ্চ সুরা মুখস্তকারি ছাত্রদের মধ্য থেকে প্রথম, দ্বিতীয়. তৃতীয় থেকে ৮ম পর্যন্ত বিজয়ী নির্বাচন করা হয়। বিজয়ী প্রতিযোগি আটজনকেই উপহার দেয়া হয়েছে বাইসাইকেল। বিজয়ী আটজনকে বাইসাইকেল দেয়া হলেও ফলাফল অনুসারে নির্ধারন হয়েছে সাইকেলের দাম ও মান।
এছাড়াও উৎসাহ ধরে রাখার জন্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী প্রতিটি ছাত্রকেই দেয়া হয় বিভিন্ন ধরণের উপহার। ভবিষ্যতেও এ ধরণের উদ্যোগ অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন তিনি।
নিয়মিত নিজে নামাজ পড়ার পাশাপাশি অন্যান্যদের নামাজ পরতে উদ্বুদ্ধ করবে বলে জানিয়েছে প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান বিজয়ী রাতুল মিয়া।
দ্বিতীয় স্থান নির্ধারণকারী দশম শ্রেণীর ছাত্র নাসিম জানায়, প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত নামাজ আদায়ের অভ্যাস হওয়ায় বেজাই খুশি সে। মৃত্যুর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত জামাতে নামাজ আদায় করার উচ্ছে প্রসন করছে সে।
প্রতিযোগিতা বিচারক ও বায়তুল মামুর জামে মসজিদের ঈমাম হযরত মাওলানা এখলাস উদ্দিন বলেন, এ উদ্যোগের ফলে মসজিদের জামাতে নামাজ আদায়কারী ছাত্রদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকেই পরতে শিখেছে কোরআন শরীফ। প্রতিযোগিতায় নামাজ আদায়ের পাশাপাশি কোরআন শিক্ষা, সর্বোচ্চ সুরা মুখস্তকারী নির্ণয়ে নেয়া হয়েছে পরীক্ষা। এর ফলাফলের ভিত্তিতে নির্ধারণ হয়েছে বিজয়ীদের স্থান বলেও জানান তিনি।