কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখির বাসা

মুহাম্মদ আবু হেলাল, ঝিনাইগাতী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৫:২৮ পিএম, বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০১৭ | ১০৭৯

‘বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থেকে করো শিল্পেরও বড়াই’Ñ মানুষকে মানবিক দিক থেকে জাগ্রত করার জন্য কবি রজনীকান্ত সেনের কালজয়ী এ কবিতাটি আজো মানুষের মুখে মুখে।

বাবুই পাখিকে নিয়ে লেখা কবির স্বাধীনতার সুখ কবিতাটি আজো উদাহরণ হিসেবে মানুষ ব্যবহার করলেও হারিয়ে যেতে বসেছে সেই বাবুই পাখি আর বাবুই পাখির বাসা। বাবুই পাখির বাসা আজ অনেকটা স্মৃতির অন্তরালের পথে। অথচ আজ থেকে ১০/১২ বছর আগেও গ্রামগঞ্জের তাল, নারিকেল ও সুপারি গাছে ব্যাপকভাবে বাবুই পাখির বাসা চোখে পড়তো।

বাবুই পাখির এসব বাসা শুধু শৈল্পিক নিদর্শনই ছিল না, মানুষের মনে চিন্তার খোরাক জোগাতো এবং স্বাবলম্বী হতে উৎসাহিত করতো। ঝিনাইগাতী উপজেলার ডাকাবর গ্রামে দেখা যায় রাস্তার পাশে কিছু কিছু সুপারি ও তাল গাছের ডালে বাবুই পাখি বাসা বেঁধেছে। শোনা যাচ্ছে বাবুই পাখির ডাক।

কালের বিবর্তনে এ রকম দৃশ্য তেমন একটা চোখে পড়ে না। গাছে ঝুড়ির মতো চমৎকার বাসা বুনে বাস করায় এ পাখির পরিচিতি দেশজোড়া। এ জন্য অনেকেই একে তাতি পাখি বলেও ডেকে থাকেন। বাংলাদেশে তিন প্রজাতির বাবুই পাখির বাসা দেখা যায়। বাবুই পাখির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, রাতের বেলায় ঘর আলোকিত করার জন্য এরা জোনাকি পোকা ধরে নিয়ে বাসায় রাখে এবং সকাল হলে আবার তাদের ছেড়ে দেয়।

প্রজনন সময় ছাড়া অন্য সময় পুরুষ ও স্ত্রী পাখির গায়ে কালো কালো দাগসহ পিঠ হয় তামাটে বর্ণের। নিচের দিকে কোনো দাগ থাকে না। ঠোঁট পুরো মোছাকার আর লেজ চৌকা। তবে প্রজনন ঋতুতে পুরুষ পাখির রঙ হয় গাঢ় বাদামি। বুকের ওপরের দিকটা হয় ফ্যাকাশে। অন্য সময় পুরুষ ও স্ত্রী বাবুই পাখির চাঁদি পিঠের পালকের মতোই বাদামি।

বুকের কালো ডোরা ততোটা স্পষ্ট নয়। প্রকট ভ্রুরেখা কানের পেছনে একটি ফোঁটা থাকে। বাবুই পাখি সাধারণত তাল, খেজুর, নারিকেল, সুপারি ও আখ ক্ষেতে বাসা বাঁধে। ধান, চাল, গম ও পোকামাকড় প্রভৃতি তাদের প্রধান খাবার। বর্তমানে যেমন তাল জাতীয় গাছ হারিয়ে যাচ্ছে তেমন হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখিও।